শেষের পাতা
উপ-কমিটিতে অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে সতর্ক আওয়ামী লীগ
কাজী সোহাগ
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার, ৯:০৮ পূর্বাহ্ন
কেন্দ্রীয় কমিটির বিষয়ভিত্তিক উপ-কমিটিতে অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। এ জন্য নানা পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে দলটি। কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে যাচাই-বাছাই আরো কঠোর হচ্ছে। সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোরও। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বা আপত্তি উঠছে তাদের বিষয়ে আরো সতর্ক হচ্ছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। আগে বিভিন্ন কমিটি গঠনে দলের শীর্ষ নেতাদের দায়িত্ব দেয়া হলেও এবার ব্যতিক্রম হচ্ছে। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা সরাসরি বিষয়টি দেখভাল করছেন। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় কমিটির বিষয়ভিত্তিক উপ-কমিটি গঠন নিয়ে বেশ সতর্ক আওয়ামী লীগ। কারণ দলে অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিড নেতারা ঢুকছেন-এমন অভিযোগ উঠছে দীর্ঘদিন ধরে। তাই এবার অনুপ্রবেশকারীদের জন্য লাগাম টানা হচ্ছে। দলের বেশ কয়েক শীর্ষ নেতা মানবজমিনকে জানান, ২রা সেপ্টেম্বর দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব আগেও একাধিকবার এসব বিষয়ে সতর্ক করেছে। ওইদিনের বৈঠকে সবাইকে সুনির্দিষ্ট করে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে- যদি কোনো বিতর্কিত, হাইব্রিড বা অনুপ্রবেশকারী এসব কমিটিতে স্থান পায়, তাহলে তার দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কমিটির নেতাদের বহন করতে হবে। আর এবার কমিটি জমা দিলেই অনুমোদন পাবে না, দলীয় সভাপতি যাচাই-বাছাই করে এসব কমিটি অনুমোদন দেবেন। তার কাছে যাওয়া তালিকাতেও অনুপ্রবেশকারীদের নাম থাকলে সংশ্লিষ্ট নেতাকে জবাবদিহি করতে হবে। দলে অনুপ্রবেশকারীদের প্রবেশ বন্ধ করতেই দলীয় সভাপতি পর্যন্ত উপ-কমিটি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়াটি গড়াচ্ছে বলে জানান তারা। এদিকে উপ-কমিটি গঠনের জন্য আজ ১৫ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় সীমা বেঁধে দিয়েছে দলটি। প্রস্তাবিত উপ-কমিটিগুলো যাচাই-বাছাই করে দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দলের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান রোববার মানবজমিনকে বলেন, ৩১টির মধ্যে ১৩টি উপ-কমিটির তালিকা জমা পড়েছে। আশা করছি, মঙ্গলবারের মধ্যে সবগুলো জমা পড়বে। দলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময়ে বেশকিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে দলের বাইরে-ভেতরে সমালোচনার জন্ম দেন উপ-কমিটির নেতারা। বিভিন্ন অপকর্মে তাদের ব্যক্তি সমালোচনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতার কারণে বিতর্কের ঝড় ওঠে। দলের বিভিন্ন উপ-কমিটিতে বেশকিছু ‘অনুপ্রবেশকারী’ স্থান পেয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে। সবশেষ করোনা পরীক্ষা কেলেঙ্কারিতে জড়িত রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ও সরকারি হাসপাতালে নকল মাস্ক সরবরাহ করা অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের মালিক শারমিন জাহান আওয়ামী লীগের দুই উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন বলে তথ্য প্রকাশ পায়। এতে দলের উপ-কমিটি নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, সাহেদদের মতো আর কেউ যেন উপ-কমিটিতে না ঢুকতে পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এদিকে সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে কমিটি গঠন নিয়ে নির্দেশনা দেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, উপ-কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করে ফেলা খুব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এটা তাড়াতাড়ি করা উচিত। কারণ উপ-কমিটিগুলো যেন বসতে পারে, বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, সেমিনার আয়োজন বা নীতিমালা প্রণয়ন, দলের ভবিষ্যৎ কর্মসূচিগুলো নির্ধারণ এসব বিষয়ে উপ-কমিটিগুলো যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবে। দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রত্যেকের যার যার বিষয়ভিত্তিক দায়িত্বটা পালন করা দরকার। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা যে ঘোষণা দিয়েছি, পাশাপাশি আমাদের এখন যে পলিসি আছে সেই পলিসিগুলো থেকে শুরু করে আমাদের প্রতিশ্রুতিগুলো কতটা রক্ষা করতে পেরেছি, ভবিষ্যতে কতটুকু করবো এর সবকিছু আলোচনা করতে হবে। আমরা কিছু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছি। এর প্রেক্ষিত পরিকল্পনাটা আমরা নতুনভাবে গ্রহণ করেছি। এসব নিয়ে কাজ করতে হবে। তার জন্য সংগঠনটাকে সুসংগঠিত করতে হবে। সংগঠনকে গতিশীল করার তাগাদা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অনেক জেলার কমিটি করোনা ভাইরাসের কারণে সম্পূর্ণ করা যায়নি। যেহেতু কাউন্সিল হয়ে গেছে, সেই কমিটিগুলো যেন তাড়াতাড়ি হয়, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। আর এটাও মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের জনগণ বারবার আমাদের ভোট দিয়েছে। আমরা তাদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে এসেছি। তাই তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা আমাদের পূরণ করতে হবে। এর জন্য যা কিছু করা দরকার, তার সবকিছু করতে হবে। দলের ২০০৯ সালের জাতীয় সম্মেলনে দলীয় গঠনতন্ত্রে সংশোধনীর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি গঠনের বিধান সংযুক্ত হয়। প্রতিটি সম্পাদকীয় পদের সঙ্গে সহ-সম্পাদকদের নিয়ে সে বিষয়ে একটি উপকমিটি গঠন করার কথা বলা হয়। বিধানে সহ-সম্পাদকদের পদ সংখ্যা নির্দিষ্ট না থাকায় অনেককে উপ-কমিটিগুলোতে স্থান দেয়া হয় সহ-সম্পাদক হিসেবে। পরে ২০১২ সালের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে আরেক দফা সংশোধনীর মাধ্যমে একেকটি উপ-কমিটিতে পাঁচ জন করে সহ-সম্পাদক রাখার বিধান করে দেয়া হয়। তাতে ১৯টি কেন্দ্রীয় উপ-কমিটিতে মোট ৯৫ জন সহ-সম্পাদকের পদ তৈরি হয়। এরপর ২০১৬ সালে সহ-সম্পাদক পদ নিয়ে সমালোচনা তুঙ্গে ওঠে। ওই সময় কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর দলের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদকের সইয়ে কাগজে-কলমে প্রায় ৪১৬ জনকে সহ-সম্পাদক পদ দেয়া হয়। এতে অসংখ্য বিতর্কিত ব্যক্তি প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের কেন্দ্রের সংশ্লিষ্টতা পায়। এ নিয়ে সাবেক ছাত্রনেতাদের ক্ষোভের মুখেও পড়েন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে ২১তম জাতীয় সম্মেলনে উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক পদটি বাতিল করে উপ-কমিটির সদস্য পদ অন্তর্ভুক্ত করে গঠনতন্ত্রে সংশোধনী আনে আওয়ামী লীগ।