প্রথম পাতা

করোনা পরবর্তী যতো জটিলতা

মরিয়ম চম্পা

২৪ আগস্ট ২০২০, সোমবার, ৯:৫৬ পূর্বাহ্ন

করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠলেও পরবর্তীতে আক্রান্তদের অধিকাংশই নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। মানসিক বিষণ্নতা, অস্থিরতা, গাঁট ব্যথা, নিরানন্দ, কাজের উৎসাহ না থাকা সহ বিভিন্ন সমস্যা পোহাতে হচ্ছে করোনাজয়ীদের। গণমাধ্যমকর্মী দেবব্রত মুখোপাধ্যায় তিন মাস আগে করোনা আক্রান্ত হন। তিনি বলেন, করোনা শেষ হওয়ার পরে আমি সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছি এসিডিটির সমস্যা নিয়ে। কিছু খেতে পারতাম না। গলা জ্বালাপোড়া করতো। পরবর্তীতে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খেয়ে কিছুটা কমেছে। জিহ্বায় ঘা হয়েছে। এটা করোনার কারণে কিনা জানি না। শরীরে ক্লান্তি ভাবটা এখনো আছে। আক্রান্ত হওয়ার তিন মাস পার হলেও এখনো পর্যন্ত পুরোপুরি সুস্থবোধ করছি না।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন নারী চিকিৎসক জানান, ব্যক্তিগতভাবে আমি আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে শুরু হয় নতুন যুদ্ধ। বিশেষ করে মানসিক। যাদেরকে আমরা চিকিৎসাসেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলি তাদেরকে যখন দেখি যে প্রতিবেশী বা পরিচিতজন সবাই কেমন একটা দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। যখন বাসা থেকে উঠছি-নামছি তখন ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। আমি যদিও ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করি। নানাভাবে মানসিক চাপমুক্ত রাখি নিজেকে।
একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মাকসুদা বেগম। জুন মাসের শেষের দিকে করোনা আক্রান্ত হন। এখন সুস্থ হলেও অফিসের কাজে আগের মতো মনোযোগ দিতে পারেন না। শারীরিক দুর্বলতা, অস্থিরতা কাজ করে। তিনি বলেন, নিজের অজান্তে কী যেন ভাবতে থাকি। বুকটা খুব ফাঁকা আর শূন্য লাগে। মনে হয় কি যেন একটা নেই। প্রায় সময় পারিবারিক সামান্য বিষয় নিয়ে অকারণে খুব বেশি দুশ্চিন্তা করি। সংসারের কাজেও মন নেই। কিছুই ভালো লাগে না। মাঝে মাঝে খুব কান্না করি। ভাবি আমি কি আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবো না।
ঢাকার একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন তানিয়া। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে করোনা আক্রান্ত হন। আক্রান্ত অবস্থায় খুব ভালোভাবে কোয়ারেন্টিন মেনে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেন। তানিয়া বলেন, আমি মানসিকভাবে খুব শক্ত একজন মানুষ। মনেই হয়নি করোনা খুব ভয়ানক কিছু। শুরুতে সামান্য পেনিক (আতঙ্ক) কাজ করলেও আমিই পরিবারের সদস্যদের সাহস জুগিয়েছি। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর বুকে খুব চাপ অনুভব করছি। আগের মতো পড়ালেখা বা অন্য কাজে কোনো আনন্দ পাই না। বন্ধুদের সঙ্গেও কথা বলতে এখন ভালো লাগে না। প্রায়ই মাথা ব্যথা হয়। মাথা ঘোরে। নিম্ন রক্ত চাপে ভুগছি। তাছাড়া গলায় মনে হয় মুরগির পালক দিয়ে কেউ সুড়সুড়ি দিচ্ছে। যেটা আগে হতো না।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহানা বানু মানবজমিনকে বলেন, করোনা কিন্তু একেবারে নতুন একটি ভাইরাস। এটা হয়তো আরো অনেক দিন আমাদের ভোগাবে। তাই এটা সম্পর্কে আমরা নতুন করে কিছু বলতে পারছি না। আক্রান্ত পরবর্তী সমস্যাগুলো তাদের ভেতর বেশি দেখা দেয় যারা বড় কোনো রোগের ঝুঁকিতে আছেন। তারা অনেকেই হয়তো খুব বেশি ভোগান্তির শিকার হয়নি বা আইসিইউতে যেতে হয়নি। কিন্তু তারা সাফার করছে। এটা যেহেতু খুব ভয়ঙ্কর একটি ভাইরাস সব মিলিয়ে এটা হচ্ছে। যেহেতু করোনা মাল্টি অরগান ফেইলর করতে পারে। কাজেই এটা নির্ভর করে ইমিউনিটির (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) উপর। যার শরীরে ইমিউনিটি বেশি তার এই সমস্যাগুলো কম হবে। যার কম তাদের বেশি হবে। সে হিসেবে কারো বেলায় দেখা যায় তারা ভালো হয়ে যাওয়ার পরেও শারীরিকভাবে প্রচণ্ড দুর্বল থাকছে। আক্রান্ত হওয়ার পর আইসোলেশনে থাকায় তার সাইকোলজিক্যাল যে ব্রেকডাউনটা হয় সেটার কারণে ইমিউনিটি আরো কমে যায়। ফলে করোনা সেরে গেলেও দুই থেকে তিন মাস সমস্যাটা থাকতে পারে। দীর্ঘ সময় বিশ্রাম নেয়া এবং ওয়েট গেইন করার কারণে নানা জটিলতা দেখা দেয়। শতকরা ৮৫ ভাগ তরুণ প্রজন্ম যাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলো সাধারণত হয় না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status