বাংলারজমিন

খুনের পর রাতে কাপড় পাল্টে ফার্মেসিতে দায়িত্বও পালন করেছিল শুভ

আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

১৪ আগস্ট ২০২০, শুক্রবার, ৬:৫৯ পূর্বাহ্ন

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে প্রেমিকার সঙ্গে হঠাৎ টানাপড়েনের কারণেই সাইফুল ইসলামকে হত্যার পরিকল্পনা করে তার বন্ধু শুভ। হত্যাকাণ্ডের পর রাতে কাপড়-চোপড় পাল্টে খুনি ফার্মেসিতে দায়িত্বও পালন করেছিল। গত বৃহস্পতিবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ‘গ’ অঞ্চলে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে সাইফুলকে সে একাই খুন করেছে বলে স্বীকার করেছে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুন্নাহার ইয়াছমিন তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে সাইফুলকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে শুভ চন্দ্র ভৌমিক। জবানবন্দিতে সে বলেন, ‘এক মেয়ের সঙ্গে তার ৩ থেকে ৪ মাস ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। একপর্যায়ে প্রেমিকা জানতে পারে, শুভ’র পুরো নাম শুভ ভৌমিক। অর্থাৎ সে হিন্দু ধর্মাবলম্বী। পরে তাদের সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়। এই সুযোগে সাইফুলের সঙ্গে শুভ’র কথিত প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠতে শুরু করে। এনিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এরই জেরে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে সে। ঘটনার তিনদিন আগে গোপালদী বাজার থেকে একটি ছুরি কিনে শুভ। ১১ই আগস্ট রাত পৌনে ৯টার দিকে মসজিদের ছাদে সাইফুলকে ডেকে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। অভিযুক্ত শুভ তার স্বীকারোক্তিতে বলে, সাইফুলকে সে একাই খুন করেছে। ছাদে ওঠার পরই প্রথমে সাইফুলকে সে পেছন দিক থেকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। সে লুটিয়ে পড়েছে। পরে পেটে আরো বেশকিছু আঘাত করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে দুই হাতের কব্জির কিছু অংশ ও গলার অগ্রভাগের কিছু অংশ কেটে দেয়। ওসি আরো জানান, স্বীকারোক্তিতে শুভ আরো বলেন, ‘সাইফুলের মোবাইলটি স্থানীয় নজরুল ইসলাম বাবু কলেজের পুকুরে ফেলে দেয় এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি গোপালদী বাজারের পাশ দিয়ে বইয়ে চলা নদের পানিতে ফেলা হয়।’ শুভ কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর এলাকার শংকর চন্দ্র  ভৌমিকের ছেলে। সে ৪ বছর ধরে উলুকান্দি এলাকায় সুশান্ত চন্দ্র শীল তার মামার বাড়িতে থাকতো। পাশাপাশি গোপালদী বাজারে অবস্থিত মনির ফার্মেসিতে কাজ করতো। ঘটনার দিন রাতেই মৃতের বোন লিজার করা মামলায় শুভকে আসামি করাসহ তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। এর আগে ১২ই আগস্ট বিকালে শুভকে পুলিশ আটক করে। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক পুলিশ তার মামা বাড়ি উলুকান্দি এলাকায় একটি জঙ্গল থেকে রক্ত মাখা কাপড়- চোপড় উদ্ধার করে। অপরদিকে মামলার বাদী মৃতের বোন লিজা বলেন, সাইফুলের পেটে ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাতের ফলে নাড়িভুঁড়ির কিছু অংশ বের হয়ে পড়েছিল। পরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার দুই হাতের কব্জির রগ কেটে দেয়া হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর রাতে কাপড়-চোপড় পাল্টে ফার্মেসিতে দায়িত্বও পালন করেছিল শুভ। ১২ই আগস্ট বিকাল ৪টার দিকে গোপালদী বাজারে অবস্থিত তিনতলা ভবনের মার্কাস মসজিদের ছাদে সাইফুলের লাশ পুলিশ উদ্ধার করে। আমি হত্যারকারীর ফাঁসি দাবি করছি। সাইফুল নরসিংদী শার্টেরিপাড়া কলেজে মনোবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স এ লেখাপড়া করছিলেন। পাশাপাশি গোপালদী বাজারে অবস্থিত মনির ফার্মেসিতে কর্মরত ছিলেন। গোপালদী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের উলুকান্দি পূর্বপাড়া জেলে পল্লীতে নানা বাতেন মিয়ার বাড়িতে মা নাজমাকে নিয়ে ছোট বেলা থেকে বসবাস করে আসছিলেন। সে তিন ভাইবোনের মধ্যে সে সবার বড়। স্থানীয় বিশনন্দী এলাকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ওসমানগণির ছেলে।
 
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status