বিশ্বজমিন

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন

সিনহা হত্যা: নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বিচারবহির্ভূত হত্যা সংস্কৃতি মোকাবিলা করা উচিৎ

ব্র্যাড এডামস

১৪ আগস্ট ২০২০, শুক্রবার, ১১:২৭ পূর্বাহ্ন

পুলিশের হাতে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা মেজর সিনহা রাশেদ খানের খুনের ঘটনা বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে তাদের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংস্কৃতির সামনাসামনি এনে দাঁড় করিয়েছে। বহু বছর ধরে কর্তৃপক্ষ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে বা অপরাধ দমনের জন্য প্রয়োজনীয় বলে সমর্থন জানিয়েছে। তারা বহু বছর ধরে এমন ধরনের ভুয়া দাবি মেনে আসছে যে, ভুক্তভোগীরা বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ার বা আত্মরক্ষার্থে নিরাপত্তা বাহিনীর চালানো গুলিতে মারা গেছে।
অবশেষে মেজর সিনহার হত্যাকাণ্ড ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের দৃষ্টি ফিরিয়েছে। তবে এটা পরিষ্কার যে, সরকার নিরাপত্তা বাহিনীর চলমান এই সমস্যা নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী নয়। বাংলাদেশ-ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অধিকার অনুসারে, বাংলাদেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মীদের হাতে ১৫০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন চলতি বছর। তা সত্ত্বেও, এখন অবধি এসব ঘটনার মধ্যে একটিরও সফল প্রসিকিউশন হয়নি। এর আগে ঘটে যাওয়া শত শত হত্যাকাণ্ডের কথাতো বাদই।
পুলিশ মেজর সিনহাকে হত্যার পর প্রাথমিকভাবে তাদের পরিচিত আত্মরক্ষার কৌশল ব্যবহার করে। ৩১শে জুলাই কক্সবাজারের চেকপয়েন্টে সিনহাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি একটি তথ্যচিত্রের কাজ শেষ করে ফিরছিলেন। পুলিশ জানায়, তারা আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছে। তারা আরো জানায়, সিনহার গাড়ি থেকে মাদক উদ্ধার করেছে তারা। গ্রেপ্তার করা হয় সিনহার সহযোগীদের।
তবে জনগণ ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে সিনহার হত্যাকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিলে কর্তৃপক্ষ কিছু পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। এখানে উল্লেখ্য, সিনহা একসময় প্রধানমন্ত্রীর সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা বাহিনীর অংশ ছিলেন। তার হত্যাকাণ্ডে ২১ পুলিশকর্মীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয় ও নয় জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া পুলিশ সদস্যদের মধ্যে একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাও রয়েছেন, যিনি প্রকাশ্যে ক্রসফায়ারে খুন করার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তিনি পূর্বে বলেছেন, ক্রসফায়ারের ভুক্তভোগীরা সবাই অপরাধী ছিল। তার এই অভিযোগ তদন্ত করার বদলে সরকার তাকে একটি পদক পুরষ্কার দিয়েছিল।
মেজর সিনহার মৃত্যুর পর পুলিশ সদস্যদের গ্রেপ্তার অন্যান্য অবৈধ হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্বাধীন তদন্তের শুরু হওয়া উচিৎ, যাতে অপরাধীদের যথাযথ জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায়। অবশ্য তা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সিনহা হত্যাকাণ্ড ঘিরে তদন্তের তত্ত্বাবধায়নে রয়েছেন সেনাবাহিনী ও পুলিশবাহিনীর প্রধানরা। তবে উভয়েই আপাতদৃষ্টিতে কেবল ক্ষতির পরিমাণ কমাতে ইচ্ছুক। তারা এ সিনহার হত্যাকাণ্ডকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে আখ্যায়িত করেছে। অধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলোকে ‘ক্রসফায়ার’ শব্দ ব্যবহারের জন্য দুষেছে।

(আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরিমার্জিত ভাবানুবাদ। প্রতিবেদনটি লেখক ব্র্যাড এডামস সংগঠনটির এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক।)
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status