বিশ্বজমিন
এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব, একটি পর্যালোচনা
মানবজমিন ডেস্ক
১২ আগস্ট ২০২০, বুধবার, ১২:০৯ অপরাহ্ন
এতে বলা হয়, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাসের মেয়াদ শেষের দিকে। অথচ, তিনি এখন পর্যন্ত কেবল তিন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পেরেছেন। বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ পেতে তিনি ৪ মাস ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে তা ফলপ্রসূ হয়নি।
এতে আরও বলা হয়, এপ্রিলে ভারতীয় প্রতিযোগীকে হারিয়ে সিলেটে একটি এয়ারপোর্ট টার্মিনাল নির্মানের কাজ বাগিয়ে নিয়েছে চীনের বেইজিং কনস্ট্রাকশন গ্রুপ। ২৫ কোটি ডলারের ওই চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ কারণ সিলেট আবার ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সংবেদনশীল সীমান্তের কাছাকাছি। খবরে বলা হচ্ছে, ওই চুক্তি নয়াদিল্লিকে কিছুটা উদ্বিগ্ন করেছে। জুনে বাংলাদেশ থেকে ৮০০০ পণ্য আমদানির ওপর শুল্কমুক্ত ছাড় দিয়েছে চীন।
ঢাকা একে “অর্থনৈতিক কূটনীতি” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তবে বাংলাদেশে চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রভাব ভারতের সঙ্গে অধিকতর পুরোনো সম্পর্কের ওপর ছায়া ফেলছে।
এছাড়াও তিস্তা নদীতে একটি পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের জন্য চীনের অর্থায়ন চেয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে এই নদীর পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে হওয়া একটি চুক্তি ৮ বছর ধরে অচলায়তনে বন্দী। আর এই নদীর জন্যই বাংলাদেশের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ১০০ কোটি ডলার চেয়েছে চীনের কাছে।
ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক আলি রিয়াজ বলেন, ‘বাংলাদেশ-চীন বন্ধুত্ব নিয়ে ভারতের অস্বস্তি সহজেই অনুমেয়।’ তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছেন, বাংলাদেশে চীনের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিস্তারের ফলে ভারতের প্রভাব খর্ব হবে, যা ইতিমধ্যেই ধাপে ধাপে কমছে।
ওয়াশিংটনের আটলান্টিক কাউন্সিল নামে প্রভাবশালী একটি থিংকট্যাংকে জ্যেষ্ঠ ফেলো হিসেবেও কাজ করছেন আলি রিয়াজ। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, দুই আঞ্চলিক শক্তির মধ্যে ‘প্রক্সি যুদ্ধের মঞ্চ’ হয়ে ওঠা উচিৎ হবে না ঢাকার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত নাগরিকত্ব সংশোধন বিল পাশ করার পর বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কে নেতিবাচকতা নামে। হাসিনা ওই আইনকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। এছাড়া ভারতের আসামে নাগরিকপঞ্জি চালুর পরে ওই আইন পাশ হয়। এসব থেকে আতঙ্ক বাড়ে যে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় ভারতীয় রাজ্যগুলো থেকে মুসলিমরা গণহারে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। ঢাকা উভয় পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। কিছু মন্ত্রী পর্যায়ের সফরও বাতিল করেছে।
তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম বলছেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আগের মতোই ভালো।’
ঢাকা এখন পর্যন্ত ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে হাসিনার সাক্ষাৎ না হওয়ার ব্যাপারে কভিড-১৯ রোগের কারণে সামাজিক দূরত্ব রক্ষার বিষয়টি উল্লেখ করেছে। তবে সম্পর্কের শীতলতা বেশ স্পষ্ট।
চীন ও ভারত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক আংশীদার। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ১২০০ কোটি ডলারের, ভারতের সঙ্গে ৮০০ কোটি। দুই দেশেই বাংলাদেশ ১০০ কোটি ডলার করে রপ্তানি করে থাকে।
২০১৬ সালে ঢাকায় নিজের প্রথম সফরে এসে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২৭টি অবকাঠামো প্রকল্পে ২০০০ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশকে অবশ্যই এই বিষয়ে সতর্ক হতে হবে যেন চীনের প্রকল্পের কারণে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে ভাটা না পড়ে।
পররাষ্ট্র বিশ্লেষক মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রতিবেশীকে পরিত্যাগ করতে পারি না।’ তৌহিদ হোসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অভিযোগের তালিকা অনেক দীর্ঘ। তবে হোসেন বলেন, ‘ভারত তিন দিক থেকেই আমাদের ঘিরে রেখেছে।’
বাংলাদেশ ২০২৪ সালের মধ্যে জাতিসংঘের উন্নয়নশীল দেশের তকমা পেতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবিরের মতে, এসব দিক লক্ষ্য রেখে বাংলাদেশের উচিৎ যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের সঙ্গে আংশীদারিত্ব গড়ে তোলা। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ ভারত ও চীন উভয় দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা। অভিন্ন স্বার্থ যেমন, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব কমিয়ে আনার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া দক্ষিণ এশিয়ার জন্য ভালো।’