শেষের পাতা

বন্যাকবলিত এলাকায় করোনা পরীক্ষা আরো কম

পিয়াস সরকার, গাইবান্ধা থেকে ফিরে

১১ আগস্ট ২০২০, মঙ্গলবার, ৯:৩৯ পূর্বাহ্ন

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেমে নেই। সংক্রমণের মধ্যেই দেশের এক-তৃতীয়াংশ অঞ্চলে হানা দিয়েছে বন্যা। এবারের বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় ভোগান্তিও চরমে পৌঁছেছে। বন্যায় যেখানে জীবন বাঁচানো দায় সেখানে করোনা পরীক্ষা নিয়ে কারো তেমন চিন্তা নেই। করোনার কারণে আয়হীন ও আয় কমে এসেছে অধিকাংশ মানুষের। এরই মাঝে দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় দু’বেলা খাবার খাওয়াটাও যেন একটা প্রতিযোগিতা। দেশে ধীরে ধীরে কমে আসছে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা। গতকাল করোনা পরীক্ষা করা হয় মাত্র ১১ হাজার ৭৩৭ জনের। স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী বন্যাকবলিত এলাকায় করোনার পরীক্ষা দেশের অন্য এলাকা থেকে তুলনামূলক কম হচ্ছে।   
গাইবান্ধার সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ বলেন, বন্যাকবলিত এলাকা থেকে কতোটা নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সে তথ্য এড়িয়ে তারা বলেন, উপসর্গের কথা জানালে আমরা তাদের নমুনা সংগ্রহ করছি। এক প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, তারা জীবন বাঁচানোর লড়াই করলেও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন। তাদের উপসর্গের কথা বললেই নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
সরজমিন গাইবান্ধার বন্যাকবলিত বালাসীঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বন্যার সঙ্গে লড়াইয়ে জয়ী হওয়াটাই তাদের প্রধান লক্ষ্য। করোনা পরীক্ষা করানোটা রীতিমতো দুষ্কর। বন্যার পানি অনেকাংশে কমতে শুরু করলেও কোহিনূর বেগমের বাড়িতে এখনো হাঁটু পানি। প্রায় ১ মাস ১৪ দিন ধরে বন্যার কবলে পড়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। শুরু থেকেই তার জ্বর, সর্দি, কাশি থাকলেও তিনি কোনো চিকিৎসা নেননি। জানতে চাইলে বলেন, ‘প্যাটোত ভাত জোটে না, চিকিৎসা করামো কোটে থাকি।’
এমন অনেকেরই করোনার নানা উপসর্গ থাকলেও করাননি নমুনা পরীক্ষা। কারণ জানতে চাইলে তারা এটাকে ঝামেলা ও দুর্বোধ্য কাজ হিসেবে উল্লেখ করেন। বালাসীঘাটের পল্লী চিকিৎসক আবুল হোসেন। তিনি ছোট একটি দোকানে বিভিন্ন ওষুধ বিক্রি করেন। জানান, এই এলাকায় বন্যার কারণে অনেকেই জ্বর, সর্দিতে ভুগছেন। এটা যেমন করোনার উপসর্গ ঠিক তেমনি দীর্ঘসময় পানির সংস্পর্শে থাকার কারণেও হয়। তবে অধিকাংশ লোকই জ্বরের কারণে কোনো চিকিৎসা নেন না।
বন্যাদুর্গত এলাকাটিতে নতুন সমস্যা ডায়রিয়া। আছিয়া বানুর ঘরে ৩ সন্তান আক্রান্ত। জানান, প্রথমে আক্রান্ত হন তিনি, এরপর ২ ছেলে। ছোট ছেলের অবস্থা খুবই শোচনীয়। ৩ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এখনো বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছে না।
বাঁধের পারের বেশ কয়েকটি ওষুধের দোকানে কথা বলে জানা যায়, জ্বর, ডায়রিয়া ও স্যালাইনের ক্রেতা প্রচুর। এছাড়াও খোশপাচড়ার ওষুধও কিনছেন মানুষ।
বাঁধের মাঝে ছোট্ট একটি ঘরে শুয়ে ছিলেন সাজু মিয়া। প্রায় ২ থেকে ৩ দিন যাবত ভুগছেন জ্বরে। জ্বরের সঙ্গে সর্দি-কাশিতেও ভুগছেন। অর্থ্যাৎ করোনার সব ধরনের লক্ষণ আছে তার। জানান, পানিতে দীর্ঘ সময় থাকার কারণে জ্বর এসেছে। করোনা পরীক্ষা করাবেন কিনা? উত্তরে বলেন, কোথায় করাতে হয়। কীভাবে করাতে হয় কিছুই জানেন না তিনি। আর সেই সঙ্গে কোনো স্বাস্থ্যকর্মী বাঁধে আসেননি বলেও অভিযোগ করেন। এই আশ্রয় নেয়া বাঁধের কয়েকজন- যারা অসুস্থ কিংবা রোগ থেকে সেরে উঠেছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেউই করোনা পরীক্ষা করাননি। সেই সঙ্গে কীভাবে করাতে হয় তাও জানেন না তারা।
সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতিও বেশ নাজুক। অধিকাংশ এলাকায় নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি। তবে হাওর এলাকায় বন্যা আরো দীর্ঘদিন থাকবে। সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. শামসুদ্দিন বলেন, বন্যার সময় এই নমুনা পরীক্ষার হার অনেক কম ছিল। এখন পানি কমে যাওয়ায় নমুনা পরীক্ষার হার কিছুটা বেড়েছে। গতকাল শনিবার বন্যাকবলিত এলাকা ছাতক থেকে ১৯টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
বন্যাকবলিত কুড়িগ্রাম এলাকার উলিপুর উপজেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুভাষ চন্দ্র সরকার বলেন, আমাদের আগের মতো পরীক্ষা করানো হচ্ছে না। কারো উপসর্গ থাকলে এবং যোগাযোগ করলে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তিনি জানান, গতকাল উলিপুরে মাত্র ৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এই জেলার আরেক বন্যাকবলিত এলাকা চিলমারীর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, বন্যাকালে এই এলাকায় ৪০ থেকে ৫০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
দেশের আরেকটি বন্যাকবলিত এলাকা সিরাজগঞ্জ। এই এলাকায় বন্যা ও নদীভাঙনে জর্জরিত মানুষ। সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকাসহ যেকোনো এলাকায় উপসর্গ থাকলেই করোনা পরীক্ষা করাতে পারছেন। যোগাযোগ করলে বাড়িতে গিয়েও নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। আর বন্যাদুর্গত এলাকায় উপসর্গ থাকলে তাদের নমুনা পরীক্ষার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status