দেশ বিদেশ

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের আদিবাসী হতে চাওয়ার প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ ভাবনা

তিমির মজুমদার

১০ আগস্ট ২০২০, সোমবার, ৯:০৮ পূর্বাহ্ন

(পূর্ব প্রকাশের পর)  
Article-10
Indigenous peoples not be forcibly removed from their lands or territories. অর্থাৎ আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীকে তাদের ভূমি বা ভূখণ্ড থেকে জোর করে অন্য কোথাও সরানো যাবে না।

Article-30
Military activities shall not take place in the lands or territories of indigenous peoples, unless justified by relevant public interest or otherwise freely agreed with or requested by the indigenous peoples concerned.

অর্থাৎ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি কিংবা ভূখণ্ডে সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করা  যাবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত উপযুক্ত জনস্বার্থের প্রয়োজনে যুক্তিগ্রাহ্য হবে অথবা যদি সংশ্লিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠী স্বেচ্ছায় সম্মতিজ্ঞাপন বা অনুরোধ করে।

জাতিসংঘ সনদগুলোর বর্তমান অবস্থা কি? Indigenous and Tribal Populations Convention-1957 (No. 107) ১৯৫৭ সালে পাস হলেও এ পর্যন্ত বিশ্বের মাত্র ২৭ টি দেশ এই কনভেনশনটি সার্টিফাই করেছে। ১৯৭২ সালের ২২শে জুন বাংলাদেশও কনভেনশন- ১০৭ সার্টিফাই করেছিল। পরবর্তীতে কনভেনশন- ১৬৯ পাস হওয়ার পর কনভেনশন-১০৭ স্বয়ংক্রিয়ভাবে তামাদি হয়ে গেছে এবং বাংলাদেশ অদ্যাবধি কনভেনশন- ১৬৯ সার্টিফাই করেনি। তাই এটি বাংলাদেশের জন্য অবশ্যপালনীয় নয়। এখানে লক্ষণীয় যে, ইতিমধ্যে ৮টি দেশ এই কনভেনশনকে নিন্দা করে তা থেকে বেরিয়ে গেছে।

অন্যদিকে Indigenous and Tribal Populations Convention-1989 (No.169), ১৯৮৯ সালে পাস হলেও এখন পর্যন্ত বিশ্বের মাত্র ২২ টি দেশ এই কনভেনশনটি  সার্টিফাই করেছে। এই উপমহাদেশের একমাত্র নেপাল ছাড়া আর কোনো দেশ এই কনভেনশনটি সার্টিফাই করেনি। অন্যদিকে, ১৩ই সেপ্টেম্বর ২০০৭ সালে জাতিসংঘের ৬১তম অধিবেশনে আদিবাসী বিষয়ক যে ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে ভোটদানের সময় ১৪৩টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে, ৪টি দেশ বিপক্ষে, ১১টি দেশ বিরত এবং ৩৪টি দেশ অনুপস্থিত থাকে। বাংলাদেশ ভোটদানে বিরত থাকে। বিরুদ্ধে ভোট দেয়া দেশগুলো হচ্ছে- অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র। অথচ এই দেশগুলোতে আদিবাসীরাই ছিল এক সময়ে মূল জনগোষ্ঠী এবং জাতিগতভাবে যাদের সংখ্যা বিপদজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।
বিস্ময়কর অথবা পরিহাসের ব্যাপার হলো, বাংলাদেশের আদিবাসীদের রক্ষায় খুব সোচ্চার ও পৃষ্ঠপোষক দেশগুলোর বেশির ভাগই কিন্তু নিজ দেশের জন্য আইএলও কনভেনশন- ১০৭ বা ১৬৯ ও জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক ঘোষণাপত্রের স্বাক্ষরকারী নয়, পক্ষে ভোট দেয়নি এবং সার্টিফাইও করেনি। কাজেই তাদের কুমিরের অশ্রু বর্ষণের কারণ ও মতলব বুঝতে রকেট সায়েন্টিস্ট হবার প্রয়োজন নেই। এ সব সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর উপজাতি, আদিবাসী কিংবা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য এই মায়াকান্নার পেছনে মূলত ভূ-রাজনৈতিক, ভূ-অর্থনৈতিক এবং সর্বোপরি অধিপত্যবাদী স্বার্থই প্রকাশ্যে কিংবা অবচেতনে প্রবলভাবে কাজ করেছে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
তাহলে বাংলাদেশে সত্যিকার আদিবাসী কারা? নিঃসন্দেহে বাঙালি ও বাংলা ভাষাভাষীরা এদেশের সত্যিকারের আদিবাসী। কারণ এরাই প্রোটো-অস্ট্রেলিয়েড (Proto Astroloid) নামের আদি জনধারার অংশ এবং তারাই একমাত্র আদিবাসী বা  Son of the Soil বলে দাবি করতে পারে। এর পেছনে জাতিতাত্ত্বিক, নৃ-তাত্ত্বিক ও  বৈজ্ঞানিক যুক্তি-প্রমাণও রয়েছে। বাংলাদেশের এই অঞ্চলে বাঙালিরা বসবাস করে আসছে চার হাজার বছরেরও আগে থেকে। বিক্রমপুর, ওয়ারী-বটেশ্বর, সোনারগাঁও কিংবা মহাস্থানগড় থেকে প্রাপ্ত নৃ-তাত্ত্বিক প্রমাণাদি এসব বিষয় নিশ্চিত করে।

অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান উপজাতি চাকমাদের আদি বাসস্থান ছিল আরাকানে, ত্রিপুরাদের আদি বসবাস ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে এবং মার্মা জনগোষ্ঠী এসেছে বার্মা থেকে। সেই অর্থে তারা কেউই বাংলাদেশের আদিবাসী নয় বরং তারা এদেশে অভিবাসী। তারা বিভিন্ন স্থান থেকে দেশান্তরী হয়ে এদেশের নানাস্থানে অভিবাসিত হয়ে আনুমানিক তিনশ’ থেকে পাঁচশ’ বৎসর পূর্ব থেকে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে বসবাস করতে শুরু করেছে। তাই কোনোক্রমেই বাংলাদেশে বসবাসকারী চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এদেশের আদিবাসী হতে পারে না। যারা তাদের আদিবাসী বলে আখ্যায়িত করছেন তারা শুধু সংবিধান লঙ্ঘন করছেন তা নয় বরং তারা জেনে শুনে মিথ্যাচার করেছেন।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলো যে আদিবাসী নয়, তার প্রমাণ কি?  বাংলাদেশের উপজাতীয় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলো এদেশের আদিবাসী বা ভূমিপুত্র নয় তার প্রমাণ প্রখ্যাত উপজাতি গবেষক ও নৃ-তত্ত্ববিদ Robert Henry Sneyd Hutchinson তার বই   Account of Chittagong Hill Tracts&_ (1906), Captain Thomas Herbart Lewin তার বই The Chittagong Hill Tracts and Dwellers There in&_ (1869) অমেরেন্দ্র লাল খীসা (১৯৯৬) প্রমুখের লেখা, গবেষণাপত্র, থিসিস এবং রিপোর্ট বিশ্লেষণে পাওয়া যায়। তারা সবাই একবাক্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজাতীয়দের নিকট অতীতের কয়েক দশক থেকে নিয়ে মাত্র কয়েক শতাব্দী আগে এদেশে স্থানান্তরিত বা অভিবাসিত হবার যুক্তি প্রমাণ ও ইতিহাস তুলে ধরেছেন।
প্রখ্যাত নৃ-তত্ত্ববিদ এবং ব্রিটিশ পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম জেলা প্রশাসক Captain Thomas Herbart Lewin এর মতে, A greater portion of the hill tribes, at present living in the Chittagong Hills, undoubtedly came about two generations ago from Arracan.  This is asserted both by their own traditions and by records in the Chittagong Collectorate (Lewin 1869, 28). অর্থাৎ মাত্র দুই পুরুষ আগে ব্রিটিশদের সাথে বার্মা যুদ্ধের সময় চাকমারা পার্বত্য অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করে যা চট্টগ্রাম কালেক্টরেট অফিসে রক্ষিত দলিল       দস্তাবেজ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মারমা বা মগ জনগোষ্ঠী সদস্যরা ১৭৮৪ সনে এ অঞ্চলে বার্মা থেকে দলে দলে অনুপ্রবেশ করে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাস শুরু করে (Shelly, 1992 Ges Lewin, 1869)।

বিশিষ্ট ব্রিটিশ চাকমা পণ্ডিত অমেরেন্দ্র লাল খীসা ‘অরিজিনস অব চাকমা পিপল্‌স অব হিলট্র্যাক্ট চিটাগং’-এ লিখেছেন, ‘তারা (চাকমারা) এসেছেন মংখেমারের আখড়া থেকে’। পরবর্তীতে  আরাকান এবং মগ কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে বান্দরবানে অনুপ্রবেশ করেন। আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ বছর আগে তারা উত্তর দিকে রাঙ্গামাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েন’। এ বিষয়ে বিশিষ্ট গবেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবদুর রব, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ড. খুরশীদা বেগম, বিজয় কী বোর্ডের উদ্ভাবক জনাব মোস্তফা জব্বার, পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে কাজ করেছেন এমন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গবেষক জনাব মেহেদী হাসান পলাশ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছেন যে, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী নয়। এছাড়া মার্মা সার্কেল চিফ অংশু প্রু চৌধুরী প্রদত্ত বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য ও সাক্ষাৎকার এবং ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর শান্তিচুক্তিক্তে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। উভয় ক্ষেত্রেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের উপজাতি হিসেবে পরিচিতি প্রদান করা হয়েছে ‘আদিবাসী’ হিসেবে নয় (বিস্তারিত: https:/www.youtube.com/watch?v=_IlixQ1SS6s)।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের আদিবাসী আখ্যায়িত করেল অসুবিধা কি? অনেককেই এটি বলতে শোনা যায় যে, আদিবাসী বললে যদি ওরা খুশি হয় বা খুশি থাকে তাহলে সমস্যা কি? বিভিন্ন লেখা এবং দুই একটি সরকারি প্রজ্ঞাপনে এমনকি কোর্টের রায়ে পর্যন্ত অবচেতনভাবে তাদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে এ থেকে কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে হতে পারে কিন্তু পরবর্তীতে ‘ইস্ট তিমুর’ কিংবা ‘সাউথ সুদান’ এর মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তার দায়ভার নিতে কি আমাদের সেই সব বুদ্ধিজীবী এবং মিডিয়া ভালো প্রস্তুত আছেন?
সকলের জ্ঞাতার্থে এখানে উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে,  ‘ইস্ট তিমুর’ এবং ‘সাউথ সুদান’-এর মতো একই পরিস্থিতি কাশ্মীর, চেচনিয়া, ফিলিপাইনের মিন্দানাও এবং পৃথিবীর আরও কিছু স্থানে বিরাজ করলেও সেখানে গণভোট অনুষ্ঠিত করে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়নি এবং হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই। তাছাড়া স্বাধীনতার পরপরই পার্বত্য চট্রগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর একটি অংশ স্বাধীন ‘জুম্মল্যান্ড’ স্থাপন করার জন্য এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে লিপ্ত হয়ে পড়ে। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর একান্ত চেষ্টায় ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর তারিখে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হলেও ক্ষুদ্র নৃ-ৃ গোষ্ঠীর একাংশ এখনও জেএসএস, ইউপিডিএফ এবং জেএসএস (সংস্কার) এর নামে তাদের সশস্ত্র কার্যক্রম চালু রেখেছে। কাজেই ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতি আদায় করতে পারলে জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী তারা ‘জুম্মল্যান্ড’ দাবি করবে- এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

কেননা ‘আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র-২০০৭’ অনুযায়ী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করলে সেই অনুযায়ী তাদের স্বায়ত্তশাসন, রাজনৈতিক, আইনি, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা প্রদান করার বাধ্যবাধকতা থাকবে। বিশেষ করে এই ঘোষণার ধারা ৩০ অনুযায়ী ‘আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি কিংবা ভূখণ্ডে সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না উপযুক্ত জনস্বার্থের প্রয়োজনে যুক্তিগ্রাহ্য হবে, অন্যথায় যদি সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী স্বেচ্ছায় সম্মতিজ্ঞাপন বা অনুরোধ না করে।

একটি স্বাধীন রাষ্ট্র তার সামরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিশেষ কোনো জনগোষ্ঠীর ভূমি বা ভূখণ্ড ব্যবহারের আগে যথাযথ পদ্ধতি ও বিশেষ করে তাদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিশেষ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করে অনুমতি গ্রহণ করার বিষয়টি সেই রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। আর যদি তারা ‘স্বেচ্ছায় সম্মতি জ্ঞাপন’ না করে তাহলে কী হবে? যদি কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বহির্বিশ্বের কারো সঙ্গে কোনো অশুভ আঁতাত করে? যদি বহির্বিশ্ব থেকে ওই অঞ্চল আক্রান্ত হয় তবে সরকার কি সামরিক কার্যক্রম গ্রহণে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কারো সম্মতির অপেক্ষায় নিষ্ক্রিয় থাকবে? যদি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নেতৃত্ব সম্মতি না দেয় তাহলে কী হবে? বিশেষ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ অথবা এর কোনো অঙ্গ সংগঠনের মতো অনুযায়ী যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত না হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় জাতিসংঘ  হস্তক্ষেপ করতে পারে।

এছাড়াও বাংলাদেশে কমুবেশি ৫০টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নিজস্ব ‘মালিকানাধীন’ ভূমি আছে এবং তারা যদি সেই ভূমি বা ভূখণ্ড ব্যবহারে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ওপর এত বিধিুনিষেধ আরোপ করে তাহলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের কী হবে?  এই সকল প্রশ্নের গুরুত্ব অনুধাবন করত: সকলকে এই বিষয়টিতে সতর্ক হতে হবে এবং ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’দের ‘আদিবাসী’ বলা বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় ভবিষ্যতে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও প্রচুর চাকমা, ত্রিপুরা ও অন্যান্য ট্রাইবাল জনেগোষ্ঠী রয়েছে। তারা সেখানে উপজাতি বা Schedule Cast হিসেবে পরিচিত এবং সুবিধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। সেখানকার কোনো মিডিয়া কিংবা বুদ্ধিজীবী তো তাদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার আন্দোলন করছে না।

উল্লেখ্য যে, চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকা আমাদের মোট ভূখণ্ডের দশভাগের একভাগ (১৩,২৯৫ বর্গ কি.মি./৫,১৩৩ বর্গ মাইল) এবং এখানে মোট জনসংখ্যার মাত্র শতকরা একভাগ (২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ১৫,৯৮,২৯১ জন) মানুষ বাস করে। এ এলাকায় জাতিগত বিভেদ সৃষ্টি করে বিচ্ছিন্নতাবাদকে যারা অবচেতনে উস্কে দিচ্ছেন তারা কি জানেন যে, এখানে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যার অর্ধেক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং বাকি অর্ধেক বাঙালি। মাত্র দশ বছর আগে থেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের দাবিকৃত আদিবাসী হওয়ার প্রবল ইচ্ছা আসলে জাতিসংঘের ২০০৭ সালের ‘আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্রে’র বিভিন্ন ধারা থেকে ভবিষ্যতে ফায়দা লোটার কৌশল। এই কৌশলের ফাঁদে পা দেয়া ভয়ঙ্কর এবং বিপজ্জনক। কারণ তাদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতি দিলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ তার এক দশমাংশ ভূমির মালিকানা হারাতে পারে যার সঙ্গে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির ভৌগলিক অখণ্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত।

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই ভূখণ্ডের একদশমাংশ ছেড়ে দিতে কি আমরা প্রস্তুত? যার উত্তর অবশ্যই ‘না’। কাজেই সকলকে সতর্ক হতে হবে এবং এদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ‘আদিবাসী’ বলা বন্ধ করতে হবে। আশা করা যাচ্ছে যে, এই রচনা পাঠ করার পর আর কেউ স্বজ্ঞানে বা অবচেতনে বাংলাদেশে বসবাসরত ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’দের ‘আদিবাসী’ সম্বোধন করা থেকে বিরত থাকবেন।
(লেখক- শিক্ষাবিদ ও উন্নয়নকর্মী)
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status