বাংলারজমিন

‘বাবা হামারো নামডা একটু নেকি নেন’

সাওরাত হোসেন সোহেল, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) থেকে

৮ আগস্ট ২০২০, শনিবার, ৮:৫৪ পূর্বাহ্ন

করোনার ভয়ে ভীতু ওরা এখন বন্যার ভয়ে বাড়িছাড়া। ঠাঁই নিয়েছে ওয়াপদা বাঁধে, হেলিপ্যাড, কেচি সড়ক, রেল লাইনসহ উঁচু স্থানে। সারি সারি তাঁবু টাঙিয়ে রোদ-বৃষ্টিতে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। তাঁবু আর কষ্টের ছবি তুলে ডায়েরি বের করতেই এগিয়ে আসেন কয়েকজন। নাম লিখে নেয়ার জন্য চাপ দেন। কথা বলতেই এগিয়ে আসেন বৃদ্ধা মতিজান (৮০)। এগিয়ে এসে বলেন, ‘বাবা, হামারো নামডা একটু নেকি নেন। বন্যায় বাড়িঘর সব তলাইয়া গেছে, এল্যাও বাড়িত পানি। এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বার কেউ এক মুঠো চাইল তো দূরের কথা কোনো খোঁজখবরও নেয়নি। তাই নাম নেকি নিয়্যা কিছু চাইল দেন।’ বন্যায় তার বাড়িঘর সব এখন পানির নিচে। রমনা ভরটপাড়ায় বাঁধে ঠাঁই নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে অসহায় এই বৃদ্ধা। রেল লাইনে আশ্রয় নেয়া জমিলা কাঁদছেন। ঘরে খাবার নেই। যেখানেই ত্রাণের কথা শুনছেন সেখানেই যাচ্ছেন দল বেঁধে ফিরছেন খালি হাতে। শুধু মতিজান, জমিলা নয় এ সময় অনেকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘হামার নামডাও একটু লেইখা নেন বাবা’। দীর্ঘদিন থেকে বন্যার তাড়া খাওয়া মানুষজন এখনো ফিরতে পারছে না নিজ গৃহে। খোলা আকাশের নিচেই এখন তাদের আবাস।
জানা গেছে, ২য় দফার বন্যার পানি কুড়িগ্রামের চিলমারী গ্রাস করে বাড়িঘর ছাড়া করে মানুষকে। ২য় দফার বন্যার পানি নেমে যাওয়ার আগেই ৩য় দফার বন্যার পানি ফিরতে দেয়নি বানভাসিদের নিজ গৃহে। প্রায় মাস পেরিয়ে গেলেও করোনার ভয়ে গৃহবন্দি মানুষগুলো বন্যার তাড়া খেয়ে হয়েছে গৃহহারা। ৩য় দফার পানি নামতে শুরু করলেও উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পশ্চিম পাড়ের পানি পুরোপুরি নেমে না যাওয়ায় এখনো রমনা, থানাহাট, রানীগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী উলিপুর উপজেলার বেশকিছু গ্রাম রয়েছে পানির নিচে। সেসব এলাকার বেশির ভাগ মানুষের আশ্রয় এখন বাঁধসহ উঁচু স্থানগুলোতে। ফলে নিজ গৃহে ফিরতে না পেয়ে শতশত পরিবার করছে মানবেতর জীবনযাপন। মানুষগুলো মানবেতর জীবনযাপন করলেও কারো ভাগ্যে ত্রাণ জুটলেও জোটেনি অনেকের ভাগ্যে একমুঠো ত্রাণের চাল বা কোনো সাহায্য। সরকারের দেয়া ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাপকভাবে শুরু হলেও অজ্ঞাত কারণে বেশির ভাগ বানভাসির ভাগ্যে জুটছে না সহায়তা। রয়েছে ত্রাণ বিতরণেও নানান অভিযোগ। বন্যা আর কষ্টে থাকা মানুষগুলোর কাছে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক থাকলেও খিদা আর গৃহে ফিরতে না পারায় সেটিও নেই যেন ভয়। হালিমা বলেন বাড়িঘর ছেড়ে বন্যার ভয়ে হেলিপ্যাডে আশ্রয় নিয়েছি এখানে সকলে গাদাগাদি করে থাকছি। এ সময় বক্কর আলী বলেন, করোনার ভয় তো আছে কিন্তু বন্যার তো বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। বাঁধে আশ্রয় নেয়া গোলামবাড়ী বলেন, যেখানে থাকার স্থান পাওয়াটাই মুশকিল সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বড় কঠিন স্যার। করোনায় ভয়ে গৃহবন্দি মানুষগুলো বন্যার ভয়ে গৃহছাড়া হয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দুর্ভোগে থাকলেও কেউ খোঁজ নিচ্ছে না বলে তাদের অভিযোগ। থাকার কষ্টের সঙ্গে অনেকেই রয়েছেন খাদ্যের কষ্টে। দিন যাচ্ছে বাড়ছে কষ্ট আর দুর্ভোগ। দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এডব্লিউএম রায়হান বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। তবে অনিয়ম থাকলে এবং অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status