বাংলারজমিন

মৌলভীবাজারের সরব পর্যটন স্পটগুলো এখন জনমানবহীন

ইমাদ উদ দীন, মৌলভীবাজার থেকে

৮ আগস্ট ২০২০, শনিবার, ৮:০৮ পূর্বাহ্ন

এ জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর চিরচেনা দৃশ্যপটে এখন আমূল পরিবর্তন। সরব পর্যটন স্পটগুলোয় এখন জনমানবহীন অনেকটাই সুনসান নীরবতা। কারণ প্রকৃতিপ্রেমীদের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে যমদূত কোভিড-১৯। আর জীবন বাঁচাতে সরকারি তরফে পর্যটন স্পটগুলো খুলে দিতে রয়েছে নানা বিধিনিষেধ। তাই এখন ওখানে পর্যটকদের আনাগুনাও কম। জেলাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চা, রাবার, আগর, লেবু আর আনারসের বাগান। হাওর, নদী, বৃষ্টিবন, জলপ্রপাত, পৌরাণিক স্থাপত্যশৈলী আর উঁচু-নিচু পাহাড়সহ রয়েছে দেড় শতাধিক পর্যটন স্পট। প্রকৃতির অপরূপ রূপ সৌন্দর্যের মানসকন্যা এ জেলার প্রতি সব সময়ই অন্যরকম আকর্ষণ পর্যটকদের। কিন্তু গেল কয়েক মাস ধরে তা উপভোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন পর্যটকরা। আর এ কারণে পর্যটন ও প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজারের শতাধিক পর্যটন স্পটে এখন অন্যরকম দৃশ্য। জানা যায় লকডাউনের শুরু থেকেই পর্যটন মন্ত্রণালয় কিংবা পর্যটন করপোরেশন কোনো ধরনের নির্দেশনা ছাড়াই নিজেদের উদ্যোগে স্বাস্থ্য সচেতনতায় এ জেলার হোটেল, রিসোর্ট, কটেজ ও গেস্ট হাউজ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য বিল অব্যাহত রাখতে গিয়ে চরম আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মালিকপক্ষ। এখন দেশজুড়ে লকডাউন শেষ হলে সরকারের নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান খুললে তাদেরকেও পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন যতই পর্যটন স্পটগুলো বন্ধ রাখা হবে ততই এ খাতে বিনিয়োগকারীর লোকসান ও আর্থিক দুর্দশা চরমে পৌঁছাবে। আর এখাতে ওপর নির্ভরশীল কয়েক লাখ ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবী মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়বেন। সরকারও হারাবে বড় অঙ্কের রাজস্ব। জানা যায়, এ জেলায় দেশের সুনামধন্য পাঁচ তারকা মানের হোটেল ও রিসোর্টসহ ছোট-বড় দেড় শতাধিক হোটেল, রিসোর্ট, কটেজ ও গেস্ট হাউজ রয়েছে। একেকটি প্রতিষ্ঠানে ৫০ থেকে ৪শ’ লোক কাজ করেন। তাছাড়া পরোক্ষভাবে আরো লক্ষাধিক মানুষের আয় ও জীবন-জীবিকার উৎস এ খাত। জানা যায়, প্রতিবছর এ জেলায় প্রায় ৩ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেন। এ থেকে স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা যেমন আয় করেন। তেমনি সরকারও পান বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। মৌলভীবাজারে ঈদ উপলক্ষে লাখো পর্যটকের ঢল নামে। এবারের ঈদেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। চির সবুজ ও শ্যামল প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকরা করোনাভাইরাস ডিঙিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দেশের বৃহত্তম জলপ্রপাত মাধবকুণ্ড ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানসহ এ জেলার শতাধিক পর্যটন স্পট ভ্রমণে এসেছিলেন। কিন্তু তারা হতাশ হয়েছেন। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সেই লকডাউন থেকে বন্ধ ঘোষণা করায় এখনো ঠিক আগের মতো তালাবদ্ধ রয়েছে মূল ফটক। মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতসহ অন্যান্য স্পটেরও একই দশা। পর্যটন স্পটগুলোর এমন দুর্দশায় হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট গেল ৪ মাস ধরে অনেকটাই দেশি-বিদেশি পর্যটকশূন্য। শ্রীমঙ্গলস্থ পাঁচ তারকা গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার পাঁচ তারক মানের দুসাই রিসোর্ট এন্ড স্পাসহ অর্ধডজন রিসোর্টে কয়েক কোটি টাকার লোকশান হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলার কয়েকজন রিসোর্ট, কটেজ ও হোটেলের মালিক মুঠোফোনে জানান- এমনিতে কোভিড-১৯ এর কারণে এ জেলার ছোট বড় দেড় শতাধিক রিসোর্ট, হোটেল ও মোটেলের মালিকরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত। দীর্ঘ লকডাউনের পর স্বাস্থ্য বিধি মেনে পুনরায় তা চালু হলেও ভালো নেই ব্যবসা। এই দুঃসময়ে জেলার পর্যটন স্পটগুলো স্বাস্থ্য বিধি মেনে খুলে দেয়ার জোর দাবি তাদের।
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সভাপতি আবু সিদ্দিক মোহাম্মদ মুসা গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, করোনার শুরু থেকে এ জেলার হোটেল ও রিসোর্টগুলো বন্ধ রয়েছে। এখন স্বল্প পরিসরে স্বাস্থ্য বিধি মেনে খুললেও পর্যটক না থাকায় গেস্টশূন্যতায় কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন ও বিদ্যুৎসহ অন্যান্য বিল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমরা চরম লোকসানে আছি।
শ্রীমঙ্গল বালিশিরি  রিসোর্টের  চেয়ারম্যান শহীদুল হক চুন্নু ও লাউয়াছড়া ইকো কটেজের স্বত্বাধিকারী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, চরম দুর্দিন যাচ্ছে এ শিল্পের। অনেকেই ইতিমধ্যে বন্ধ করে দিয়েছেন আর অনেকের প্রতিষ্ঠানই বন্ধের উপক্রম। তারা এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা চান। তারা বলেন, পর্যটন স্পটগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে দ্রুত খুলে দেয়া প্রয়োজন। তাহলে স্বাস্থ্য বিধি মেনে পর্যটকরা ওই স্পটগুলোতে আসবেন। আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও কোনোরকমে টিকিয়ে রাখা যাবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status