বাংলারজমিন

সচল সড়ক অচল করে উন্নয়ন কাজ, দুর্ভোগ চরমে

বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি

৮ আগস্ট ২০২০, শনিবার, ৮:০৫ পূর্বাহ্ন

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে ১ কিলোমিটার রাস্তার কার্পেটিং দ্বারা উন্নয়ন কাজ শুরুর পর বেড কেটে ফেলে রাখা হয়েছে। রাস্তার দু’পাশ ৩-৪ ফুট উঁচু হওয়ায় এখন চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন। অচলাবস্থা থাকায় হাজারো মানুষের দৈনন্দিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের দাবি আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। উপজেলা প্রকৌশলী বলছেন ঠিকাদারকে তাগাদা দেয়া হচ্ছে। উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর-শরীয়তপুর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে একই প্যাকেজে আমতলার পাকা সড়কের ৯শ’ মিটার পর ১৯০০ মিটার (১ কিলোমিটার) বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ বালিয়াকান্দি, বিলবকচর, মধ্য বকচর গ্রামের মধ্যে কার্পেটিং দ্বারা এবং ত্রিলোচনপুরের ৮২০ মিটারের কাজ পায় মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ, ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ত্রিলোচনপুরের ৮২০ মিটারের কাজ ইতিমধ্যে বালি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৯ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সরজমিন শুক্রবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, আমতলা থেকে কিছুদূর এগিয়ে দক্ষিণ বালিয়াকান্দি এলাকা থেকে শুরু করে বিলবকচর, মধ্যবকচর এলাকায় রাস্তার বেড কেটে দু’পাশে মাটি উঁচু করে রাখা হয়েছে। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে অধিকাংশ জায়গায় কাঁদা ও কিছু কিছু অংশে পানি জমে রয়েছে। উঁচু দু’পাশ দিয়ে কোনোমতে পায়ে হেঁটে চলাচল করছে মানুষ। তবে ভ্যান কিংবা অন্য যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মীরজান শেখসহ স্থানীয়রা জানান, ৪-৫ মাস পূর্বে রাস্তাটির কাজ শুরু হয়। রাস্তার মাটি কেটে দু’পাশে উঁচু করার পর অদৃশ্য কারণে কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকমাস অতিবাহিত হলেও এখনো কাজ বন্ধ রয়েছে। এখন তো চলাচল করা যায় না ! তারা দ্রুত রাস্তাটির কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানান। বিলবকচর গ্রামের দিপক মণ্ডল বলেন, আমাদের চলাচলের সমস্যার কথা বিবেচনা করে এই রাস্তার উন্নয়ন শুরু হয়। রাস্তার মাঝের মাটি কেটে দু’পাশ উঁচু করা হয়েছে। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রয়েছে। আগে ভ্যানগাড়ি কিংবা নসিমনে কৃষিপণ্য সদরে নেয়া গেলেও কয়েক মাস যাবত চরম দুর্ভোগে রয়েছি। বাজার থেকে চাল কিনলেও সেটি আধা কিলোমিটার মাথায় করে নিতে হচ্ছে আমার বাড়িতে। মধ্য বকচর গ্রামের হাসিনা বলেন, এখন যে অবস্থা তাতে আগেই ভালো ছিল অন্তত ভ্যানগাড়ি চলতো। এখন পায়ে হাঁটা ছাড়া উপায় নেই। তাও বৃষ্টিতে অচল। বাইসাইকেলের পিছনে বস্তা নিয়ে মধ্যবকচর থেকে আমতলায় আসার পথে বকচর গ্রামের মিঠুন মণ্ডল বলেন, বাড়ি থেকে ধান নিয়ে যাচ্ছি, একজন সহযোগী আছে পেছনে বস্তা ধরার জন্য। ভ্যান যাতায়াতের কোনো সুযোগ নেই, কেউ যায় না। সামান্য বৃষ্টি হলে বাইসাইকেল নিয়েও চলাচল করা কষ্টকর। একমাত্র রাস্তা বিধায় যেভাবেই হোক চলতে হচ্ছে। আমাদের প্রায় ২-৩শ’ পরিবারসহ এই পথ ব্যবহার করা হাজারো মানুষকে বিকল্প পথ ঘুরে সদরে যেতে হচ্ছে। বিলবকচর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক ভুলেন্দ্রনাথ রায় বলেন, কাজের শুরুতেই ঠিকাদার রতন চৌধুরী রাস্তাটি ভেকু দ্বারা মাটি কেটে দু’পাশ ২-৩ ফুট উঁচু করেছে। কয়েক দিনের মাঝে মাটিকাটা সম্পন্ন করে দীর্ঘদিন আর ঠিকাদারের খবর নেই। এখন তো রাস্তাটি সম্পূর্ণ অচল। বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এখনো কাজ শুরু হলো না। রাস্তাটি দিয়ে উপজেলা সদরের সঙ্গে অভয়নগর, খাগুরিয়া, বকচর, উত্তর বকচর, বিলবকচর, মহারাজপুর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের যোগাযোগ মাধ্যম। রাস্তাটি অচল কৃষকসহ শ্রমজীবী মানুষ খুব কষ্টে আছে।
শুধুই তাই নয় আমতলা, ভীমনগর, পাইককান্দি এলাকার অনেকেরই এই মাঠে জমি আছে, তাদের ফসল নিয়ে বিপাকে আছেন। আশা করি সংশ্লিষ্ট দপ্তর বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করবেন।  ঠিকাদার চৌধুরী এন্টাপ্রাইজের কর্ণধার রতন চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে আবহাওয়া খারাপ। বালি পাওয়া যাচ্ছে না। কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে সেটাও বলা যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু করার নেই।’
বালিয়াকান্দি উপজেলা প্রকৌশলী মো. আলমগীর বাদশা বলেন, একই প্যাকেজে আমতলা থেকে বকচর রাস্তার বিলবকচর মধ্য বকচর এলাকায় ১ কিলোমিটার ও ত্রিলোচনপুর গ্রামে ৮২০ মিটার কাজ চলছে। বিলবকচর এলাকায় রাস্তাটির বেড কেটে বালু ফেলার পর বালুতে কিছু ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। সে কারণে উক্ত স্থানের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়। পরবর্তীতে বালু পরিবর্তন করে ঠিকাদারকে কাজ শেষ করার জন্য তাগাদা দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ২০% কাজ শেষ হয়েছে, আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।    
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, রাস্তার কিছু কাজ করে বন্ধ করে রাখা হলে মানুষের দুর্ভোগ হয়। উপজেলা প্রকৌশলীকে ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জরুরি ভিতিত্তে কাজ সমাধানের জন্য বলা হয়েছে। আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status