পঞ্চগড়ে সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে জমি নিয়ে সংঘর্ষ আহত ১০

বিরোধীয় জমি নিয়ে আবারো জাতীয় পার্টির এক সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে ৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত রোববার বিকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের নালাগঞ্জ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুই পক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দাখিল করলেও এখনো পর্যন্ত কোনো এজাহার মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়নি। নালাগঞ্জ গ্রামের মোসলেহার রহমান বলেন, সদর উপজেলার সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবার রহমান প্রধানের পূর্বপুরুষরা ১৯৬০ সালের ২০শে জুলাই পাঁচজন অংশীদারের সমন্বয়ে প্রায় ১৮৯ একর জমি নিয়ে নালাগঞ্জ এলাকায় তাদের পৈত্রিক সম্পত্তির ওপর গয়েশপুর এগ্রিকালচারাল ফার্ম কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি ফার্ম চালু করেন। ১৯৬২ সালে ফার্মটি ৮টি খতিয়ানে এসএ রেকর্ড হয়। ২০১০ সালে একই এলাকার লোকমান হোসেন গং গয়েশপুর এগ্রিকালচারাল ফার্মের বিরুদ্ধে পঞ্চগড় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে একটি বাটোয়ারা মামলা দায়ের করে। ওই মামলাটি চলমান অবস্থায় ২০১৩ সালের ১০ই অক্টোবর লোকমান হোসেন গং সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও বর্তমানে নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মেজর (অব.) সোহেল রানার কাছে ১০.২৫ একর জমি বিক্রি করেন। মেজর রানা লোকজন নিয়ে বেশ কয়েকবার ওই জমি দখলে নিতে যান। এ নিয়ে আমরা গত ১১ই জুলাই পঞ্চগড় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করি। এরইমধ্যে গত রোববার বিকালে মেজর রানা তার লোকজন নিয়ে আবারো জমি দখল করতে আসে।

আমরা বাধা দিলে মেজর রানার নির্দেশে তার লোকজন আমাদের ওপর আক্রমণ করে। এ সময় প্রয়াত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুবার রহমান প্রধানের স্ত্রী মমতাজ দৌলতানা, মেয়ে মারসিয়া রহমান, ভাই মইনুর রহমান ওরফে তরু ও তার স্ত্রী ফরজানা, ভাতিজা মকলেছুর রহমান ও তার বোন মমতাজ বেগমসহ মাহজাবিন মনসুর আহত হয়। এ ঘটনায় গত সোমবার রাতে আমি নিজে বাদী হয়ে পঞ্চগড় সদর থানায় একটি এজাহার দাখিল করেছি। তবে এখন পর্যন্ত ওই এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়নি।
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য মেজর (অব.) সোহেল রানা মুঠোফোনে বলেন, আমি যাদের কাছে জমি কিনেছি তারা ও তাদের প্রতিপক্ষরা একই বংশের। রোববার বিকালে আমি ওই এলাকায় ড্রাইভারসহ গাড়ি রেখে জমিতে রোপণ করা আমন ধান দেখতে যাই। সেখান থেকেই খবর পাই আমার গাড়ি ভাঙচুর ও ড্রাইভারকে মারধর করা হচ্ছে। পরে আমি ঘটনাটি পুলিশকে জানাই। এরইমধ্যে গাড়ি ভাঙচুরের খবর পেয়ে আমি যাদের কাছে জমি কিনেছি তারা সেখানে যায়। পরে তাদের দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে পুলিশ ও স্থানীয় ক্যাম্পের বিজিবির সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই সংঘর্ষ তাদের পারিবারিক। এতে আমার কোনো ভূমিকা নেই। আমার গাড়ি ভাঙচুর করে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য আমি একটি মামলা দায়ের করবো।
পঞ্চগড় সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জামাল হোসেন বলেন, রোবাবার বিকালে নালাগঞ্জ এলাকায় সংঘর্ষের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। এ সময় উভয় পক্ষকে শান্ত করে আহতদের চিকিৎসার জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠাই। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে সংসদ সদস্যকে নিরাপদে নিয়ে আসি। এ ঘটনায় গত সোমবার রাতে মোসলেহার রহমান বাদী হয়ে থানায় একটি এজাহার দিয়েছেন। এছাড়া গতকাল অপর পক্ষের ময়ফুল ইসলাম বাদী হয়ে আরো একটি এজাহার দিয়েছে। আমরা ঘটনা তদন্ত করে দেখছি। তদন্তের পর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।