বাংলারজমিন

বাউফলে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা খুন, গ্রেপ্তার ১১

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

৫ আগস্ট ২০২০, বুধবার, ৮:২৩ পূর্বাহ্ন

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে  পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা মো. রুম্মন  তালুকদার (৩০) ও তার চাচাতো ভাই ইসাত তালুকদার (২৪) নামে ওই ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক সদস্যকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেছে একই দলের নেতাকর্মীরা। গত রোববার সন্ধ্যায় কেশবপুর ইউনিয়নের কেশবপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটেছে। নিহতের স্বজনরা এ হামলার জন্য বাউফল থানা ওসির দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করেন। স্থানীয়রা জানান, কেশবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহম্মেদ লাভলু ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছিলেন। ওই অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করেন ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেশবপুর কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ উদ্দিন পিকু। এ নিয়ে উভয়ের মধ্য বিরোধ সৃষ্টি হয়।  এরপর আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করেন চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন লাভলু। ওই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কোরবানির আগের দিন শুক্রবার সালেহ উদ্দিন পিকু ও লাভলু গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৪ জন আহত হন। এ ঘটনায় সালেহ উদ্দিন পিকুর স্বজনেরা গত শনিবার থানায় মামলা করতে গেলে মামলা নেয়নি ওসি। পরে ওই ঘটনার জের ধরে গত রোববার সন্ধ্যায় কেশবপুর বাজারে নবী আলীর চায়ের দোকানের সামনে চেয়ারম্যান লাভলুর সমর্থক রফিক বেপারী রাসেল, নুরু ও ইব্রাহিমের নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জনের একটি সশস্ত্র দল সালেহ উদ্দিন পিকুর ছোট ভাই রুম্মন তালুকদার (৩০) ও তার চাচাতো ভাই ইসাত তালুকদার (২৪) ওপর হামলা চালায়। এ সময়ে তাদেরকে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে ঘটনাস্থলেই রুম্মন ও ইসাতের মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। পরে রাত ৮টার দিকে তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে দুজনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। নিহত রুম্মনের বোন জেবুন্নেছা অনি অভিযোগ করেন, বাউফল থানার ওসি ওই দিন মামলা নিলে জোড়া খুনের ঘটনা নাও ঘটতে পারতো। মামলা না নিয়ে ওসি দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। নিহতের ভাই সালেহ উদ্দিন পিকু বলেন, কেশবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন লাভলুর নির্দেশেই এই জোড়া খুন সংঘটিত হয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন জানান, ওই বিরোধ নিষ্পত্তি করতে দলের উপজেলা পর্যায়ে কোনো নেতা হস্তক্ষেপ করেননি। ফলে এই বিরোধ চলমান ছিল। আর এর জের ধরেই এই জোড়া খুন সংঘটিত হয়েছে।

সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার বাউফল সার্কেল মো. ফারুক হোসেন  সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাহের, নুরুসহ ১১ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে যে বা যারা জড়িত থাকুক না কেন তাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গত সোমবার সকালে পটুয়াখালী মর্গে পাঠানো হয়েছে। এদিকে গত সোমবার বিকাল সাড়ে ৫টায় কেশবপুর কলেজ মাঠে নামাজে জানাজা শেষে কেশবপুর গ্রামে  পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে রুম্মনকে এবং ভরিপাশা গ্রামে ইসাতের লাশ দাফন করা হয়েছে। নামাজে জানাযায় সাবেক চিফ হুইপ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আসম ফিরোজ  উপস্থিত ছিলেন। এ সময়ে জানাজা অনুষ্ঠানে গত শুক্রবারের ঘটনায় থানায় মামলা না নেয়ার তদবির করায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব হাওলাদারকে লাঞ্ছিত করেন নিজ দলীয় ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।
অপরদিকে এ ঘটনায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর। তিনি কেশবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন লাভলুকে দল থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আসম ফিরোজ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব হাওলাদারকে। সঙ্গে সঙ্গে এই অভ্যন্তরীণ কোন্দল এতদিনে কেন দূর করা হয়নি আগামী সাতদিনের মধ্যে তার কারণ দর্শাতেও বলেছেন তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status