অনলাইন

করোনাকালে ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাদ্য পরিহার করার পরামর্শ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

৩১ জুলাই ২০২০, শুক্রবার, ৮:৫৭ পূর্বাহ্ন

করোনাকালে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য পুষ্টি বিষয়ক এক নির্দেশনায় দিয়েছে বিশ্ব সংস্থা। এতে সংস্থাটি করোনা প্রাদুর্ভাবের সময় শিল্প উৎপাদিত ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার পরিহার করার পরামর্শ দিয়েছে। উচ্চমাত্রায় এ ধরণের খাবার গ্রহণের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে। ৩৪ শতাংশ মৃত্যুর ঝু্ঁকি বাড়িয়ে দেয় এ খাবার।
এদিকে ট্রান্সফ্যাট এর কারণে দেশের মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও তাদের সুরক্ষার জন্য কোনো নীতিমালা নেই বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই ধরনের অসম্পৃক্ত চর্বি সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্ট ফুড, স্ন্যাক্স, তেলে ভাজা খাবার, হিমায়িত পিজ্জা, কুকি, মার্জারিন ও স্প্রেডস বা মাখিয়ে খাবার মিশ্রণে পাওয়া যায়।
খাবারে ট্রান্সফ্যাটের অনিয়ন্ত্রিত মাত্রা, মোড়কে ট্রান্সফ্যাটের পরিমাণ উল্লেখ এবং চিহ্নিতকরণের বাধ্যবাধকতা না থাকায় সার্বিক পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। জাঙ্ক ফুড এবং বেকারি পণ্যের উপর মানুষের অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা ট্রান্সফ্যাটের স্বাস্থ্য ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে তুলছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাট একটি নীরব ঘাতক। যার মূল উৎস পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল বা পিএইচও যা সাধারণত ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামে পরিচিত। ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার রক্তের এলডিএল বা ”খারাপ কোলেস্টেরল” বৃদ্ধি করে, অপরদিকে এইচডিএল বা ”ভালো কোলেস্টেরল”-এর মাত্রা কমিয়ে দেয়। অতিরিক্ত ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণে খারাপ কোলেস্টেরল রক্তবাহী ধমনিতে জমা হয়ে রক্তচলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ। বাংলাদেশে প্রতিবছর ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে হৃদরোগজনিত কারণে। ২০১০ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে অন্তত ৮০০০ মানুষের মৃত্যুর কারণ হিসেবে উচ্চ মাত্রার ট্রান্সফ্যাট গ্রহণ দায়ি।

ট্রান্স ফ্যাটের স্বাস্থ্য ক্ষতি থেকে সকল মানুষকে সুরক্ষার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২৩ সালের মধ্যে শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাট মুক্ত বিশ্ব অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এই লক্ষ্য অর্জনে সংস্থাটি ২০১৮ সালে অ্যাকশন প্যাকেজ ঘোষণা করে যেখানে খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট নির্মূলে সরকার কিভাবে কাজ করবে তার নির্দেশনা রয়েছে। ইতিমধ্যে ভারত, থাইল্যান্ড, ব্রাজিল, তুরস্কসহ পৃথিবীর ৩০টিরও বেশি দেশ খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও বাংলাদেশ অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে।

এ বিষয়ে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর বাংলাদেশ এর কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, হৃদরোগসহ সকল অসংক্রামক ব্যাধি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। উচ্চমাত্রায় ট্রান্স ফ্যাট গ্রহনের কারণে সার্বিকভাবে মৃত্যুঝুঁকি ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, একজন ব্যক্তির দৈনিক ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের পরিমাণ হওয়া উচিত মোট খাদ্যশক্তির ১ শতাংশের কম, অর্থাৎ দৈনিক ২০০০ ক্যালোরির ডায়েটে তা হতে হবে ২ দশমিক ২ গ্রামের চেয়েও কম। ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার পরিহার করার একমাত্র পথ হলো সচেতনতা। তাই সচেতনতাই পারে আপনাকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ মাত্রা ২ শতাংশে নামিয়ে আনার বিষয়ে গত জানুয়ারি মাসে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ বিষয়ে গঠিত ১০ সদস্যের একটি টেকনিক্যাল কমিটি কাজ শুরু করলেও করোনাভাইরাসের প্রকোপে পিছিয়ে পড়েছে নীতিমালা চূড়ান্তকরণ প্রক্রিয়া।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য সহযোগী অধ্যাপক আবু আহমেদ শামীম বলেন, ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ মাত্রা নির্ধারনে আমাদের কাজ অনেক দূর এগোলেও করোনার কারণে নীতিমালা আটকে রয়েছে। এই করোনা সময়ে আমাদের কোনো মিটিং হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এটি হচ্ছে না বলে মনে করি। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে খুব দ্রুত এটি হয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভবিষ্যতে এধরনের মহামারি থেকে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি হৃদরোগ ঝুঁকি কমাতে অনতিবিলম্বে খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা নির্ধারণ করা জরুরি। এলক্ষ্যে দ্রুততার সঙ্গে নীতিমালা চূড়ান্ত করার তাগিদ দিয়েছেন তারা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status