প্রথম পাতা

পল্লবী থানায় বিস্ফোরণ, আহত ৫

এক নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল বোমা বহনকারীদের

স্টাফ রিপোর্টার

৩০ জুলাই ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:২০ পূর্বাহ্ন

রাজধানীর পল্লবী থানায় বোমা বিস্ফোরণে জড়িতরা ভাড়াটে খুনি। তাদের টার্গেট ছিল স্থানীয় একজন রাজনীতিক। প্রভাবশালী ওই নেতাকে হত্যা করতে চেয়েছিল তারা। গতকাল ভোরে পল্লবী থানায় বোমা বিস্ফোরণের পর গ্রেপ্তার তিনজনকে বেলা ২টায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আজ তাদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাইবে পুলিশ। পল্লবী এলাকার এক স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাকে টার্গেট করে বোমা তৈরি করেছিল সন্ত্রাসীরা। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করতে তৎপরতা চালাচ্ছিল। মানবজমিনকে  এই তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন। তিনি বলেন, লোকাল এক লিডারকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। বোমা বহনকারী তিনজনকে পল্লবীর কবরস্থান থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি ও একটি ডিভাইস উদ্ধার করা হয়। যা দেখতে ওয়েট মেশিনের মতো। জব্দকৃত অস্ত্রসহ তাদের থানায় নিয়ে যাওয়ার পর বিস্ফোরণ ঘটে। থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) ইমরানুল ইসলামের দ্বিতীয় তলার রুমে ওয়েট মেশিনটি রাখার পর বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় চার পুলিশ সদস্য ও একজন সিভিল গুরুতর আহত হন। আহতরা হলেন, পল্লবী থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) ইমরানুল ইসলাম, এসআই সজীব খান, পিএসআই অঙ্কুশ কুমার দাস, পিএসআই রুমি তাব্রেজ হায়দার ও রিয়াজুল (সিভিল)।
পুলিশ সদস্যরা জানান, বিকট শব্দে ওয়েট মেশিনটি বিস্ফোরিত হয়। মুহূর্তের মধ্যে পুলিশ সদস্যরা চিৎকার করে ওঠেন। চেয়ার উড়ে যায়। রক্তে ভেসে যায় কক্ষটি। গতকাল থানা ভবন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ছয়তলা ওই ভবনের দ্বিতীয় তলার পরিদর্শক (অপারেশন) ইমরানুল ইসলামের রুমের জানালার কাচ ভেঙে গেছে। ছয়তলা থানা ভবনের সামনে রাস্তা। একপাশে নির্মাণাধীন ভবন, অন্য পাশে সরু গলি। পেছনে বাসা-বাড়ি। বিস্ফোরণের পরপর থানা ভবনজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বিকাল পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়া থানায় কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। র‌্যাব, ডিবি ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
বিস্ফোরণে আহত রুমি ও রিয়াদ ঢাকা  মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ইমরানুল ও সজীব ঢাকা  মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। অঙ্কুর জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি আবাসিক সার্জন আলাউদ্দিন জানান, রুমির বাঁ হাতে স্প্লিনটারের আঘাত রয়েছে। রিয়াদের হাতে আঘাত আছে। তার শরীরও ঝলসে গেছে। ইমরানুলের পায়ে স্প্লিন্টারের আঘাত ও সজীবের কানে শব্দের আঘাত লেগেছে। এ ছাড়া অঙ্কুরের চোখে আঘাত লেগেছে। তাকে জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। আহত সবাই আশঙ্কামুক্ত বলে জানান তিনি।
এই ঘটনার পর সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, স্থানীয় একটি অপরাধীচক্র কোনো অপরাধ সংঘটনের চেষ্টা করছিল। এই সংবাদটি জানার পর পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। এরপরে ওই বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। তিনি বলেন, আধাঘণ্টার মধ্যে দুটি শব্দ হয়েছে। আমাদের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এক্সপার্টরা ডিভাইসগুলো স্টাডি করার পরে এক্সপ্লোসিভ সমৃদ্ধ দুটি ডিভাইস নিষ্ক্রিয় করেছে। ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, পল্লবী থানা পুলিশ ও মিরপুরের ডিবির নেতৃত্বে একটা টিম কাজ করছিল কয়েকদিন ধরে। এ অঞ্চলে মাঝে মাঝে ক্রাইম হয় নানা ধরনের। একটি গ্রুপ ক্রাইম করতে পারে বা ক্রাইম হতে পারে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত রাত ২টার দিকে কালশী কবরস্থানের দিকে পুলিশের একটি টিম যায়। সেখানে একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ সমবেত হয়ে ক্রাইম করার পরিকল্পনা করছে, এমন খবরে পল্লবী থানা পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা হলেন- রফিকুল ইসলাম, শহীদুল ও  মোশারফ। সেখানে আরো কয়েকজন ছিল যারা পালিয়ে যায়। সেখান থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। একটি ডিভাইস উদ্ধার করা হয় যেটি ওয়েট  মেশিনের মতো।
কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ওজন মেশিনের মতো কোনো জিনিস কেন তাদের কাছে থাকবে, সেটা কী, প্রশ্ন ওঠায় রাতেই বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকে খবর দেয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট থানায় চলে আসে। তারা ওই ডিভাইসটিকে স্টাডি করে। সেটা দেখার পর তারা আরও বিশদভাবে ডিভাইসগুলো খতিয়ে দেখতে আরো কিছু পর্যবেক্ষণ মেশিনসহ আসার জন্য ইউনিটের অন্য সহকর্মীদের খবর দেয়া হয়। তারা যখন আরো পর্যবেক্ষণ মেশিন নিয়ে আসছিল তখন থানার ভেতর একটি বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণ ঘটার পরে আমাদের চার পুলিশ সদস্যসহ পাঁচ সদস্য আহত হন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, এক্সপার্ট টিম এসে পৌঁছানোর পর তারা পুরো এলাকা সিকিউরড করে। প্রাথমিক স্তর থেকে তারা ধারণা দেয়, আরো কিছু বিস্ফোরক অবিস্ফোরিত থাকতে পারে। এরপর আরো দুটি অবিস্ফোরিত এক্সপ্লোসিভ নিষ্ক্রিয় করে থানা ভবন নিরাপদ করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় আরো জানান, এ ঘটনায় পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, কাউন্টার টেরোরিজম কাজ করছে। যেহেতু এখানে বোম সদৃশ্য জিনিস পাওয়া গেছে। সেটা আসলেই এক্সপ্লোসিভ। এসব কেন, কোত্থেকে এলো, কী উদ্দেশ্যে এলো সেটা নিয়ে আমাদের তদন্ত চলছে। কেন কী কাজে এটি ব্যবহার হতে পারে তা আমরা তদন্ত করে দেখছি। যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
তবে তারা কোনো জঙ্গি গ্রুপের সদস্য না দাবি করে কৃষ্ণপদ রায় বলেন, এখন পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, যাদের আমরা গ্রেপ্তার করেছি তারা কোনো জঙ্গি গ্রুপের সদস্য নয়। তারা কোনো না কোনো ক্রিমিনাল গ্রুপের সদস্য। ওজন  মেশিনসদৃশ বস্তুতে যা ছিল সেটার  ভেতরেই এই এক্সপ্লোসিভগুলো ছিল। তারা একটি অপরাধ করার পরিকল্পনা করছিল। সেটা হতে পারে কাউকে খুন করার জন্য বা কোনো সম্পত্তি দখল সংক্রান্ত বা ডাকাতি করার জন্য। আমরা তদন্তে সন্তোষজনক পর্যায়ে এলে এই ব্যাপারে  বিস্তারিত বলতে পারবো।
সূত্রে জানা গেছে, একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে জড়িত গ্রেপ্তারকৃত তিনজন। স্থানীয় এক কাউন্সিলরের মদতে বেপরোয়া ছিল তারা। অস্ত্র, বোমা ক্রয়-বিক্রয় থেকে শুরু করে, জবর, দখল, হামলা, খুন-খারাবিতে জড়িত রয়েছে এই গ্রুপটি। গ্রেপ্তারকৃত শহীদুল ইসলাম মিরপুর-১১ এর সি ব্লকের ১৪ নম্বর লাইনের ১২ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা, মোশাররফের বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ি ও রফিক মিরপুর-১২/দ এর ১৭/১৮ নম্বর বাসায় থাকতো। ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তাদের বিরুদ্ধে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে একটি অপরাধ সংঘটনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। স্থানীয় এক নেতাকে হত্যার করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। রিমান্ডে নিয়ে এ বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
গতকাল রাতে ডিএমপি’র এডিসি (মিডিয়া) নাদিয়া ফারজানা জানান, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। আসামিদের আজ আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status