শেষের পাতা

উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেও রেকর্ড শূন্য

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে

৩০ জুলাই ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:১৫ পূর্বাহ্ন

জুুন মাসে চট্টগ্রাম জেলায় করোনা আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা ১১৭ জন। ওই মাসে একদিনে মৃতের সংখ্যা ৬ জন পর্যন্ত উঠেছিল। জুলাই মাসের শুরুতেও এ পরিস্থিতি চলমান ছিল। কিন্তু মাঝামাঝি সময় থেকে হঠাৎ কমে আসে মৃত্যুর সংখ্যা। গত ১০-১২ দিনের বেশির ভাগই তো ছিল মৃত্যুশূন্য দিন। ২৯শে জুলাই বুধবারও  তেমনি একটি মৃত্যুশূন্য দিনে ১৪ হাজার ৯৩ জনে দাঁড়ালো চট্টগ্রাম জেলার করোনা আক্রান্ত শনাক্তের সংখ্যা। আর মৃত্যু সেই ২২৯ জনে। গত সোমবারও ছিল এ রেকর্ড। ওইদিন মৃত্যুর সংখ্যা ছিল একজন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার মৃত্যুর সংখ্যা ছিল দু’জন। এর আগে কয়েকদিন ধরে মৃত্যুশূন্য ছিল। তাতে নগরীর জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কারণ চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে নানা অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, শয্যা সংকট, তদুপরি হাসপাতালে ভর্তি সংকটের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ায় চরম অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল। ফুঁসে উঠেছিল চট্টগ্রামের মানুষ। এ নিয়ে হয়েছিল হাসপাতাল ঘেরাও, মানববন্ধনের মতো নানা কর্মসূচিও।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু থেমে নেই চট্টগ্রামে। এরমধ্যে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ইয়েলো জোনে গত ৭ দিনে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৪১ জন। যা করোনার রেকর্ডে নেই।
তবে মৃত্যুর এ তথ্য রয়েছে চমেক হাসপাতালের ইয়েলো জোনের রেজিস্টার্ড খাতায়। যা এই জোনে কর্মরত চিকিৎসক সানজিদা আক্তার বলেন, করোনা শনাক্ত না হওয়ায় তাদের মৃত্যু করোনার রেকর্ডে নেই। তবে করোনা উপসর্গ নিয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে- এটাই সত্য।  
তিনি বলেন, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর শুধুমাত্র করোনার উপসর্গ নয়। বয়সজনিত কারণেও এ উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে করোনা সন্দেহে তাদের করোনা ওয়ার্ডের ইয়েলো  জোনে ভর্তিও করা হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। যদিও কারোরই করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি। তবে একই সময়ে করোনা ওয়ার্ডের ইয়েলো জোন থেকে মোট ৬০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
জানা যায়, ৫৫ শয্যার ইয়েলো জোনে প্রায় সময়ই দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকে। বুধবার ১১৩ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। তবে তাদের অর্ধেকের ঠাঁই মিলেছে মেঝেতে। অভিযোগ উঠেছে, নমুনা পরীক্ষা না হওয়ায় ইয়েলো জোনে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও দিন দিন বাড়ছে।
এ বিষয়ে চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম বলেন, ইয়েলো জোনে মৃত্যু একটু বেশি। রেড জোনে ওই রকম না। তবে সঠিক সংখ্যাটা আমার কাছে নেই। এগুলোর আপটুডেট ইনফরমেশন  রেজিস্টার্ড খাতায় রয়েছে।
এদিকে একই তথ্য মিলেছে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডেও। গত ১০ দিনে করোনা উপসর্গ নিয়ে এ হাসপাতালে অনেক রোগীর মৃত্যুর কথা জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে অনেক চেষ্টার পরও দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত্যুর সংখ্যা নিশ্চিত করে বলতে অনীহা প্রকাশ করেন।   
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, করোনা উপসর্গ মানে করোনা আক্রান্ত নয়। করোনা আক্রান্ত সন্দেহ হলে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। করোনা শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত কোনো রোগীকে তো আর করোনায় আক্রান্ত বলতে পারি না। ফলে উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেও রেকর্ডে তা আসছে না।

নমুনা পরীক্ষা কেন হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোথায় হচ্ছে না। সন্দেহ হলেই নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এখন তো নমুনার জটও নাই। নমুনা দিলেই ২-৩ দিনের মধ্যে রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে নমুনা পরীক্ষা ও আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য যে তোড়জোড় ছিল চট্টগ্রামে, জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে তা প্রায় ঝিমিয়ে পড়েছে। মে মাসে নগরীর বিআইআইডি ল্যাব, চমেক হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৬৫০ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
জুন মাসে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সাইয়েন্স ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কক্সবাজার মেডিকেল ল্যাবসহ সবক’টি ল্যাব মিলে দ্বিগুণ নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। এরপরও নমুনা জট লেগে যায়। ফলে চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৭ হাজার নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়। কিন্তু জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে নমুনা পরীক্ষা আবার অর্ধেকে নেমে আসে। এতে কমে যায় শনাক্তও। সবক’টি ল্যাব থেকে বলা হয় নমুনা সংকটের কথা। যা রহস্যজনক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status