বাংলারজমিন

মৌলভীবাজারে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অনুসন্ধান, প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের খোঁজ মিলেনি

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

২৮ জুলাই ২০২০, মঙ্গলবার, ৫:৩৪ পূর্বাহ্ন

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অনুসন্ধানী দল সরজমিন ঘুরে মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলার সাগরনালে প্রাচীনকালে চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল- এমন বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে রাজনগরের সাগরদিঘির পাড় থেকে কয়েকশ বছর পুরানো কবরের অস্তিত্ব এবং পুকুর ঘাটের ইট সংগ্রহ করে নিয়েছে। প্রাচীন চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান অনুসন্ধানে তিন দিন বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধ্যান চালায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমানের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি দল।
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার উত্তর সাগরনাল গ্রামে প্রাচীন চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান রয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় এ ধরণের সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের চিঠির ভিত্তিতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের প্রতিনিধি দল গত ২৫-২৭ জুলাই জেলার ভাটেরাটিলা, জুড়ীর সাগরনাল এবং রাজনগরের পশ্চিমভাগ গ্রামে অনুসন্ধান ও সার্ভে করে। অনুসন্ধানী টিম প্রাচীন চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান সাগরনাল কিংবা জেলার অন্য কোথাও নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে কুলাউড়ার কলিমাবাদ গ্রামের ভাটেরা টিলা ও রাজনগর উপজেলার পশ্চিমভাগ গ্রামে আদি ঐতিহাসিক নির্দশন রয়েছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে নিশ্চিত হয়েছেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। এ সময় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ভাটেরাটিলা এবং রাজনগরের পশ্চিমভাগ গ্রাম থেকে মাটির পাতিলের কিছু পুরানো ভাঙ্গা অংশ সংগ্রহ করেছেন। কুলাউড়ার ভাটেরাটিলা এবং রাজনগরে খনন কার্যক্রম পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নির্দশন পাওয়া যেতে পারে বলে প্রতিনিধি দলের প্রধান ড. আতাউর রহমান আশা প্রকাশ করেছেন। তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন আগামী শুস্ক মৌসুমে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে এ দু’টি স্থানে খনন কার্যক্রম চালানো হবে। রাজনগরের পশ্চিমভাগ গ্রামের অশীতিপর বৃদ্ধ পরেশ পাল অস্পষ্ট কণ্ঠে জানান ৬০’র দশকের প্রথম দিকে পুকুর খননের সময় সংস্কৃত ভাষায় লেখা একটি শিলালিপিটি উদ্ধার করা হয়। সিলেট থেকে প্রকাশিত যুগভেরী পত্রিকার সম্পাদক আমিনূর রশীদ চৌধুরী (বর্তমানে মরহুম) শিলালিপিটি সেখান থেকে সংগ্রহ করে তৎকালীন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়। এরপর শিলালিপিটি জাতীয় জাদুঘরে রাখা হয়।
এদিকে রাজনগর সদর ইউনিয়নের গড়গাঁও গ্রামে কুতুব শাহ (র.) এর মাজারের পাশে রাজা সুবিদ নারায়ণ চৌধুরীর খনন করা কমলা রাণীর দীঘির পুরানো সান বাধানো ঘাটের (পরে সংস্কার করা) পাশ থেকে (পরে সংস্কার করা) পুরানো ইটের সন্ধান পেয়েছে। অন্যদিকে ওই দীঘির পশ্চিম ও দক্ষিণপাড়ে একাধিক কবর রয়েছে। তার মধ্যে দক্ষিণ পাড়ে বিশেষ আকৃতির দু’টি কবরের সন্ধান পেয়েছেন অনুসন্ধানী দলের সদস্যরা। এ কবর দু’টি রাজ পরিবারের সদস্যদের কবর হতে পারে বলে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ধারণা করছেন। কমলা রাণীর দীঘিটি দেড়শতাধিক বিঘা ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। এই দীঘির আদি নিদর্শন আবিস্কার করে একটি পর্যটন স্পট এবং রাজপরিবারের অতীত ঐতিহ্য সংরক্ষণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
রাজনগরের গড়গাঁও গ্রামের ফজলুল হক নীরু জানান কমলা রাণীর দীঘি কেন্দ্রিক অনেক ঐতিহাসিক মিত চালু রয়েছে। রাজা সুবিদ নারায়ণ চৌধুরীর স্মৃতি বিজরিত কমলা রাণীর দীঘিটি আজও কালের স্বাক্ষী হিসেবে রয়েছে। দীঘির চারি পাশের পাড়ে খনন কার্যক্রম চালানো হলে আরও অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন পাওয়া যেতে পারে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও সিলেটের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান বলেন, সংগ্রহ করা বিভিন্ন আলামতে অনুমান করা যাচ্ছে কুলাউড়ার ভাটেরাটিলা এবং রাজনগরের পশ্চিমভাগ গ্রামে অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় তিনি আরও জানান, কাঙ্খিত প্রাচীন চন্দ্রপুর বিশ^বিদ্যালয়ের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি।
পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ফিল্ড অফিসার শাহীন আলম, সহকারী কাস্টোডিয়ান হাফিজুর রহমান, গষেণা সহকারী ওমর ফারুক ও সার্ভেয়ার চাইথোয়াই মার্মা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status