বিশ্বজমিন

বাংলাদেশি রুপেন, নেপালি ১৭ নারী, অতঃপর...

মানবজমিন ডেস্ক

১৬ জুলাই ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন

সংযুক্ত আরব আমিরাতে আলোচনায় এক বাংলাদেশি রুপেন। তিনি একজন রিক্রুটমেন্ট এজেন্ট। সম্প্রতি ১৭ জন নেপালি নারী তার পাল্লায় পড়েন। আমিরাতে পৌঁছার পর তাদের পাসপোর্ট নিয়ে নেন রুপেন। তাদেরকে আটকে রাখা হয়। সেখান থেকে পালিয়েছেন তিন নারী। নেপালের কাঠমান্ডু পোস্টের কাছে তারা বর্ণনা করেছেন তাদের দুর্ভোগের কথা। বাকিরা এখনও রয়েছেন একটি এজেন্সির কাছে জিম্মি। কাঠমান্ডু পোস্ট লিখেছে, দেশজুড়ে লকডাউন দেয়ার ঠিক এক সপ্তাহ আগে ১৭ই মার্চ ১৭ জন নেপালি নারী সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবু ধাবি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করেন। তাদের যাওয়ার কথা ছিল কুয়েত ও ইরাকে। সেখানে তাদের কাজ দেয়ার কথা। তার আগে আবু ধাবি ছিল তাদের যাত্রাবিরতি। তার আগে ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে তারা আবু ধাবি গিয়ে পৌঁছেন। সেখানে তাদেরকে গ্রহণ করেন বাংলাদেশি রুপেন। তিনি তাদের রিক্রুটমেন্ট এজেন্ট। সেখানে ওইসব নারীকে রুপেন জানান, কুয়েত ও ইরাকে ফ্লাইট চালু না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে কয়েকদিন আবু ধাবিতে থাকতে হবে। নেপালের এসব নারী আমিরাতে পৌঁছার দুদিনের মধ্যে পারস্য উপসাগরীয় দেশ ১৯ শে মার্চ থেকে সব ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়।
নেপালি এসব নারীর মধ্যে একজন বিমলা। তিনি রুপেন সম্পর্কে বলেন, কুয়েত এবং ইরাকে ভ্রমণ এবং ভিসা সম্পর্কিত ডকুমেন্ট প্রস্তুত করার জন্য আমাদের পাসপোর্ট নিয়ে নেয় রুপেন। অনলাইন অ্যাপের মাধ্যমে বিমলা বলেন, পরের দু’মাস আমাদেরকে রুপেনের এপার্টমেন্টে আটকে রাখা হয়। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাত করোনা ভাইরাসের জন্য লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি করে। বাড়ানো হয় ফ্লাইটের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ। ফলে বিমলা ও অন্য নারীদের সামনে কোনো আশার আলো দেখা যায় নি। এরই এক পর্যায়ে তাদেরকে রুপেন এই বলে আশ্বস্ত করেন যে, আমিরাতেই তাদের জন্য তিনি গৃহপরিচারিকার কাজ জুটিয়ে দিতে পারেন। ফলে তিনি নেপালি ওই ১৭ নারীকে নিয়ে যান একটি রিক্রুটমেন্ট এজেন্সিতে। এর নাম আল মাশরিক আল হাদি ট্রাভেলস। এখানে যাওয়ার পর তাদের অবস্থা আরো খারাপের দিকে যায়।
বিমলা বলেন, আমাদেরকে ওই এজেন্সির কাছে হস্তান্তরের পরে, তারা আমাদেরকে একটি খালি কক্ষে আটকে রাখে। আমাদেরকে বাইরে যেতে দেয়া হতো না। দিনে একবার দেয়া হতো খাবার। মাঝে মাঝেই আমাদেরকে বেদম প্রহার করা হতো। খাঁচায় আটকানো পশুর মতো ব্যবহার করা হতো আমাদের সঙ্গে। বিমলার মতে, এই এজেন্সিতে শুধু তারাই নন, আরো অনেক নারী জিম্মি আছেন।
তিনি বলেন, ওই কক্ষে বিভিন্ন দেশের আরো ৮ জন নারী ছিলেন। তাদেরকে আটকে রাখা হয়েছে। গৃহকর্মে আমাদেরকে কোনো ব্যক্তি নিয়োগ না করা পর্যন্ত ওই কক্ষের ভিতরেই অবস্থান করতে বলা হয়েছিল। সেখানে ১৫ দিন বন্দি থাকার পর ১লা জুন বিমলা ও অন্য দু’জন নেপালি নারী পালাতে সক্ষম হন। অচেনা অজানা শহরে সৌভাগ্যবশত তারা একজন নেপালি ট্যাক্সি চালক পেয়ে যান। তার কাছে সাহায্য চান তারা। ওই ট্যাক্সি চালক বিমলাদেরকে নিয়ে যান নন-রেসিডেন্ট নেপাল এসোসিয়েশনের সংযুক্ত আরব আমিরাত চ্যাপ্টারের কাছে। বর্তমানে ওই তিন নারী তাদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। অন্যদিকে বাকি ১৪ জন নারী ওই রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির কাছে জিম্মি রয়েছেন।
বিমলা এবং অন্য দুই নারী এখন নেপালে ফেরার জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু তাদের কাছে নেই পাসপোর্ট এবং কোনো ডকুমেন্ট। এসব রয়েছে ওই এজেন্সির কাছে। তা উদ্ধার করতে পারছেন না তারা। নন-রেসিডেন্ট নেপাল এসোসিয়েশনের সংযুক্ত আরব আমিরাত চ্যাপ্টারের আঞ্চলিক সমন্বয় পরিষদের সভাপতি উজ্বল ঢাকাল বলেন, ওই এজেন্সি তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নিয়েছে। আমরা তা ফেরত চেয়েছি। কিন্তু বিনিময়ে তারা আমাদের কাছে ৪২ হাজার দিরহাম দাবি করেছে। তিনি আরো অভিযোগ করেন, এসব নারী আবু ধাবিতে অবস্থিত নেপালি দূতাবাস থেকে কোনোই সহযোগিতা পান নি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status