প্রথম পাতা

বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করতেন শাহেদ

আল-আমিন

১৫ জুলাই ২০২০, বুধবার, ৯:৩১ পূর্বাহ্ন

প্রতারক জগতের মাফিয়া ডন শাহেদের প্রতারণার জাল ছিল সর্বত্র। কোনো প্রটোকলেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কাতারে না পড়লেও প্রতারণার মাধ্যমে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ নিয়মিত ব্যবহার করতেন তিনি। বেশ কয়েকবার এই লাউঞ্জ ব্যবহার করে  তিনি বিদেশে যান বলে মানবজমিন-এর হাতে তথ্য এসেছে। এ ছাড়া তিনি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটেও চলাচলের সময় ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করতেন বলে বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে। তার ওই লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতি নেই এই বিষয়টি সেখানকার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাকে জানালে বিভিন্ন রকম হুমকি দিতেন শাহেদ। তার সঙ্গে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সম্পর্ক রয়েছে তাদের সরাসরি ফোন দিতেন। কখনও লাউড স্পিকারে কথা বলতেন। এতে ভয় পেয়ে কর্মকর্তারা আর ঝামেলায় যেতেন না। ভিআইপি লাউঞ্জে প্রবেশের নিয়ম হচ্ছে নির্ধারিত যাত্রী এবং পরিবারের ২ সদস্য ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। কিন্তু, সেখানে কোনো নিয়মের বালাই ছিল না তার ক্ষেত্রে। তার সঙ্গে আরো অনেকে সেখানে যেতেন। দেহ ও লাগেজ তল্লাশি করলে তিনি চেঁচামেচি করতেন।
মানবজমিন-এর হাতে আসা একটি নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, শাহেদ গত ২০শে নভেম্বর রাত ১১টা ৩০ মিনিটে শাহ্‌জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে সিঙ্গাপুরে গেছেন। চলতি বছরে তিনি ৬ বার বিদেশে গেছেন। আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি সবসময় বেসরকারি এয়ারলাইন্স ব্যবহার করতেন। অবৈধভাবে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতার মদত আছে বলে জানা গেছে। তার মধ্যে একজনের নাম জানা গেছে। তিনি হলেন খুলনা অঞ্চলের ক্ষমতাসীন দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা। শাহেদ এখনো পলাতক আছেন। তাকে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুঁজছে। তাকে গ্রেপ্তার করা গেলে কার প্ররোচনায় তিনি ওই ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করেছেন তা জানা যাবে।
গত ৭ই জুলাই রাজধানীর উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় র‌্যাব’র ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় ভুয়া করোনা পরীক্ষার প্রমাণ পাওয়া যায় সেখানে। এ ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রতারণার অভিযোগে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে।  
শাহেদের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে এ বিষয়ে শাহ্‌জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এসএম তৌহিদুল আহসান গতকাল মানবজমিনকে জানান, প্রটোকলের বাইরে কাউকে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করতে দেয়া হয় না। তবে যদি কোনো মন্ত্রণালয়ের অনুরোধ থাকে তাহলে তাকে ব্যবহার করতে দেয়া হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে র‌্যাব শাহেদের পাসপোর্ট জব্দ করেছে। ওই পাসপোর্টে দেখা গেছে, তিনি ৩টি দেশ বেশি ভ্রমণ করেছেন।  সেগুলো হলো- থাইল্যান্ড, ভারত ও সিঙ্গাপুর।
একটি নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ১৮ই মার্চ রাত ১০ টা ৩০ মিনিটে তিনি ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইটে করে সিঙ্গাপুরে যান। ওই বছরের ১২ই এপ্রিল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে রিজেন্ট এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে সিঙ্গাপুরে যান।
সূত্র জানায়, এছাড়াও তিনি ২০১৯ সালের ৮ই মে রাত ১ টা ১৫ মিনিটে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে থাইএয়ার ওয়েজের একটি ফ্লাইটে করে থাইল্যান্ডে যান। গত বছরের ৬ই জুন রাত ১১ টা ৫৫ মিনিটে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে সিঙ্গাপুর গেছেন। সূত্র জানায়, গত বছরের ২৪শে আগস্ট সকাল ৯ টা ৫৫ মিনিটে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইটে করে থাইল্যান্ডে যান তিনি।  এছাড়াও গত বছরের ২০শে নভেম্বর সকাল ১১ টা ৩০ মিনিটে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে রিজেন্ট এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন।

প্রতারণার জগতে শাহেদ আইডল: র‌্যাব
রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান শাহেদ প্রতারণার জগতে আইডল বলে মনে করছে র‌্যাব। গতকাল দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় র‌্যাব সদর দপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, ভিআইপিদের সঙ্গে শাহেদের ছবির বিষয়ে আমাদের ধারণা থাকা দরকার। কারও সঙ্গে কারও ছবি থাকা মানে এই নয় যে, তিনি তার পৃষ্ঠপোষক। যে কারও সঙ্গে বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মানুষ ছবি তুলতে চাইবেই। এটা খুবই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তার মানে এই নয় যে, ওই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি শাহেদকে একজন প্রতারক জেনেও তার সঙ্গে ছবি তুলেছেন। রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যখন কারও সঙ্গে ছবি তোলেন সেটি  নিহায়েত সৌজন্যবশত। এর পেছনে যদি কারও পৃষ্ঠপোষকতা থাকে, সেটি নিশ্চয়ই তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত করে খতিয়ে দেখবেন। তিনি আরো জানান, আমাদের সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত আছে যাতে সে কোনোভাবেই দেশ ত্যাগ করতে না পারে। তাই সে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে পারেনি। তিনি আরো জানান, সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাবের কাছে আরো অভিযোগ রয়েছে, রিজেন্ট কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের জাল সনদ দেয়া হতো। এতে শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়েছে। যে সনদগুলো শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়েছে, তা জাল। এই সনদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যক্তিজীবন ও শিক্ষা জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। একটি বিষয় স্পষ্ট করে সবাইকে জানাতে চাই, শাহেদের পাসপোর্ট আমাদের কাছে। আমরা জব্দ করেছি। সে যদি দেশ ত্যাগ করতে চায়, তাহলে সেটা তার জন্য অবৈধ পন্থা হবে। সে যাতে কোনোভাবেই দেশত্যাগ না করতে পারে, সেজন্য আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ রয়েছে। শাহেদ ছাড়াও অন্য আসামিদের ধরতেও অভিযান চলছে। তিনি আরো জানান, শাহেদ গানম্যান নিয়ে চলাফেরা করতো। আমরা তার গানম্যান ও তাদের অস্ত্রের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। তার পাঁচ থেকে সাতজনের গানম্যানের দল ছিল। তাদের সম্পর্কে অভিযোগ পেয়েছি। তাদের অস্ত্রের উৎস ও অস্ত্রের বৈধতা খতিয়ে দেখছি। আশিক বিল্লাহ আরো জানান, শাহেদ পাওনাদারদের যে চেক দিতো, তাতে একেক চেকে একেক স্বাক্ষর করতো। এই জালিয়াতির ঘটনায় অভিজ্ঞ ব্যাংকাররাও অবাক হয়েছেন। তাই পাওনাদাররা ব্যাংক থেকে ওই চেক দিয়ে টাকা তুলতে পারেনি। সব চেক ব্যাংকে ডিসঅনার হয়েছে। সারা দেশে তার বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধশত মামলার খবর পাওয়া গেছে। শাহেদের মতো যদি কেউ প্রতারণার কাজে যুক্ত হন এবং যদি র‌্যাবের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status