বাংলারজমিন
সিলেটে লাখো মানুষ পানিবন্দি দুর্ভোগ
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৫ জুলাই ২০২০, বুধবার, ৭:৫৯ পূর্বাহ্ন
করোনার সঙ্গে বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেট। নগরীর তালতলা পয়েন্ট। সুরমার পানি উপচে ছড়া ভর্তি। এই পানিতে তলিয়ে গেছে তালতলা এলাকা। গুলশান সেন্টারেও উঠে গেছে পানি। তালতলা-জামতলা সড়কের অর্ধেক অংশও পানির নিচে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- গত তিনদিন ধরে এলাকায় পানি। এটি জলাবদ্ধতা নয়, বন্যার পানি। সুরমার পানি না কমলে এই পানি কমবে না। বরং সুরমায় পানি বাড়ার কারণে দিনদিন পানি বাড়ছে। একই অবস্থা নগরীর উপশহরেও। সুরমা নদীর পানি উপচে ডুবে গেছে উপশহরের অর্ধেক এলাকা। বি,ডি এবং ই-ব্লকের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি। যতরপুর এলাকা দিয়ে নগরীর সুবহানীঘাট এলাকা পর্যন্ত চলে এসেছে পানি। সুবহানীঘাটের বাসিন্দারা জানিয়েছেন- সুবহানীঘাট-যতরপুর হয়ে যে রাস্তাটি উপশহর পর্যন্ত গেছে সেই রাস্তার বেশির ভাগ এলাকা পানির নিচে। নগরীর ১০নম্বর ও ২৩নম্বর ওয়ার্ডেও পানি ঢুকেছে। খোদ সিলেট নগরীতেই এখন ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে- সিলেট বরইকান্দি পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সুরমা তীরের পানির লেবেল অনেক এলাকায় তলিয়ে গেছে। এ কারণে নগরীতেও বন্যা দেখা দিয়েছে। উজানের ঢল অব্যাহত থাকার কারণে সিলেটে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। লাখো মানুষ ইতিমধ্যে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার, খাদিমনগর, হাটখোলা, উমাইরগাঁওসহ কয়েকটি এলাকায় পানি বেড়েছে। এ কারণে পানিতে তলিয়ে গেছে বাদাঘাট সড়কও। নৌকা চলছে রাস্তার উপর দিয়ে। গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট সদর এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এ দু’টি উপজেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জের অর্ধেক এলাকা এবং সিলেটের কানাইঘাটেরও বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। কানাইঘাটে ভেঙে গেছে সুরমার ডাইক। নদী তীরবর্তী এলাকায় পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। গবাদিপশুর খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে- টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীর তিনটি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার, সিলেট বরইকান্দি পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার ও সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার ও কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গোয়াইনঘাটের ইউএনও মো. নাজমুস সাকিব জানিয়েছেন- ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যার্তদের আশ্রয়ের জন্য ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি পানিবন্দি মানুষের জন্য জরুরি ত্রাণ সহায়তা চেয়ে ডিসির কার্যালয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও সুমন আচার্য্য জানিয়েছেন- এরইমধ্যে উপজেলার ৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মসজিদে মাইকিং করে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বন্যার পানিতে আটকে পড়ার আগেই যেন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ শহীদুজ্জামান সরকার জানিয়েছেন- সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীর বেশ কয়েকটি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে, টানা তিনদিন পর গতকাল বিকালে রোদের দেখা পেয়েছেন সিলেটের মানুষ। বিকালে বৃষ্টি ছিলো না। ফলে কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন মানুষ। তবে- পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করতে পারে। এতে দুর্ভোগ বাড়বে।