বাংলারজমিন

‘পঞ্চগড়ে এমপি’র বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ’

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

১৩ জুলাই ২০২০, সোমবার, ৯:০৪ পূর্বাহ্ন

জাতীয় পার্টির এক সংসদ সদস্যের নেতৃত্বে জালিয়াত চক্র জাল কাগজপত্র তৈরি করে জমি দখল ও মিথ্যা মামলার পাশাপাশি তাদের নানা অপতৎপরতায় এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারসহ এলাকার লোকজন বছরের পর বছর ধরে হয়রানি ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা সংসদ সদস্য সোহেল রানাসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। গত শনিবার দুপুরে পঞ্চগড় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী লোকজন এসব দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে বলা হয়, নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মো. সোহেল রানা আদালতে বিচারাধীন মামলা থাকার পাশাপাশি করোনাকালীন সময়েও নিজে উপস্থিত থেকে তার লোকজন নিয়ে জমি দখলের চেষ্টা করছে। এতে বাধা দিলে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে। পঞ্চগড় সদর উপজেলার প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মাহাবুবার রহমান দুলুর স্ত্রী মমতাজ দৌলতানা, ভাই ময়নুর রহমান প্রধান তরু, মাহশিকুর রহমান টুকু, মসলেহার রহমান ফুলু, ভাতিজা মোজাফর রহমানের পক্ষে মখলেছুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।  
অভিযোগ মতে, ১৯৬০ সালের ২০শে জুলাই ৫ জন অংশিদারের সমন্বয়ে সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের গয়েশপুর এগ্রিকালচার ফার্ম কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি ফার্ম করা হয়। এ ফার্মের মোট জমি ১৮৯ একর। ওয়ারিশের সংখ্যা ৪৪ জন। ম্যানেজিং পার্টনার ছিলেন মশিউর রহমান। ১৯৬২ সালে ফার্মটি ৮টি খতিয়ানে এসএ রেকর্ড হয়। সে থেকে খাজনা প্রদান করে ভোগ দখল করে আসছে প্রকৃত মালিকরা। কিন্তু ২০১০ সালে একই এলাকার লোকমান হোসেন গং জাল কাগজপত্র তৈরি করে গয়েশপুর এগ্রিকালচারাল ফার্মের বিরুদ্ধে পঞ্চগড় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ৩৪/১০ অন্য মামলা দায়ের করেন। বাদীর তদবিরের অভাবে মামলাটি খারিজ হলে আদালতে নতুন করে ফ্রেস আরজি দাখিল করা হয়। আরজিতে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে দাখিল করায় মামলাটি খারিজ করে নিষ্পত্তি করা হয়। পরবর্তীতে বাদীপক্ষ মামলাটি চালু করার জন্য হাইকোর্টে আবেদন করলে হাইকোর্ট মামলাটি জেলা যুগ্ম জজ আদালতে চালু করে ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন। মামলার কাগজপত্র সঠিক না থাকায় পরাজয়ের ভয়ে পুন:দাখিল সাপেক্ষে মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করলে আদালত মামলাটি প্রত্যাহারের আদেশ দেন। মামলাটি চলমান অবস্থায় সুবিধা করতে না পেরে লোকমান হোসেন গং সাবেক সেনা কর্মকর্তা, পঞ্চগড় জেম জুট লিমিটেডের কর্মকর্তা ও বর্তমান জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মো. সোহেল রানার অনুকূলে ১০.২৫ একর জমি ২০১৩ সালের ১০ই অক্টোবর ভূয়া দাখিলা, ভূয়া ওয়ারিশান ও  খতিয়ান উপস্থাপন করে বিক্রয় করেন। ১৯৬২ সালের এসএ রেকর্ডে বাদীপক্ষের দাবিকৃত সম্পদে অংশিদারিত্ব না থাকায় ইউপি চেয়ারম্যান জমি রেজিস্ট্রি না করার জন্য টুনিরহাট সাব রেজিস্ট্রারকে লিখিতভাবে অনুরোধ করেন। বিষয়টি আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতকে অবহিত করা হয়। আদালত মামলা চলমান অবস্থায় জমি বিক্রি, হস্তান্তর আইন পরিপন্থী হওয়ায় বাদীপক্ষ ও ক্রেতাকে কারণ দর্শাও নোটিশ প্রদান করেন। জমির ক্রেতা সোহেল রানা ২০১৩ সালের ১০ই নভেম্বর বাদীপক্ষের সহযোগিতায় জমি দখলের চেষ্টা করলে আমরা বাধা দেই। কিন্তু বাদীপক্ষ একজন বিধবা মহিলার ঘরে আগুন লাগিয়ে ১৫ জনের নামে ওই বছরের ১৪ই নভেম্বর একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি জেলা জজ আদালতে বিচারাধীন। পরবর্তীতে মেজর (অব.) মো. সোহেল রানা সংসদ সদস্যের প্রভাব ও মদদে লোকমান হোসেন গং পুনরায় নতুনভাবে জাল কাগজপত্র তৈরি করে যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ৮৬/২০১৯ মামলা আনয়ণ করেন। যা চলমান রয়েছে। এমন অবস্থায় এ মামলায় হেরে যাওয়ার ভয়ে গত ২৮শে মে, ৩রা জুন ও ৬ই জুলাই এমপি সোহেল রানা তার বাহিনী নিয়ে জমিতে প্রবেশের চেষ্টা করেন। আর তাকে সহায়তা করেন স্থানীয় বছির আহমেদ খান, তাহেরুল ইসলাম, রাশেদুজ্জামান, জাকিউল মজিদুর রহমান ও ময়ফুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন সহযোগী। এসব সহযোগী সংসদ সদস্য সোহেল রানার প্রভাব খাটিয়ে লোকমান হোসেন গংকে সহযোগিতা করে পুনরায় জমি দখলের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। মহামারি করোনাভাইরাসে দিশাহারা মানুষ। ঠিক সেই সময়ে একজন সংসদ সদস্য ভূমি দখলসহ আইন গর্হিত কাজে লিপ্ত তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমাদের বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি ও হয়রানি করে আমাদের জীবনকে দূর্বিষহ করে তুলেছে। এ ঘটনায় পঞ্চগড় সদর থানায় একাধিক জিডি ও ফৌজদারি মামলা এবং প্রসিকিউশন মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য অব. মেজর মো. সোহেল রানা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ১০ বছর আগে আমি ওই জমি কিনেছি। ওই জমি নিয়ে শরিকদের মধ্যে মামলা চলছে। ওই মামলায় আমি কোনো অংশিদার না। আমার কেনা জমি আমি দখল নিতেই পারি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status