প্রথম পাতা

পাপুলে দূষিত রাজনীতি লক্ষ্মীপুর থেকে কুয়েত

মিজানুর রহমান

১২ জুলাই ২০২০, রবিবার, ৯:২৪ পূর্বাহ্ন

কুয়েতে এই মুহূর্তে আলোচিত ‘বাংলাদেশি ডেপুটি কাজী পাপুল।’ পুরো নাম শহিদ ইসলাম পাপুল। লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত ওই আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রীও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের এমপি। কুয়েতের ইতিহাসে মানবপাচার, মানি লন্ডারিং ও প্রতারণার সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর এবং তাৎপর্যপূর্ণ  মামলা হিসেবে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার কাজী পাপুল কেস। মাফিয়া বস হিসেবেও কুখ্যাতি পেয়েছেন কাজী পাপুল। ‘বাঙালি’ বলে ডাক পড়ে যাওয়া বহুল আলোচিত এমপি পাপুলের গ্রেপ্তার, জিজ্ঞাসাবাদে তার স্বীকারোক্তি এবং তার কুকর্মের সহযোগী কুয়েতের এমপি, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাসহ অন্তত ৩৩ জনের নাম এসেছে, যা নিয়ে দেশটির পার্লামেন্টে ও রাজনীতিতে তোলপাড় চলছে। পাপুলের সহযোগী অন্তত ৮ জন এখন সিআইডি’র কাস্টডিতে। বড় কর্তাদের চাকরি নেই, তাদের সময় কাটছে আদালতের বারান্দায়। সর্বেশেষ যে খবর এসেছে তাতে পাপুলের কাছ থেকে মিলিয়ন দিনার ঘুষ নিয়ে তাকে রক্ষার দায়িত্ব নেয়া লে. জেনারেল মাজান আল জারাহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ক’দিন আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা কুয়েতের উপ-প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাকে স্বরাষ্ট্রের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। সামরিক বিভাগের চাকরি থেকেও বরখাস্তের সুপারিশ করা হয়েছে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের যাকে দিয়ে পাপুল জাল ডিমান্ড নোট বা কাগজপত্র তৈরি করে কুয়েতে হাজার হাজার শ্রমিক পাচার করেছেন তাকেও চাকরি থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। ওই কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিআইডি। পাপুলের সহযোগী হিসেবে কাজ করা এক নারীকেও তার মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য, সিডি এবং ডকুমেন্টের হদিস মিলেছে। ওই নারীর দেয়া তথ্য মতে পাপুলের ব্যবহার করা গাড়ির লকার থেকে মানি লন্ডারিং ও ঘুষের অর্থ লেনদেনের প্রমাণপত্র উদ্ধার করে সিআইডি। কিন্তু এতো ঘটনার পরও ঢাকাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি কুয়েত সরকার। কেবলমাত্র তারা বাংলাদেশের সংসদে ‘পাপুল কুয়েতের নাগরিক হলে এমপি পদ থাকবে না’- এমন কথা বলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। ওয়েবসাইটে প্রচারিত বার্তায় তারা স্পষ্ট করেছে পাপুল তাদের নাগরিক নয়। পাপুলকাণ্ডে সারা মধ্যপ্রাচ্য তথা দুনিয়ায় আলোচিত হলেও ঢাকাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না বলায় বিস্ময় প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। মন্ত্রী এখন মানছেন যে, আসলে কুয়েত বাংলাদেশকে ইচ্ছা করেই কোনো তথ্য শেয়ার করছে না। তবে তারা বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছে, যার কারণে তার নাগরিকত্ব নিয়ে কয়েকটি মিডিয়ায় ভুল তথ্য প্রচার এবং পার্লামেন্টে আলোচনার পরপরই প্রতিক্রিয়া দিয়েছে।

কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালাম বরাবরই সাফাই গাইছেন অভিযুক্ত পাপুলের পক্ষে। তিনি তাকে ক্লিন সার্টিফিকেট সংগ্রহও করে দিয়েছে, যখন ফেব্রুয়ারিতে সিআইডি’র অভিযানের মুখে দেশটি থেকে পালিয়ে ঢাকায় এসে নিজেকে রক্ষা করছিলেন। ‘বাংলাদেশি এমপি কুয়েত থেকে লাপাত্তা’- শীর্ষক কুয়েত সিটির সংবাদপত্রে রিপোর্ট প্রকাশের পর রাষ্ট্রদূত ঢাকায় মনগড়া রিপোর্ট করেছিলেন। যাতে বিভ্রান্তিতে পড়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। তার সূত্র ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন তখন এক সংবাদ সম্মেলেন এটাকে ‘ফেক নিউজ’ দাবি করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলের। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এখনও সেই ঘটনার জন্য বিব্রত। তিনি কাল মানবজমিনকে বলেন, পাপুল আমাদের মান-মর্যাদা শেষ করে দিয়েছেন। রাষ্ট্রদূতও  বিষয়টি  শুরুতে হয়তো বুঝে উঠতে পারেননি দাবি করে মন্ত্রী বলেন, যাক তার মেয়াদ শেষ। নতুন যিনি যাচ্ছেন তিনি নতুন করে সবকিছু দেখবেন-বুঝবেন। রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে পাপুলকে অনৈতিক সহযোগিতার অভিযোগ এসেছে বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে। বলা হয়েছে, ইমিউনিটি অ্যান্ড প্রিভিলেজ প্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে কুয়েত হয়তো আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দাখিল করতে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কুয়েতের অভিযোগ আসুক, এলে নিশ্চয়ই তদন্ত হবে। মন্ত্রীর দাবি, এমপি পাপুল এবং তার স্ত্রী সংসদে তার কলিগ কিন্তু কোনোদিন তাদের সঙ্গে কথা হয়নি। কুয়েতের সংবাদ মাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশের পর তিনি তাদের সম্পর্কে জেনেছেন।  উল্লেখ্য, মানব ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে গত ৬ই জুন কুয়েতের মুশরেক এলাকার বাসা থেকে সিআইডি কাজী শহিদ ইসলামকে আটক করে। তদন্ত কর্মকর্তাদের টানা জিজ্ঞাসাবাদে তিনি কুয়েতের রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে রেসিডেন্ট পারমিটের ব্যবসার কথা স্বীকার করেন। এর ফলে মানব ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেন আর রেসিডেন্ট পারমিট ব্যবসার অভিযোগে মামলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে তার পক্ষে কয়েক দফা জামিন চাওয়া হয়েছে, কিন্তু আদালত তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন। আগামী ১৬ই জুলাইয়ের মধ্যে তার আটকাদেশ বিষয়ে আদালতের নতুন নির্দেশনা আসবে বলে জানা গেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status