বাংলারজমিন

সুনামগঞ্জে দ্বিতীয় দফা বন্যা, বিপর্যস্ত জেলাবাসী

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

১২ জুলাই ২০২০, রবিবার, ৭:৫৬ পূর্বাহ্ন

দুই সপ্তাহের মধ্যে আবারও সুনামগঞ্জ বন্যায় আক্রান্ত। আগের দফার বন্যার পানি সব জায়গা থেকে নামতে শুরুর মুহূর্তে আবারও বন্যায় বিপর্যস্ত জেলাবাসী। গত দুইদিনে সুনামগঞ্জ ও ভারতের মেঘালয় অংশে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় ঢলের পানিতে ডুবছে জেলার বিভিন্ন স্থান। জেলা শহরের বাসা বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় মানুষজন চরম বিপাকে পড়েছেন। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার কয়েক লক্ষাধিক মানুষ। অতি বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বড়পাড়া, তেঘরিয়া, নবীনগর, ষোলঘর, উকিলপাড়া, মোহাম্মদপুর, সাহেবঘাট এলাকার বাড়িঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। অনেকের ঘরে ২/৩ ফুট পানি উঠেছে। বন্যা কবলিত পৌরবাসী জানান, প্রথম দফার বন্যায় ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আবারও বন্যা। এতে মানুষজনের কষ্টের শেষ নেই। নিম্ন আয়ের মানুষজন বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। রাস্তাঘাট পানির নিচে থাকায় মানুষ এবং যান চলাচলেও সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। শহরের বেশির ভাগ এলাকায় পানি থাকায় প্রয়োজনেও মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। একইভাবে জেলার সুনামগঞ্জ সদর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক এবং জামালগঞ্জ উপজেলায় বন্যায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। প্রথম দফার বন্যায় সুনামগঞ্জ সদরের সঙ্গে জামালগঞ্জ, তাহিরপুর ও ছাতকের এই তিন উপজেলার সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা যায়, জেলার ১১টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভার ৪২ হাজার ৫৭টি পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাহিরপুর উপজেলা। আর কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দিরাই। ৭৯ আশ্রয়কেন্দ্রে ২৩৭টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। জেলার ৮১ ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ২৮০ মেট্রিক টন চাল, ১৬ লাখ ৯৪ হাজার ২৫০ টাকা ও ৩০৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। শিশু খাদ্য, ঢেউটিন, পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেট ও প্রয়োজনীয় ওষুধ  সরবরাহ করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ভারতের মেঘালয় অংশে ৫৫১ মি.মি. ও সুনামগঞ্জে ১৩৩ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে। এবং সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৬ সে.মি. এবং ছাতকে ১৬৬ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাবিবুর রহমান বলেন, আগামী কয়েক দিন আরো ভারী থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে। সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সুরমা নদীর দু’কূল ছাপিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে গ্রামগুলোয়। পানিতে সুনামগঞ্জ-সাচনা, সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়কের ২০টি জায়গা তলিয়ে গেছে। পানির তোড়ে কালর্ভাটগুলোর সংযোগ সড়ক থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। সদর উপজেলা গৌরারং ইউনিয়নের লালপুর গ্রামের জামাল উদ্দিন বলেন, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দু’বার বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে এলাকা। প্রথম দফা বন্যার পানি এখনও ঠিকমতো সরেনি।
এরই মধ্যে দ্বিতীয় দফা বন্যা।
হানিফ মিয়া বলেন,  সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর সড়কের দেড় কিলোমিটার জায়গা দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে। পানি তোড়ে সড়কে সৃষ্টি হয়েছে শত শত গর্ত। গর্তে আটকে যাচ্ছে গাড়ি। সড়কটি খুব নিচু করে তৈরি করায় প্রতিবছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের চেয়াম্যান রণজিৎ চৌধুরী রাজন বলেন, করোনার প্রভাবে নিম্ন আয়ের লোকজনের আয় রোজগার নেই। এর মধ্যে দুই দফা বন্যা। দরিদ্র মানুষের জন্য সহায়তা কার্যক্রম আরো বাড়ানো প্রয়োজন।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখ্‌ত বলেন, দ্রুত বেগে পানি বাড়ছে। পৌর কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতির ওপর সতর্ক নজর রাখছে। যেখানে যা প্রয়োজন তার সবটুকু করা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status