বিশ্বজমিন

শত কোটি ডলারের প্রতারণা: দুবাই থেকে ইন্সটাগ্রাম তারকাকে এফবিআই’র ‘অপহরণ’

মানবজমিন ডেস্ক

১০ জুলাই ২০২০, শুক্রবার, ৮:৪৩ পূর্বাহ্ন

কোটি কোটি ডলারের প্রতারণা ও অর্থ পাচারের দায়ে অভিযুক্ত এক নাইজেরিয়ান ব্যক্তিকে দুবাই থেকে অপহরণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফবিআই)। এমন চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন ওই ব্যক্তির আইনজীবী। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
খবরে বলা হয়, কথিত অপহৃত ব্যক্তিও যেনতেন কেউ নন। র‍্যামন আব্বাস নামে ওই ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইন্সটাগ্রামের বড় তারকা। সেখানে তিনি পরিচিত রে হাশপাপি ছদ্মনামে। তার বিলাসী জীবনের নিত্যনতুন আপডেট জানতে তাকে অনুসরণ করে প্রায় ২৫ লাখ অনুসারী। র‍্যামন আব্বাস ও একটি সাইবার ডাকাতির ঘটনায় সন্দেহভাজন ওলালেকান জ্যাকব পোনলে ওরফে উডবেরি নামে আরেক ব্যক্তিকে দুবাই থেকে জুনে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা সেখানেই থাকতেন। ৩ জুলাই তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর একটি আদালতে হাজির করা হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বন্দী প্রত্যাবর্তন চুক্তি নেই। কিন্তু দুবাই পুলিশ বলছে, তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রত্যাবর্তন করা হয়েছে। আবার যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন,  র‍্যামন আব্বাসকে দুবাই থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাকে প্রত্যাবর্তন করা হয়নি। তাহলে তিনি কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের হেফাজতে গেলেন, সেই ব্যাপারে ওই মুখপাত্র কোনো জবাব দেননি।

র‍্যামন  আব্বাসের আইনজীবী যা বলছেন
আব্বাসের আইনজীবী গাল পিসেৎস্কি বিবিসিকে বলেছেন যে, তার মক্কেল কোনো অপরাধী নন। তিনি বৈধভাবেই অর্থ আয় করেছেন। তিনি বলেন, ‘তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একজন ‘ইনফ্লুয়েন্সার’, যার কিনা লাখ লাখ অনুসারী। লাখ লাখ মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করে, ভালোবাসে। তিনিও তাদের ভালোবাসেন। এখনকার সমাজে এটিই একটি ব্যবসা।’ আইনজীবী স্বীকার করেন যে, তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে শতভাগ পরিচিত নন, তবে তিনি জানেন যে, এখন মানুষ সেখান থেকে এভাবেই অর্থ আয় করে। শিকাগো-ভিত্তিক এই আইনজীবী যুক্তি দেখিয়েছেন যে, প্রমোশনের জন্য বিভিন্ন ডিজাইন ব্র্যান্ড তাকে অর্থ দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে যে, আমেরিকার আদালতে লম্বা বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবে এই মামলা।
এফবিআই’র অভিযোগ, ৩৭ বছর বয়সী আব্বাস প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি ডলার পাচার করার ষড়যন্ত্র করছিলেন।
আব্বাসের আইনজীবীর যুক্তি, দুবাই থেকে তার মক্কেলকে তুলে আনার কোনো আইনি কর্তৃত্ব যুক্তরাষ্ট্রের নেই। তার ভাষ্য, ‘আমার মতে, কোনো আইনি প্রক্রিয়া ব্যতিত আমার মক্কেলকে দুবাই থেকে অপহরণ করে এফবিআই ও সরকার এখানে আইনবহির্ভুত কাজ করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোনো প্রত্যাবর্তন হয়নি। কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আদালতে কোনো নথিপত্র জমা দেওয়া হয়নি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন। সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের তাকে তুলে নেয়ার কোনো কর্তৃত্ব নেই।’
ওদিকে দুবাই পুলিশ এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছে যে, দুই ব্যক্তিকে প্রত্যাবর্তন করানোর জন্য এফবিআই পরিচালক তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এ বিষয়ে মার্কিন বিচার মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ‘তারা (দুবাই পুলিশ) কেন একে প্রত্যাবর্তন বললো, সেই ব্যাপারে তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে হবে।’ আব্বাসকে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে হাজির করানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এফবিআই এজেন্টরা এই সপ্তাহে আব্বাসকে নিজেদের হেফাজতে নেয় ও যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসে।’ কিন্তু কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা হয়েছে, সেই ব্যাপারে কোনো তথ্য দেয়া হয়নি।
আব্বাসের আইনজীবী পিসেৎস্কি বলেন, ‘যদি দুবাই তাকে বহিষ্কৃত করতে চাইতো, তাহলে তারা তাকে নাইজেরিয়ায় ফেরত পাঠাতো। আমি এই ধরণের কিছু কখনও শুনিনি।’
আব্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী?
রে হাশপাপি নামে ইতিমধ্যেই ইন্সটাগ্রামে জনপ্রিয় ছিলেন  র‍্যামন  আব্বাস। সেখানে তিনি নিজের বিলাসবহুল জীবনের দৈনন্দিন দিক শেয়ার করতেন। তার নাটকীয় গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়ায় তিনি আরও নতুন ১ লাখ অনুসারী পেয়েছেন।
গ্রেপ্তারের সময় দুবাই পুলিশ বলেছিল, তারা তার কাছে ৪ কোটি ডলার নগদ অর্থ, ৬৮ লাখ ডলার মূল্যের ১৩টি বিলাসবহুল গাড়ি, ২১টি কম্পিউটার, ৪৭টি স্মার্টফোন এবং তার প্রতারণার শিকার প্রায় ২০ লাখ ভুক্তভোগীর ঠিকানা পেয়েছে।
তার বিরুদ্ধে আদালতে দায়ের হওয়া এক অভিযোগে বলা হয়, আব্বাস সাইবার অপরাধীদের একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের নেতৃত্বে ছিলেন। তাদের টার্গেট’র মধ্যে ছিল একটি মার্কিন আইনি প্রতিষ্ঠান, একটি বিদেশী ব্যাংক ও ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের একটি ক্লাব। তারা ইমেইল প্রতারণা চালাতো। সেখানে বলা হয়, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি বিদেশী আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাইবার হামলার মাধ্যমে ১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার চুরি করে তা পাচার করার ষড়যন্ত্র করেন আব্বাস। ধারণা করা হয়, ওই ব্যাংকটি মাল্টার একটি ব্যাংক। এফবিআই জানায়, এই স্ক্যামের শিকার হয়ে ২০১৯ সালেই শুধু অনেক প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানি ১৭০ কোটি ডলার খুইয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status