শেষের পাতা

সিলেটে অনলাইনে পশুর হাটের প্রস্তুতি

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

৯ জুলাই ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:২০ পূর্বাহ্ন

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এবার অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে বিশেষ করে যাতে প্রবাসী ক্রেতারা সুযোগ পান সেই বিষয়টি মাথায় রেখে সাজানো হচ্ছে পরিকল্পনা। কাজও চলছে। সিলেট জেলা পশুসম্পদ কর্মকর্তাসহ ওয়েবসাইটে লক্ষাধিক গরুর ছবি সহ বিবরণ থাকবে। থাকবে মালিক কিংবা খামারির নাম-ঠিকানা। একটি মূল্যও দেয়া থাকবে। পশুর বর্ণনা দেখে ক্রেতারা উৎসাহী হলে খামারে কিংবা বাড়িতে গিয়েই কিনে আনতে পারবেন কোরবানির পশু। সিলেট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে তারা অনলাইনের কাজ শুরু করেছেন। খামারি কিংবা ব্যক্তিগত পর্যায়ে পশু বিক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে অনলাইনে পশুর হাটে আগ্রহী নয় সিলেটের প্রধান পশুর হাট কাজিরবাজারের কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি হচ্ছে  কোরবানির পশু অনলাইনে বিক্রির সুযোগ কম। কারণ কোরবানির পশু  ক্রেতারা পছন্দসই কেনেন। সুতরাং সবচেয়ে ভালো মানের পশু কিনেই তারা কোরবানি দেন। প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট হওয়ার কারণে এখানে ধনাঢ্যদের বসবাস বেশি। প্রবাসীরা প্রবাসে বসবাস করলেও নিজ নিজ বাড়িতে স্বজনদের মাধ্যমে পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। সরকারি হিসাব মতে এবার সিলেট জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ১ লাখ ৯৮ হাজারের মতো। করোনার কারণে ১০ থেকে ১৫ ভাগ পশু কম কোরবানি হতে পারে। এরপরও এত পশু সিলেটে নেই। সিলেট জেলায় সব মিলিয়ে স্থানীয় খামারিদের কাছে থাকা পশুর সংখ্যা হবে এক লাখের মতো। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার তালিকাভুক্ত খামারি হচ্ছে ৪০০ মতো। তাদের কাছে রয়েছে প্রায় ১৬ হাজার পশু। এর বাইরে প্রাণিসম্পদ বিভাগের হিসাব মতে সিলেটে স্থানীয় ভাবে আরো প্রায় ৮৫ হাজার পশু রয়েছে। যে পশুগুলোও অনলাইনে বিক্রির জন্য বিক্রেতারা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কোরবানির সময়কে সামনে রেখে কিছু মৌসুমি খামারিরা রয়েছেন। তাদের কাছেও রয়েছে কয়েক হাজার পশু। গত ৩-৪ মাস থেকে তারা এসব পশুর লালনপালন করছেন। খামারিরা জানিয়েছেন, সিলেটের খামারিরা সব সময়ই অনলাইনে পশু বিক্রির প্রতি ঝুঁকছেন বেশি। এর কারণ পশুকে বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা অনেকেরই দ্বারা সম্ভব হয় না। এজন্য অতিরিক্ত লোকবল ও অর্থ ব্যয় করতে হয়। আর সেজন্য পশুর দামও বেড়ে যায়। এ কারণে অনলাইনে বিক্রি করতে তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। সিলেটের সুরমা এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী শাকিল জামান জানিয়েছেন, ‘সিলেটে এবার অনলাইনে পশুর বিক্রি করতে সরকারিভাবে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমরা সম্পৃক্ত হচ্ছি। খামারিরা নিজ থেকে উদ্যোগী হয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে সব তথ্য দিচ্ছি।’ তিনি জানান, ‘তার খামারেই কয়েকটি পশু রয়েছে। এগুলো তিনি এবার বিক্রি করবেন। এভাবে প্রতি বছর তারা বিক্রি করেন। এজন্য নিজেরাই ফেসবুক কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে পশু বিক্রি করেন। বাজারে গিয়ে বিক্রি করা তাদের ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। ফলে সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। খামারিরা এবার নিজ থেকে পশুর দাম সহনশীল রাখার চেষ্টা করছেন বলেও জানান তিনি।’ সিলেট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. কাজী আশরাফুল ইসলাম মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সরকার থেকে নির্দেশনা রয়েছে অনলাইনে পশু বিক্রির কার্যক্রম চালাতে। এ কারণে তারা উদ্যোগী হয়ে ওয়েবসাইট আপডেট করছেন। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সরকারি ওয়েবসাইটে ঢুকে এলাকাভিত্তিক খামারি এবং তাদের পশুর সব তথ্য যে কেউ পেয়ে যাবেন। এবং দেখেশুনে পশু কিনতে পারবেন।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পশু বাজারকেন্দ্রিক যাতে করোনা সংক্রমিত না হয় সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখা। আমরা ইতিমধ্যে সীমান্ত দিয়ে যাতে পরীক্ষা ছাড়া পশু না ঢুকতে পারে সেজন্য বিজিবি’র ঊর্ধ্বতনদের সহযোগিতা চেয়েছি। পাশাপাশি এক শহর কিংবা এলাকায় যাতে বেশি সংখ্যক পশুর হাট না থাকে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলছি। সবাই যার যার অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলেও পশুর হাট থেকে করোনা সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হবে। এরপরও সিলেটের বাইরে থেকে যেসব খামারি সিলেটের হাটে তাদের পশু নিয়ে আসবেন তাদের প্রতি কঠোর মনিটরিং থাকবে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের মেডিকেল টিমের সদস্যরা হাটে দায়িত্ব পালন করবেন।’ এদিকে কোরবানির পশু ক্রয়ে কিছু নিয়ম সিলেটের ক্রেতারা অনেকেই এখনো মেনে চলেন। বাজারে গিয়ে বেছে বেছে পছন্দের পশুটি তারা ক্রয় করে থাকেন। এজন্য তারা বাজার দেখে, দাম বুঝে পশু ক্রয় করতে পারেন। এই সুবিধা কেবল পশুর হাটে পাওয়া সম্ভব। আর পছন্দের পশু নির্বাচনের একমাত্র স্থান হচ্ছে হাট-বাজার। সিলেটের প্রধান পশুরহাট কাজির বাজারের ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন লোলন জানিয়েছেন, ‘কোরবানির পশু অনলাইনে ক্রয় করার সুযোগ কম। এজন্য ক্রেতাকে বাজারে এসে তার পছন্দের পশু ক্রয় করতে হবে। এবার সিলেটের কাজিরবাজারে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারীরা তাদের পশু নিয়ে আসবেন। তাদের সকল সুযোগ-সুবিধা বাজার কর্তৃপক্ষ দেবে। এর বাইরে বাজারে যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পশু বিক্রি করা হয় সেদিকে কঠোর মনিটরিং থাকবে বাজার কর্তৃপক্ষের। এজন্য তারা ক্রেতা, বিক্রেতা এবং প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।’ এদিকে সিলেটসহ সারা দেশের হাটে কোরবানির পশুর একটি থেকে আরেকটির দূরত্ব থাকতে হবে কমপক্ষে পাঁচ ফুট। মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এমন পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পশুর হাট বসানোর জন্য পর্যাপ্ত খোলা জায়গা নির্বাচন, মুখে মাস্ক না থাকলে ক্রেতা-বিক্রেতাকে হাটে প্রবেশ করতে না দেয়া, হাটের প্রবেশ পথে তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণকারী যন্ত্র স্থাপন, শুধুমাত্র স্বাভাবিক তাপমাত্রা (৯৮ দশমিক ৪ ফারেনহাইট) সম্পন্ন ব্যক্তিদের হাটে প্রবেশ করতে দেয়া এবং অনলাইনে কোরবানির পশু কেনাবেচায় উদ্বুদ্ধ করাসহ বিভিন্ন পরামর্শ তৈরি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা। সিলেটসহ সারা দেশের পশুর হাটে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ পরামর্শ ও নির্দেশনা পালিত হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status