বাংলারজমিন
হরিণাকুণ্ডুতে ৩ হাজার বিঘা ফসলি জমি পানির নিচে
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
৭ জুলাই ২০২০, মঙ্গলবার, ৮:৩০ পূর্বাহ্ন
ঝিনাইদহ হরিণাকুণ্ড উপজেলার পায়রাডাঙ্গা গ্রামের মুক্তার হোসেনের মাত্র ২৬ কাঠা জমি ছিল তার বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল। জমিতে যে ধান হতো তাই দিয়ে কোনমতে চলতো তার সারা বছরের খাবার। কিন্তু অবৈধভাবে পুকুর কাটার ফলে তার দু’মুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। মুক্তার হোসেনের মতো হরিণাকুন্ডু উপজেলার ভালকী ও পায়রাডাঙ্গা গ্রামের প্রায় দেড় হাজার পরিবারের স্বপ্ন এখন শেষ হতে চলেছে। এক সময়ের ধানি জমি এখন পানিতে থৈ থৈ করছে। পুকুর কাটার ফলে তিন হাজার বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। উপায়হীন কৃষক পরিবারগুলো প্রতিকার পেতে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক ও হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও ত্বরিত কোন পদক্ষেপ পায়নি ভুক্তভোগীরা। প্রশাসনের এই নীরবতায় পুকুর মালিকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অবৈধভাবে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করলেও প্রশাসনের কর্মকর্তারা এক রকম নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। পায়রাডাঙ্গা গ্রামের আক্তারুজ্জামান জানান, তাদের গ্রামে ৮/১০টি বিল রয়েছে। দুই মৌসুমে এই বিলে বিপুল পরিমাণ ধান উৎপন্ন হতো। কিন্তু পায়রাডাঙ্গা গ্রামের আইয়ূব মন্ডলের ছেলে ডালিম মন্ডল ও জব্বার মন্ডলের ছেলে দেলোয়ার হোসেন দলু মন্ডলসহ আরো কয়েকজন এভাবে এলাকার বিভিন্ন মাঠের ধানি জমিতে ইচ্ছামতো পুকুর কেটেছে। ফলে গোটা বিলে ও ধানি জমির মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামবাসীর ভাষ্যমতে পায়রাডাঙ্গা গ্রামের হাতিশুড়ো, মুচেইখালী, ট্যাবার মাঠ, কাপাশাটিয়া ও সঞ্জেরখালী মাঠ এখন পানির নিচে। সঞ্জেরখালী মাঠে সরকারি জমি ছিল দেড় বিঘা। সেখানে বিল ও খালের সংযোগ স্থানে ছিল একটি ব্রিজ। সেখানে পুকুর কাটায় ব্রিজের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারি রাস্তায় কেউ চলাচল করতে পারছে না। সরকারিভাবে নির্মিত যাত্রী ছাউনিটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সরকারি জমি দখল, সরকারি রাস্তা ও ব্রিজ বন্ধ, সরকারি যাত্রী ছাউনি পরিত্যক্ত ও সরকারি খাল দখল ও বিভিন্ন ধানি জমির মালিকের জমি জোরপূর্বক পুকুর কেটে পরে তা নামমাত্র মূল্যে রেজিস্ট্রি করে নেয়। এতো কিছুর পরও কেন ঝিনাইদহের প্রশাসন দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না- এ নিয়ে গ্রামবাসী প্রশ্ন তুলেছে। তাদের ভাষ্য, বেআইনিভাবে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে ডালিম ও দলু আইন ভঙ্গ করেছেন। সেই সাথে তারা হাজারো মানুষের পেটে লাথি মারতে বিলের মধ্যে পুকুর কেটে চরম অবৈধ ক্ষমতা দেখিয়ে চলেছেন। পুকুর মালিক ডালিম ও দলু জানান, তারা তাদের জমিতে পুকুর কাটছেন। পুকুর কাটার কারণে কোন কৃষকের ক্ষতি হলে তারা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দেবেন। এ ব্যাপারে হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দা নাফিজ সুলতানা জানান, আমি অসুস্থ থাকার কারণে অভিযোগটি পায়নি। তবে জেলা প্রশাসন থেকে আমাকে অবহিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছেন। আমি সরজমিন তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।