বাংলারজমিন

সাইকোলজিক্যাল ফার্স্ট এইড চালুর তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টার

৬ জুলাই ২০২০, সোমবার, ৮:৪১ পূর্বাহ্ন

করোনা পরিস্থিতিতে সাইকোলজিক্যাল ফার্স্ট এইড চালুর তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শনিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরামের নিয়মিত সাপ্তাহিক আয়োজন অনলাইন আলাপচারিতায় অংশ নিয়ে তারা এ তাগিদ দেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড সাইকোথেরাপি বিভাগের অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন নাহার বলেছেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে এখনই সাইকোলজিক্যাল ফার্স্ট এইড চালু করতে হবে। আমরা এখন স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের মধ্যে আছি। ছয় মাস পার হয়ে গেলে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের মধ্যে অনেকে চলে আসবে। এখন থেকেই ফার্স্ট এইড চালু করতে পারলে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার কমানো সম্ভব হবে। আলাপচারিতায় আরো অংশ নেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ ও জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির মেন্টাল হেলথ বিভাগের প্রকল্প পরিচালক ডা. এম তাসদিক হাসান। সঞ্চালনা করেন বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র হেলথ স্পেশালিস্ট ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার। অধ্যাপক ডা. শামসুন নাহার বলেন, ‘এটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে বড় সংকট কাল, এটা সাধারণ স্ট্রেস না। যিনি আক্রান্ত হচ্ছেন তিনি মৃত্যুর কাছাকাছি যাচ্ছেন। কেউ কাছের মানুষকে হারাচ্ছেন। অপরদিকে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারছি না। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও অনিশ্চয়তার কারণে হতাশা-উদ্বিগ্নতা বেড়ে যাচ্ছে, অনেকেই দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। এসবই আমাদের ওপর প্রভাব ফেলছে।’ তিনি বলেন, ‘স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিশুদের জীবনযাপনে বড় ছন্দপতন হয়েছে। তারা বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে পারছে না। যারা একটু বড়, আবেগ কাজ করে, তারা প্রিয়জনদের সঙ্গে মিশতে পারছে না। সেই কারণে তাদের হতাশা-উদ্বিগ্নতা বাড়তে পারে। স্লিপ-সাইকেল চেঞ্জ হয়ে যেতে পারে। কোনো বাচ্চার বাবা-মা কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে থাকলে সেপারেশন অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারে ভুগতে হয়।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট লেভেলে চিকিৎসা শিক্ষা কারিকুলামে মেন্টাল হেলথ নেই বললেই চলে। আমাদের কারিকুলাম উন্নত করা দরকার’। ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের মানসিক চাপটা বেশি। কারণ বাবা-মায়ের মানসিক চাপ তাদের ভেতরে সংক্রমিত হচ্ছে। যারা সরাসরি সেবা দিচ্ছেন, তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর ঘাটতি আছে। কষ্টকর পোশাক পরে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টার কাজ করছেন। তারপরও সামাজিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, স্বীকৃতির অভাব রয়েছে। পরিবারের কেউ সংক্রমিত হলে তারা নিজেদের দায়ী করছেন। তাদের মেন্টাল হেলথ ঠিক রাখার দায়িত্ব টিম লিডারদের। মনে রাখতে হবে, কোভিড-১৯ মোটেই হানড্রেড মিটার রেস না, এটা ম্যারাথন। আমি নিজে সরাসরি আইসিইউতে গিয়ে কথা বলেছি, চিকিৎসকদের মনোবলে ঘাটতি নেই। তবে প্রশাসনের কিছু সিদ্ধান্তের কারণে মানসিক কষ্ট তৈরি হয়েছে। সেই জায়গায় যেন প্রশাসন সচেতন হয়।’ তিনি বলেন, ‘পলিসি লেভেল থেকে মাইন্ড সেট চেঞ্জ করতে না পারলে হবে না। আমাদের পলিসি মেকার যাদের মনে করা হয় সমাজ পরিবর্তনে সহায়ক, তাদের পরিবারের কোনো সদস্যের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হলে হাসপাতালে কিংবা চেম্বারে আসতে চান না। তারা বলেন, রেস্টুরেন্টে চা-কফি খেতে খেতে আমার সন্তানকে দেখেন, এই ব্যারিয়ার আমরা ভাঙতে পারছি না। মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের যেহেতু মেন্টাল হেলথ বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয় না, তাই তারাও আগ্রহী হয় না।’ ডা. এম তাসদিক বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, নারী চিকিৎসকদের স্ট্রেস অনেক বেশি। এটার পেছনে সোশ্যাল, ইকোনমিক্যাল ও পলিটিক্যাল ফ্যাক্টর আছে। তাদের সামাজিক সুরক্ষাও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সোশ্যাল স্টিগমাগুলো দেখা যাচ্ছে, ডাক্তারদের বাসা থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। সেখানেও প্রশ্ন আছে, রাষ্ট্র কেন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে না?’
‘আরেকটি বিষয় ভাবতে হবে, ইতিামধ্যে যারা মানসিক সমস্যায় আছেন, তারা যদি হাসপাতালে যেতে না পারেন তাদের চিকিৎসা পদ্ধতি কী হবে? সব ধরনের ডিসঅ্যাবিলিটি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। অনেক তথ্য যা এখনো বিজ্ঞানসম্মত না, সেগুলো আমরা বিশ্বাস করছি। যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাবে ফেলছে। তাই এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status