খেলা

এনবিআর-এর চিঠি নিয়ে আক্ষেপ শুটারদের

স্পোর্টস রিপোর্টার

৫ জুলাই ২০২০, রবিবার, ৮:১৭ পূর্বাহ্ন

সভাপতি মহাসচিব দ্বন্দ্বে অশান্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের শুটিং। এর প্রভাব পড়েছে শুটারদের পারফরমেন্সে। সর্বশেষ নেপাল এসএ গেমস থেকে খালি হাতে ফিরেছে শুটাররা। ফেডারেশনের দ্বন্দ্ব শুটারদের ব্যক্তিগত জীবনেও আঁচর কাটতে শুরু করেছে। করোনাকালে শুটাররা এমনিতেই অস্থিরতা মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন। এমন দুর্যোগের মধ্যেও গোয়েন্দা শুল্ক বিভাগ শুটারদের তলব করেছে। তাদের চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছে কোন অস্ত্র কোন সময় কিভাবে কেনা হয়েছে।
ফেডারেশনের সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী ও মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদের হাত ধরেই একটা সময় ঝিমিয়ে পড়া খেলাটি চাঙ্গা হতে শুরু করেছিল। শুরুর দিনগুলোতে মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ অপুই চালাতেন ফেডারেশন। এটা নিয়ে সেভাবে মাথাব্যথা ছিল না সভাপতি নাজিম উদ্দিনের। অপু খুব যে খারাপ করছিলেন তাও নয়। অভিজ্ঞ রাইফেল কোচ ক্লাবস ক্রিস্টেনসেনকে উড়িয়ে ২০২৪ অলিম্পিক গেমসে সরাসরি খেলার লক্ষ্যও নির্ধারণ করেছিলেন। শুটারদের সুযোগ-সুবিধাও বেড়েছিল বেশ। বিদেশে নিয়মিত খেলার সুযোগও পাচ্ছিলেন বাকী-শাকিলরা। হঠাৎ করেই যেন পাল্টে গেল চিত্র। গত বছর বার্ষিক সাধারণ সভায় কাউন্সিলরদের হাতে আসে অপুর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ সংবলিত একটি উড়োচিঠি। এই চিঠির সূত্র ধরেই দুজনের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় শুটারদের নামে এই চিঠি। এনবিআর-এর চিঠির ব্যাপারে বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনের মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ অপু বলেন, ‘দাপ্তরিক বিষয়ে চিঠি সাধারণত মহাসচিব হিসেবে আমরাই পাওয়ার কথা। কিন্তু এনবিআরের চিঠিপত্র আদান প্রদান পুরোটাই সভাপতি নিজেই করছেন। আমি বিভিন্ন সময় শুটারদের মারফত এসব বিষয়ে শুনেছি।’ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাঠানো চিঠিতে বিব্রত  ঢাকা সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে সোনাজয়ী শুটার শারমিন আক্তার রত্না বলেন, ‘একজন শুটার ক্যারিয়ার শুরু করলে একটি ভালো মানের আর্মসের জন্য হাপিত্যেস করেন। ফেডারেশনের স্টকে থাকে না আর্মস। তাই বিদেশ থেকে আনাতে হয়। আমার জানা মতে, ২০০০ সালে সাবরিনা সুলতানা আপু ও পাখি ভাই জার্মানিতে গিয়েছিলেন ট্রেনিংয়ে। তারা দু’টি রাইফেল নিয়ে এসেছিলেন। তারাই দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে রাইফেল আনতে হয়। তারপর সরকার পাখি মারার আর্মস ব্যান্ড করার পর এখন আর আনা যায় না। এখন রুলস ও রেগুলেশন হয়েছে।’ সাম্প্রতিক বিতর্ক নিয়ে রত্না বলেন, ‘ফেডারেশন যে তদন্ত করেছে, সেখানে জুঁই বলেছে যে, সে ফেডারেশন থেকে রাইফেল নিয়েছে। আসলে জুঁই মিথ্যাচার করেছে। সে দিশাকে রাইফেল কিনে আনতে বলেছিল। দিশা দেশে ফিরে রাতের বেলা ফেডারেশনে রাইফেল রেখেছিল। আর অফিস থেকেই নিয়েছিল জুঁই। এখন সভাপতি নাজিমউদ্দিন চৌধুরী বলছেন, রাইফেল শুটাররা আনেনি। একজন কর্মকর্তা নিয়ে আসছেন। যা পুরোপুরি মিথ্যাচার। এর আগেও শোভনকে একটি রাইফেল উপহার দিয়েছিল রাইফেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালথার। ক্লাউস কোচ ওকে নিয়ে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। ওর রাইফেল দেখে সবাই খুশি হয়েছিল। পরে ২০১৭ সালে ওয়ালথারের কাছে গিয়ে বললে আরও সাতটি রাইফেল তারা আমাদের শুটারদের উপহার দেয়। এটা এমন না যে অপু ভাই এনে বিক্রি করেছেন।’ দুদকের চিঠি সম্পর্কে রত্না বলেন, ‘একবার দুদক থেকে বাকী, শারমিন ও আমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছিল। এই কাজটি করেছিলেন ফয়েজ ভাই। এবং সেটাই নাজিম চাচার (নাজিম উদ্দিন চৌধুরী) কথা অনুযায়ী। তারপরও দু’বছর ফয়েজ ভাই ফেডারেশনে নিষিদ্ধ ছিল। সে যাত্রায় আমাদের কিছুই হয়নি। আজ আবার দুদকে যেতে হচ্ছে। যা খুবই খারাপ। আমরা খেলে সম্মান নিয়ে আসছি। অথচ আজ বলতে হবে কি যে, আমরা এই অস্ত্র দিয়ে মারামারি করি। এটা কি ক্রাইম? আমরা কি চোর-ছেচর? এনবিআরের কাছে উড়ো চিঠিতে অভিযোগ করেছে। অথচ উড়ো চিঠিতে কিভাবে তদন্ত হয় জানি না।’ এসএ গেমসে সোনাজয়ী আরেক শুটার শাকিল আহমেদও হতাশা প্রকাশ করেন, ‘কি হচ্ছে শুটিংয়ে, কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাদের কাছে কেন দুদক ও এনবিআর চিঠি দেবে। আমরা কি কোনো কিছু চুরি করেছি না অর্থ আত্মসাত করেছি। এই ঝামেলা আর ভালো লাগে না। এ থেকে পরিত্রান চাই আমরা।’ কমনওয়েলথ গেমসে রুপা জয়ী শুটার আবদুল্লা হেল বাকী নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘আমাদের মানসিকতার পার্থক্য কোথায়? অতীত এবং বর্তমান একই সূত্রে গাঁথা। যাহা ইচ্ছা তাহাই বানিয়ে ফেলো..হিংসা।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status