অনলাইন
'গালওয়ান যুদ্ধ নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে, প্রতিবেশীর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক দৃঢ় হবে'
৩০ জুন ২০২০, মঙ্গলবার, ১০:০৮ পূর্বাহ্ন
তিনি বহু যুদ্ধের নায়ক। উনিশশো একাত্তরের ভারত - পাকিস্তান যুদ্ধে শিয়ালকোট পর্যন্ত ঢুকে গিয়ে পরাস্ত করেছিলেন পারভেজ মুশারফের পাক বাহিনীকে। সে সময় পারভেজ ছিলেন লেফটেন্যাণ্ট কর্নেল। ভারত - চীন গালওয়ান যুদ্ধ নিয়ে মানবজমিনকে খোলামেলা সাক্ষাৎকার দিলেন ভেটেরেন কর্নেল সৌমিত্র রায়। মানবজমিনের হয়ে কথা বলেন জয়ন্ত চক্রবর্তী-
মানবজমিন - সম্প্রতি ভারত - চীন গালওয়ান ফেসঅফ নিয়ে আপনার কি ধারণা?
সৌমিত্র রায় - অনেকেই জানেন না যে আটান্ন বছর আগে গালওয়ান এর একটি সংঘাত দিয়েই ভারত - চীন যুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছিল। এবারও ইতিহাস সৃষ্টি করবে গালওয়ান।
মানবজমিন - একটু বুঝিয়ে বলবেন?
সৌমিত্র রায় - উনিশশো আটান্ন - ঊনষাট সালেই চীন তিব্বতের দিক থেকে ওয়েস্টার্ন হাইওয়ে বলে একটি রাস্তা নির্মাণ করে। তার আগেই তারা ষোলোহাজার ফুট উচ্চতায় প্রোটেক্টিভে পেট্রোল ফোরটিন দখল করে নেয়। ভারতীয় সেনার জাঠ রেজিমেন্টের একশো সেনা যায় পেট্রল ফোরটিন পুনরুদ্ধার করতে। ফেসঅফ অনিবার্য জেনে চীন সন্ধি প্রস্তাব পাঠায়। আলোচনার শেষে যখন ভারতীয় বাহিনী ফিরছে তখন চীনারা পিছন থেকে লাইট মেশিন গান নিয়ে আক্রমণ চালায়। ছত্রিশ জন জাঠ সেনা প্রাণ হারায়। এরপরই ভারত - চীন সার্বিক যুদ্ধ শুরু হয়।
মানবজমিন - মানছি সেই একই গালওয়ান, সেই প্রোটেক্টিভ পেট্রল ফোরটিন, কিন্তু তাতে কি? কেন ইতিহাস সৃষ্টি হবে?
সৌমিত্র রায় - মনে রাখতে হবে করোনার পর চীন প্রায় গোটা বিশ্বে একঘরে। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন সবাই চীন বিরোধী। ভারত প্রাথমিকভাবে নিরপেক্ষ মনোভাব নিলেও পরে চীন সম্পর্কে ভারতের মন বদলায়। এই অবস্থায় গোটা বিশ্বের নজর ঘোরানোর জন্যে চীন গালওয়ান আক্রমণ করে। এর পিছনে রাজনৈতিক কারণও আছে।
মানবজমিন - কি রকম রাজনীতি যদি বলেন…
সৌমিত্র রায় - ছয় আগস্ট আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে ভাষণ দিলেন, শুধু পাক অধিকৃত কাশ্মীর নয়, ভারত অক্সাই চীনও অধিকার করবে। সংসদের এই বিবৃতিকে গভীরভাবে নিল চীন। ডিফেন্স মেকানিজম হিসেবে তারা গালওয়ান নদীর ওপরে তিব্বতি প্লেটোর উপর অবস্থিত পেট্রল ফোরটিন এর দিকে ড্রিল শুরু করলো। ভারতের ভিতরে আশি কিলোমিটার ঢুকে তারা গালওয়ান এবং সাউথ নদীর অববাহিকায় ঘাঁটি গাড়ল। এখান থেকেই সংঘাতের শুরু। দফায় দফায় সংঘর্ষ। আলোচনা করতে যাওয়া এক কর্নেলকে আটক করে হত্যা করে চীনারা। ভারতীয় ঘটক বাহিনীও তেতাল্লিশ জন চীনা সেনাকে নিকেশ করে জাপানি স্ট্রাংগুলেশন পদ্ধতিতে তাদের গর্দান ভেঙে দিয়ে। ভারতের কুড়িজন সাহসী সেনারও মৃত্যু হয়।
মানবজমিন - কিন্তু এর পরিণতি কি হতে পারে?
সৌমিত্র রায় - সার্বিক যুদ্ধ ভারতও চায় না, চীনও চায় না। দু’দেশই জানে একটা যুদ্ধ মানেই দেশ অর্থনৈতিক ভাবে ত্রিশ বছর পিছিয়ে যাওয়া। চীন গালওয়ানকে কেন্দ্র করে ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে নিজের দিকে টানার চেষ্টা করছে।
মানবজমিন - তাদের এই নীতিতো ফলপ্রসূ। পাকিস্তান তাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু। নেপাল - ভুটানকেও তারা নিজেদের সঙ্গে নিয়েছে।
সৌমিত্র রায় - বাংলাদেশকে পারেনি। বাংলাদেশ ভারতের বন্ধু রাষ্ট্র। যদিও চীনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভালো, কিন্তু গালওয়ান ইস্যুতে বাংলাদেশ যুযুধান দু'দেশের সঙ্গে সম দূরত্ব বজায় রেখে শান্তি জারি রাখার আবেদন জানিয়েছে।
মানবজমিন - বাংলাদেশ কি ভারত চীন সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে?
সৌমিত্র রায় - অবশ্যই পারে। স্ট্র্যাটেজিক কারণে চীন বাংলাদেশকে চটাতে চাইবে না। বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে চীন যে জলবন্দর করতে চেয়েছিলো আমেরিকা, ভারতের আপত্তিতে বাংলাদেশ তা করেনি। সুতরাং, আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সুস্থিত। বাংলাদেশ এই অঞ্চলে A force to reckon with। এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাই বাংলাদেশ বড় ভূমিকা নিতে পারে। আর সেটাই হতে পারে ইতিহাস।
মানবজমিন - ধন্যবাদ কর্নেল রায় মানবজমিনকে সময় দেওয়ার জন্যে।
সৌমিত্র রায় - ধন্যবাদ আপনাদেরও কিছু আনটোল্ড স্টোরি প্রকাশের সুযোগ দেওয়ার জন্যে।
মানবজমিন - সম্প্রতি ভারত - চীন গালওয়ান ফেসঅফ নিয়ে আপনার কি ধারণা?
সৌমিত্র রায় - অনেকেই জানেন না যে আটান্ন বছর আগে গালওয়ান এর একটি সংঘাত দিয়েই ভারত - চীন যুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছিল। এবারও ইতিহাস সৃষ্টি করবে গালওয়ান।
মানবজমিন - একটু বুঝিয়ে বলবেন?
সৌমিত্র রায় - উনিশশো আটান্ন - ঊনষাট সালেই চীন তিব্বতের দিক থেকে ওয়েস্টার্ন হাইওয়ে বলে একটি রাস্তা নির্মাণ করে। তার আগেই তারা ষোলোহাজার ফুট উচ্চতায় প্রোটেক্টিভে পেট্রোল ফোরটিন দখল করে নেয়। ভারতীয় সেনার জাঠ রেজিমেন্টের একশো সেনা যায় পেট্রল ফোরটিন পুনরুদ্ধার করতে। ফেসঅফ অনিবার্য জেনে চীন সন্ধি প্রস্তাব পাঠায়। আলোচনার শেষে যখন ভারতীয় বাহিনী ফিরছে তখন চীনারা পিছন থেকে লাইট মেশিন গান নিয়ে আক্রমণ চালায়। ছত্রিশ জন জাঠ সেনা প্রাণ হারায়। এরপরই ভারত - চীন সার্বিক যুদ্ধ শুরু হয়।
মানবজমিন - মানছি সেই একই গালওয়ান, সেই প্রোটেক্টিভ পেট্রল ফোরটিন, কিন্তু তাতে কি? কেন ইতিহাস সৃষ্টি হবে?
সৌমিত্র রায় - মনে রাখতে হবে করোনার পর চীন প্রায় গোটা বিশ্বে একঘরে। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন সবাই চীন বিরোধী। ভারত প্রাথমিকভাবে নিরপেক্ষ মনোভাব নিলেও পরে চীন সম্পর্কে ভারতের মন বদলায়। এই অবস্থায় গোটা বিশ্বের নজর ঘোরানোর জন্যে চীন গালওয়ান আক্রমণ করে। এর পিছনে রাজনৈতিক কারণও আছে।
মানবজমিন - কি রকম রাজনীতি যদি বলেন…
সৌমিত্র রায় - ছয় আগস্ট আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে ভাষণ দিলেন, শুধু পাক অধিকৃত কাশ্মীর নয়, ভারত অক্সাই চীনও অধিকার করবে। সংসদের এই বিবৃতিকে গভীরভাবে নিল চীন। ডিফেন্স মেকানিজম হিসেবে তারা গালওয়ান নদীর ওপরে তিব্বতি প্লেটোর উপর অবস্থিত পেট্রল ফোরটিন এর দিকে ড্রিল শুরু করলো। ভারতের ভিতরে আশি কিলোমিটার ঢুকে তারা গালওয়ান এবং সাউথ নদীর অববাহিকায় ঘাঁটি গাড়ল। এখান থেকেই সংঘাতের শুরু। দফায় দফায় সংঘর্ষ। আলোচনা করতে যাওয়া এক কর্নেলকে আটক করে হত্যা করে চীনারা। ভারতীয় ঘটক বাহিনীও তেতাল্লিশ জন চীনা সেনাকে নিকেশ করে জাপানি স্ট্রাংগুলেশন পদ্ধতিতে তাদের গর্দান ভেঙে দিয়ে। ভারতের কুড়িজন সাহসী সেনারও মৃত্যু হয়।
মানবজমিন - কিন্তু এর পরিণতি কি হতে পারে?
সৌমিত্র রায় - সার্বিক যুদ্ধ ভারতও চায় না, চীনও চায় না। দু’দেশই জানে একটা যুদ্ধ মানেই দেশ অর্থনৈতিক ভাবে ত্রিশ বছর পিছিয়ে যাওয়া। চীন গালওয়ানকে কেন্দ্র করে ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে নিজের দিকে টানার চেষ্টা করছে।
মানবজমিন - তাদের এই নীতিতো ফলপ্রসূ। পাকিস্তান তাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু। নেপাল - ভুটানকেও তারা নিজেদের সঙ্গে নিয়েছে।
সৌমিত্র রায় - বাংলাদেশকে পারেনি। বাংলাদেশ ভারতের বন্ধু রাষ্ট্র। যদিও চীনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভালো, কিন্তু গালওয়ান ইস্যুতে বাংলাদেশ যুযুধান দু'দেশের সঙ্গে সম দূরত্ব বজায় রেখে শান্তি জারি রাখার আবেদন জানিয়েছে।
মানবজমিন - বাংলাদেশ কি ভারত চীন সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে?
সৌমিত্র রায় - অবশ্যই পারে। স্ট্র্যাটেজিক কারণে চীন বাংলাদেশকে চটাতে চাইবে না। বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে চীন যে জলবন্দর করতে চেয়েছিলো আমেরিকা, ভারতের আপত্তিতে বাংলাদেশ তা করেনি। সুতরাং, আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সুস্থিত। বাংলাদেশ এই অঞ্চলে A force to reckon with। এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাই বাংলাদেশ বড় ভূমিকা নিতে পারে। আর সেটাই হতে পারে ইতিহাস।
মানবজমিন - ধন্যবাদ কর্নেল রায় মানবজমিনকে সময় দেওয়ার জন্যে।
সৌমিত্র রায় - ধন্যবাদ আপনাদেরও কিছু আনটোল্ড স্টোরি প্রকাশের সুযোগ দেওয়ার জন্যে।