এক্সক্লুসিভ

অদম্য ফাহিমের গল্প

মাগুরা প্রতিনিধি

২৮ জুন ২০২০, রবিবার, ৭:৩৬ পূর্বাহ্ন

ফাহিম। অন্যের সহায়তা ছাড়া এক পাও নড়তে পারে না। তবুও অনলাইনে আউটসোর্সিং শিখে আজ ভাড়া বাসা থেকে নিজের বাড়ি কিনেছে প্রতিবন্ধী এই তরুণ। ফাহিমের মতে শারীরিক অক্ষমতা ভালো কিছু করা থেকে আটকে রাখতে পারে না।
জানা গেছে, মাগুরা শহরের একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে ফাহিম। বাবা রেজাউল করিম একটি বেসরকারি  কোম্পানির বিপণন বিভাগে কাজ করেন। মা হাজেরা খাতুন গৃহিণী। একমাত্র বোন স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। বাবা রেজাউল করিম জানান, ফাহিমের সমস্যা প্রথম ধরা পড়ে ২০০৬ সালে। বাংলাদেশে বেশ কয়েক দফা চিকিৎসার পর ২০০৮ সালে নিয়ে যান কলকাতায়। সেখানে চিকিৎসকরা জানান, তার ছেলে ডুচেনেমাসকিউলার ডিস্ট্রফিতে আক্রান্ত। ধীরে ধীরে পেশি দুর্বল হয়ে যাবে। বংশগত রোগটির কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নেই। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা জটিল হতে পারে। চিকিৎসকরা ফিজিওথেরাপির পরামর্শ দেন। পাশাপাশি ফলোআপের জন্য কয়েক মাস পর আবারো যেতে বলেন। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে আর চিকিৎসা করাতে পারেননি রেজাউল করিম। ২০১২ সাল থেকে একেবারে বিছানায় ফাহিম। তবে তিনি থেমে থাকেননি। মনের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কম্পিউটার শেখা শুরু করেন ফাইম। কম্পিউটার চালানো পুরোপুরি আয়ত্তে এলে একসময় নিজেকে সঁপে দেন ফ্রিল্যান্সিং দুনিয়ায়। অদম্য ইচ্ছা ও অধ্যবসায়ের কাছে হার মানে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। ফাহিম এখন ফ্রিল্যান্সিংয়ে আপওয়ার্কের অন্যতম টপ রেটেড ফ্রি-ল্যান্সার। তার প্রতি ঘণ্টার রেট আট ডলার।
ফাহিম বলেন, ‘স্টিফেন হকিং আমার মতো ডিজেবল ছিলেন। আমার মতো মানুষদের জন্য তার একটা কথা ছিল- ‘ফিজিক্যালি ডিজেবল হও; কিন্তু মানসিকভাবে ডিজেবল হইও না। কারণ শারীরিক অক্ষমতা ভালো কিছু করা থেকে আটকে রাখতে পারে না। এ কথাটি সব সময় মনে রেখেছি। ফাইম জানান, ফ্রি-ল্যান্সার হতে হলে অনেক  ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। ধৈর্য ধরে টিকে থাকলে এটি আত্মনির্ভরতা ও উন্নত কর্মসংস্থানের অনন্য এক উপায়। তবে দীর্ঘদিন হয়তো এই কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন না। তাই পরিকল্পনা আছে টাকা জমিয়ে কোনো ব্যবসা শুরু করার। যেখানে আরো বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়। বর্তমানে পরিবারের খরচের বড় একটি অংশের জোগান আসে তার আয় থেকে। আগে ভাড়া বাসায় থাকতে হতো ফাহিমের পরিবারকে। এখন ফাহিমের জমানো টাকায় শহরের মোল্যাপাড়ায় কেনা চার শতক জমিতে বাড়ি করে সেখানে উঠেছেন তারা। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গত বছর মাগুরায় সরকারি এক অনুষ্ঠানে এসে ফাহিমের বিষয়টি জেনে তাকে একটি ল্যাপটপ দিয়েছেন। হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ দিয়েছে এক লাখ টাকার অনুুদান।
ফাহিমের মা হাজেরা খাতুন জানান, রাত জেগে ফাহিম কাজ করে। সেই সঙ্গে তিনি জেগে থাকেন ফাহিমকে সহযোগিতা করার জন্য। নিজের শরীরের কোনো অংশই এতটুকু সরানোর ক্ষমতা নেই। খাওয়া-দাওয়া, গোসল থেকে শুরু করে সব কাজেই ফাহিমকে সহযোগিতা করেন তিনি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের ব্যাঙ্গালুরু নেয়ার ইচ্ছা আছে বলেও জানান তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status