এক্সক্লুসিভ

মৌলভীবাজারে ‘লাম্পি স্কিন’ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গরু

স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার থেকে

২৫ জুন ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৭:৩২ পূর্বাহ্ন

জেলাজুড়ে গরুর মালিকরা এখন চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠায়। চোখের সামনে হঠাৎ করে লাম্পি স্কিন নামক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে তাদের পোষা গরু। যমদূত করোনাকালে কৃষক ও গরু খামারিদের এ যেন নতুন আরও এক দুর্ভোগ। সামনে কোরবানি ঈদ। তাই এসময়ে এভাবে প্রতিদিনই যদি জেলার ৭টি উপজেলার গরুগুলো এই রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে   কোরবানিতে স্থানীয় চাহিদা পূরণ হওয়া নিয়েও রয়েছে চরম দুশ্চিন্তা। দুর্ভোগগ্রস্ত গরুর মালিকরা জানান, গেল প্রায় ২-৩ মাস থেকে তাদের লালন পালনকৃত গরুর পুরো শরীরে হঠাৎ করে গোটা বের হচ্ছে।  আর  লোম পড়ে যাচ্ছে। গরুর শরীরের তাপমাত্রাও বেশি। এ সময়ে গরু কিছু খেতেও চায় না। মুখ এবং নাক দিয়ে লালা বের হয়। আর দুর্বল  হয়ে পড়ে। প্রথম দিকে শরীরে গোটার পরিমাণ কম থাকলে ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। অনেকেই স্থানীয় পশু ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ খাওয়ালেও কাজ হয়নি। উল্টো গরুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে পচন ধরে। এমতাবস্থায় দিশেহারা অনেক গরুর মালিক চিকিৎসার জন্য উপজেলা ও জেলা পশু হাসপাতালে যোগাযোগ করে জানতে পারেন এই রোগের নাম ‘লাম্পি স্কিন’। রোগ শনাক্ত করতে দেরি হওয়ায় এখন অনেকেরই গরু বাঁচিয়ে রাখাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৬ হাজারেরও অধিক গরু ‘লাম্পি স্কিন’ নামক রোগে আক্রান্ত। মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায় গেল  বছরের শেষের দিক থেকে এই রোগে গরু আক্রান্ত হচ্ছে বলে অনেকেই জানান। এর আগে এই রোগ কৃষক বা খামারিদের চোখে পড়েনি। আর এই সময়ের মতো তখন জেলাজুড়ে এতো গরু ঢালাও ভাবে আক্রান্ত হয়নি। এক বছর আগে থেকে এই রোগ এলেও গত প্রায় ২-৩ মাস ধরে জেলার ৭টি উপজেলায় এ রোগ ছড়িয়েছে ব্যাপকভাবে। জেলা ও উপজেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৬ হাজার ১৫০টি গরু। তবে স্থানীয়দের তথ্য মতে ১২-১৫ হাজারের অধিক গরু জেলাজুড়ে আক্রান্ত হয়েছে। তারা জানান, সামনে কুরবানীর ঈদ এর আগে এরকম প্রতি নিয়তই যদি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে তাহলে  কোরবানির জন্য স্থানীয় চাহিদার যোগান দিতে হিমশিম খেতে হবে। উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় থাকা জেলার ৭ উপজেলার এই রোগে আক্রান্ত গরুর দুর্ভোগগ্রস্ত মালিকরা এই ক্ষতি পুষে উঠার হিসাব কষছেন। খামারিরা বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়। স্থানীয় কৃষক পর্যায়ের গরুর মালিক ও ক্ষুদ্র খামারিরা মনে করছেন লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা যে হারে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাতে দ্রুত এর চিকিৎসাসহ প্রতিষেধক সংগ্রহ করে গবাদিপশুকে না দেয়া গেলে জেলা জুড়ে পশু সম্পদের বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। এবিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাসুদুর রহমান সরকার  জানান, জেলায় সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী গবাদি পশুর সংখ্যা ৪ লাখ ৮৫ হাজার। সরকারি হিসেব মতে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৬ হাজার। আর মারা গেছে গত ১৫ দিনে ৫০টি গবাদিপশু। তিনি জানান এটি মশা মাছি ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে হয়ে থাকে। সে জন্য এদিকটা সংশ্লিষ্টদের খেয়াল রাখতে হবে। আক্রান্ত গরুকে আলাদা রাখতে হবে ও বাড়তি যত্ন নিতে হবে। এদিকে জেলা ও উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর বলছে জনবল ও বিভিন্ন ধরনের ঔষধ সংকটের কথা। লাম্পি স্কিন নামীয় ভাইরাসের কোন স্থায়ী চিকিৎসা নেই। এ জন্য গবাদিপশুর আবাসস্থল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা সহ এবিষয়ে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করে প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status