এক্সক্লুসিভ

সিলেট নগরের উত্তর অংশ পুরোটাই যাচ্ছে লকডাউনে

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

১৭ জুন ২০২০, বুধবার, ৮:০৯ পূর্বাহ্ন

ফাইল ছবি

করোনায় লাল সিলেট। নগরের উত্তর অংশ পুরোটাই ‘রেড জোন’। ২৪টি ওয়ার্ডই সংক্রমিত। মারাত্মক ঝুঁকির মুখে মানুষ। চলছে মৃত্যুর মিছিলও। করোনার ছোবলে তছনছ হতে শুরু করেছে জীবন ও জীবিকা। কেউ বাদ যাচ্ছে না। আতঙ্ক সিলেটজুড়ে। হাসপাতালেও জায়গা নেই। ১৫৪ জন করোনা রোগী সিলেটের হাসপাতালে ভর্তি। মঙ্গলবারও একদিনে রোগী বেড়েছে ২০৬ জন। সিলেট বিভাগে করোনায় আক্রান্ত ২৬২২ জন। একা সিলেট জেলাতেই প্রায় ১৫শ’ রোগী। এই অবস্থায় শেষ মুহূর্তে এসে ‘হুঁশ’ ফিরেছে প্রশাসনে। প্রাথমিকভাবে সিলেটের ২৭টি এলাকা যাচ্ছে কড়াকড়ি লকডাউনে। মঙ্গলবার দুপুরে নিয়ে সিলেট সার্কিট হাউসে পর্যালোচনা সভা হয়েছে। এই সভায় সিলেটের প্রশাসন ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা করোনা নিয়ে পর্যালোচনা করেন। সভায় উপস্থিত থাকা এক কর্মকর্তা জানান- সিলেটের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। এ কারণে লকডাউনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কড়াকড়ি ভাবে লকডাউন শুরু হতে পারে। সে সিদ্ধান্ত আজ সকাল ৯টার দিকে গেজেট আকারে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সুরমা নদীর কারণে সিলেট নগরী দুই ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে উত্তর ভাগে ২৪টি ও দক্ষিণ ভাগে ৩টি ওয়ার্ড। এখন নগরীর উত্তর অংশের ২৪টি ওয়ার্ডই সংক্রমিত। অর্থ্যাৎ ১ থেকে ২৪ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত পুরোটাই রেড জোনে অবস্থিত। এ কারনে উত্তর অংশকে লকডাউন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদিকে- সিলেট নগর ছাড়াও লকডাউনে যাচ্ছে খাদিমপাড়া ইউনিয়নের পুরোটাই। ওই এলাকাও রেড জোন হিসেবে ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই ইউনিয়নে সংক্রমনের হার সবচেয়ে বেশি। এর বাইরে সিলেটের দুটি পৌরসভার আংশিক এলাকাও লকডাউন করা হবে। সিলেটের জকিগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ পৌরসভার একাংশ রেড জোন হিসেবে চিহিৃত করেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘সিলেটে সংক্রমণের মাত্রা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আশঙ্কাজনক হারে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। এ কারণে রেডজোন চিহ্নিত করে দ্রুত লকডাউনে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সিলেটের প্রশাসনের কর্মকর্তারা আমাদের এই পরামর্শ গ্রহণ করেছেন। খুব শিগগিরই লকডাউন কার্যকর করা শুরু হবে। লকডাউনের মাধ্যমে সিলেটে করোনা উর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।’ স্বাস্থ্য বিভাগে সর্বশেষ তথ্য মতে- সিলেট বিভাগে করোনা ভাইরাসে সর্বমোট আক্রান্ত ২৬২২ জন। ২৪ ঘণ্টায় রোগী বেড়েছে ২০৬ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১৪৯৫ জন, সুনামগঞ্জ জেলায় ৬৪১ জন, হবিগঞ্জ জেলায় ২৬১ জন,  মৌলভীবাজার জেলায় ১১৫ জন। মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধশত পাড়ি দিয়েছে। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৫৪ জন, সুস্থ হয়েছেন ৫৫৯ জন। করোনায় কেড়ে নিয়েছে সিলেটবাসীর প্রিয় মুখ সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে। কামরানের মৃত্যুর পর সিলেটজুড়ে করোনা নিয়ে আরো বেশি আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সিলেট-২ আসনের এমপি ও গণফোরাম নেতা মোকাব্বির খানও করোনায় আক্রান্ত। সিলেট শহর অনেক আগে থেকে করোনার ছোবলে তছনছ হয়ে যাচ্ছে। বাকি ছিলো গ্রাম। এখন গ্রামে গ্রামেও আঘাত হেনেছে করোনা। উপসর্গ বেশি। নমুনা পরীক্ষার জায়গা নেই। দুটি ল্যাব প্রায় ১৫ দিন আগে থেকে নমুনার চাপে রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্রুত চারটি ল্যাব স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। হাসপাতালে আইসিইউ সংকট। সাধারণ কোনো আইসিইউতে ভর্তি করা হচ্ছে না করোনা রোগী। অক্সিজেন সংকট চলছে। ফলে করোনা লাগাম টেনে ধরে সব চিকিৎসার পথ খুলতে চেষ্টা করছে প্রশাসন। আরো দুটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে। ডাক্তার সহ অন্যান্য সংকট দেখা দিতে পারে সিলেটে। সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম সিলেট জেলায় আইসোলেশন সেন্টার চালু করতে আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সকে মাথায় রেখেছেন। বিষয়টি ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status