এক্সক্লুসিভ

লিচুর ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা

রাজিউর রহমান রুমী, পাবনা থেকে

১৫ জুন ২০২০, সোমবার, ৭:০২ পূর্বাহ্ন

চলতি মৌসুমে পাবনার লিচু চাষিরা এখন বেজায় খুশি। করোনাভাইরাস আতঙ্ক, শিলাবৃষ্টি, আম্ফানের তাণ্ডব, লকডাউনের কারণে পরিবহন সংকটসহ সব মিলিয়ে একের পর এক দুর্যোগ গেছে লিচুর ওপর দিয়ে। ফলে মৌসুমের শুরুতেই লিচুর দাম নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন এ অঞ্চলের চাষিরা। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বর্তমানে বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় লিচু নিয়ে তাদের সেই দুশ্চিন্তা কেটে গেছে। পাবনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়। এর মধ্যে ঈশ্বরদীতে ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়। উপজেলায় দেশি, বোম্বাই ও চায়না-৩ নামে তিন জাতের লিচুর ফলন হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ উপজেলার লিচু ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। এখানে বড় গাছে গড়ে ১০ হাজার ও ছোট গাছে ৩ হাজার করে ধরলে এবার লিচুর সংখ্যা প্রায় ১২৯ কোটি, যার বাজার মূল্য প্রায় ৩২৪ কোটি টাকা। এছাড়া আটঘরিয়া ও চাটমোহর উপজেলায় ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবার লিচু বিক্রি করে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
লিচুর বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলা জানা যায়, ফাল্গুনে লিচুর ফুল ফোঁটে। চৈত্রে তৈরি হয় গুটি। বৈশাখের মাঝামাঝি লিচুতে রঙ ধরতে শুরু করে। জ্যৈষ্ঠের প্রথম সপ্তাহে লিচুর রঙে রঙিন হয়ে ওঠে বাগান। লিচু বাগানে ফুল ফুটতেই বেচাকেনা শুরু হয়। ফুল থেকে গুটি, গুটি থেকে পরিপক্ব লিচু। যত বড় হবে, লিচুর দাম তত বাড়বে। কয়েক ধাপে চলে হাতবদল। এবারে করোনাভাইরাস আতঙ্কে মৌসুমের শুরুতেই বেচা-কেনায় বিড়ম্বনা তৈরি হয়। ব্যাপারীরা না আসতে পারায় অধিকাংশ বাগান অবিক্রীত থাকে। এতে মৌসুমের শুরু থেকেই লিচু নিয়ে বিপাকে পড়েন চাষিরা। তবে শেষ পর্যন্ত সীমিত আকারে যানবাহন চলাচল শুরু এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাজার ও অফিস-আদালত খুলে যাওয়ায় লিচু বিক্রিতে তেমন বেগ পেতে হয়নি চাষিদের। মিলেছে ভালো দাম। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিছুটা ক্ষতি হলেও ভালো দামে চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। লিচুর রাজধানী নামে সারা দেশে পরিচিত ঈশ্বরদীর আওতাপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বাগান সরেজমিন দেখা গেছে, শত প্রতিকূলতার মধ্যেও লিচু নিয়ে কর্মব্যস্ত অধিকাংশ মানুষ। পুরোদমে লিচু বিকিকিনি চলছে ছলিমপুর, জয়নগর, আওতাপাড়া, সাহাপুর, দাশুড়িয়া মোড়ে।  ট্রাক ও ভ্যানে লিচু যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। কয়েকজন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হলেও বর্তমানে বাজারে চাহিদা ও ভালো দাম রয়েছে। বাগানেই প্রতি ১০০ লিচু ১৮০ টাকা থেকে ২২৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে এই লিচু ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ছলিমপুর গ্রামের বাগান মালিক কিতাব মণ্ডল জানান, তিনি প্রায় ৬০ বিঘা জমিতে লিছু আবাদ করেন। গত মৌসুমে এসব জমির বাগান থেকে প্রায় ৩৫ হাজার টাকার লিচু বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু চলতি মৌসুমে বাগানের ৪৫ শতাংশ লিচু নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এবার তিনি অর্ধেক দাম পেয়েছেন। পাবনার জয়বাংলা নারী উন্নয়ন সমবায় সমিতির সভানেত্রী ও বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি স্বর্ণপদক প্রাপ্ত কৃষক নুরুন্নাহার বেগম বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে কীভাবে লিচু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন করবেন তা নিয়ে প্রথমে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। তবে সরকার অনলাইনে ফল বিপণনের সুবিধা করে দিয়েছেন এবং ট্রেনে বিশেষ বগি লাগিয়ে অল্প ভাড়ায় আম লিচু পরিবহনের ব্যবস্থা করায় তাদের ক্ষতি কম হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা মোতমাইন্না জানান, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে লিচুর কিছুটা ক্ষতি হয়েছে এটা ঠিক। তবে গত বছরের চেয়ে এবার লিচুর দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় চাষিরা খুশি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status