এক্সক্লুসিভ

অবশেষে বৃদ্ধার ঠাঁইহলো ‘বৃদ্ধাশ্রমে’

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ থেকে

১৫ জুন ২০২০, সোমবার, ৭:০১ পূর্বাহ্ন

মুকুল নিকেতন স্কুলের সামনে অভিভাবক ছাউনিতে আশ্রয় নেয়া সেই বৃদ্ধার ঠাঁই হলো সাড়া বৃদ্ধাশ্রমে। গণমাধ্যমে বৃদ্ধাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর শনিবার রাতে ফেসবুকে খবরটি দেখে তার কাছে খাবার নিয়ে ছুটে যান ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ হাফিজুর রহমান। এরপর বিষয়টি সাড়া বৃদ্ধাশ্রমের নজরে আসে।  রোববার সকালেই সাড়া বৃদ্ধাশ্রম থেকে আবদুল মালেক ও তার টিম নিয়ে ভালুকা থেকে ময়মনসিংহে চলে আসেন। এই বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহযোগিতায় উপজেলা সমাজসেবা অফিসার এবং সমবায় অফিসারের উপস্থিতিতে সাড়া বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে যাওয়া হয়। মুকুল নিকেতনের শিক্ষক কাজী আবদুর রাজ্জাক জানান, আজ থেকে ৮-১০ দিন আগে অভিভাবক ছাউনীতে আশ্রয় নিয়ে অবস্থান করতে দেখেছেন। স্কুল বন্ধ থাকার কারণে কারো সেভাবে নজরে আসেনি। সমাজসেবক আলী ইউসুফ জানান, বৃদ্ধা মহিলা অস্পষ্ট কথা বলেন। সঠিকভাবে নাম ঠিকানা বলতে পারেন না। ভাঙ্গা ভাঙ্গা কিছু কথা বলতে পারেন। তবে বৃদ্ধার কথা বুঝা যায় নগরের পাটগুদাম এলাকায় তার বাসা। পুরবী চিনেমা হলের  মালিক তার আত্মীয় হয়। তার স্বামী ৭১ মুক্তিযুদ্ধে মারা গেছে। কিছুদিন আগে ময়মনসিংহের মুকুল নিকেতন স্কুলের অভিভাবক ছাউনিতে আশ্রয় নেন ওই বৃদ্ধা। বয়স আশির কাছাকাছি। অভিভাবক ছাউনিতে বসার স্থানটি হয়ে ওঠে তার শোবার ঘর। ছাউনির বাকি অংশ বারান্দা। কোথা থেকে যেনো একটি ভাঙ্গা ঝাড়ু কুড়িয়ে এনেছেন। তাই দিয়ে যত্নের সাথে ঝাড়পোছ করেন বারান্দা। কাগজ দিয়ে মুছে চকচকে করে রাখেন ঘর-শোবার স্থান। সম্বলও কিছু গুছিয়েছেন- একটি ওয়াড়হীন বালিশ, কয়েকটি ছোট-বড় প্লাস্টিকের বাটি, বোতল, লাঠি, তালপাতার পাখা, এক জোড়া প্লাস্টিকের পুরনো স্যান্ডেল এসবই। যত্ন নিয়ে স্থানটিকে নিজের বাড়ি বানিয়ে ফেলেছেন যেনো। ঘূর্ণিঝড় আম্ফান গেলো, আরও কতো রোদ-বৃষ্টি হলো তবুও তিনি এখানেই আছেন। খুব ধীরে ধীরে চলাফেরা করেন। হাত-পা ফুলে রয়েছে। পায়ে ঘায়ের মতো হয়ে গেছে। কথা বলতে কষ্ট হয়। শরীরে ব্যথা। তার উপরে স্মৃতিভ্রষ্ট। কথা বলতে গিয়ে এলোমেলো হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরপর খেই হারিয়ে অন্য কথা বলতে থাকেন। এমনকি নিজের নামটিও মনে নেই তার। ভুলে গেছেন। ছেলে-মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করতেই পাথরচাপা জলধারার মতো চুইয়ে জল চলে এলো চোখে। চোখের পানি ফেলতে ফেলতে তিনি বললেন, ‘আমার কেউ নেই। স্বামী ছিল মরে গেছে। আমি আগে এমন ছিলাম না, সবই ছিলো। এখন কিছু নেই।’ একটি গণমাধ্যমে ওই বৃদ্ধাকে নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন নজরে আসে স্থানীয় প্রশাসনসহ মানবিক প্রতিষ্ঠানগুলোর।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status