এক্সক্লুসিভ

মাস্ক ব্যবহার লকডাউন থেকে বেশি কার্যকর

মানবজমিন ডেস্ক

১৪ জুন ২০২০, রবিবার, ৭:৩৫ পূর্বাহ্ন

লকডাউন দেয়ার থেকেও বেশি কার্যকরী হচ্ছে মাস্ক ব্যবহার। এমনটাই জানিয়েছে একটি গবেষণা সংস্থা। প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেসের ওই গবেষণার খবর প্রকাশ করেছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন। এতে জানানো হয়েছে, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় লকডাউনের থেকেও বেশি কার্যকরী হচ্ছে মাস্ক ব্যবহার করা। কারণ, মানুষের মুখ থেকে যে জলকণা বের হয় তাই করোনা ভাইরাস ছড়ানোর কারণ। মাস্ক ব্যবহার করলে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে সংক্রমণ হয় না বলেও নিশ্চিত করেছে তারা।  

সিএনএন’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেক্সাস এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়,  টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সান দিয়েগো ও ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব  টেকনোলজির পাঁচজন গবেষক এই গবেষণাটি করেছেন। গবেষকরা ইতালি ও নিউ ইয়র্কে করোনা রোধে মাস্ক ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করার আগে ও পরের করোনা সংক্রমণের হারের তুলনা করেছেন। সেখানে দেখা গেছে, দুই জায়গায়ই মানুষ বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহারের পর থেকে সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে। গবেষকরা বলছেন, মাস্ক ব্যবহারের কারণেই ইতালিতে গত ৬ই এপ্রিল ও ৯ই মে ৭৮ হাজারের বেশি করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করা গেছে। আর ১৭ই এপ্রিল ও ৯ই মে নিউ ইয়র্কে ৬৬ হাজারের বেশি করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করা গেছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিকে করোনার বিস্তার প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো, ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার করা। ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এর পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা,  কোয়ারেন্টিন ও কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করে  কোভিড-১৯ এর প্রতিরোধে কাজ করেই  যেতে হবে। গবেষকরা বলেছেন, মানুষের হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে সামনে থাকা মানুষের কাছে সরাসরি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। আবার মানুষের হাঁচি-কাশি থেকে বের হওয়া ড্রপলেট বাতাসে ভাসতে ভাসতে নিচে পড়ে যায়। ছোট্ট এই ড্রপলেটকে বলে অ্যারোসল। এই অ্যারোসল মানুষের পায়ে পায়ে বা বাতাসে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। পরে তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষকরা করোনার এপিক সেন্টার উহান, চীন, ইতালি ও নিউ ইয়র্ক সিটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার বিশ্লেষণ করেছেন। কখন বা সংক্রমণ শুরু হওয়ার কতদিন পর এসব স্থানে পরীক্ষা বাড়ানো, কোয়ারেন্টিন, সংস্পর্শ শনাক্ত, সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তার ওপর সংক্রমণের হার নির্ণয় করেছেন গবেষকেরা।

দেখা গেছে, চীনে করোনা প্রতিরোধে এসব প্রায় একই সময়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে ইতালি ও নিউ ইয়র্কে তা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বাস্তবায়ন করা হয়। ইতালি ও নিউ ইয়র্ক সিটিতে যখন থেকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তখন থেকেই করোনার সংক্রমণের হার নিম্নমুখী হওয়া শুরু করেছে। এটা ইতালিতে লকডাউন শুরু হওয়া বা নিউ ইয়র্কে স্টে  হোম অর্ডার কাযর্কর হওয়ার কারণে হয়নি, হয়েছে মাস্ক ব্যবহারের কারণেই।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা প্রতিরোধে ইতালির উত্তরাঞ্চলে ৬ই এপ্রিল থেকে মাস্ক পরা শুরু হয়। আর সারা দেশে ৪ঠা মে থেকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। নিউ ইয়র্ক সিটিতে ১৭ই এপ্রিল থেকে মাস্ক ব্যবহারের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। গবেষকরা এই তারিখগুলোতে করোনার সংক্রমণের হার বিশ্লেষণ করেছেন।
গবেষকরা বলেছেন, মুখমণ্ডল ঢেকে মাস্ক ব্যবহারে সরাসরি ড্রপলেট বা বাতাসে ভাসা জলকণা থেকে করোনা সংক্রমণ ও অ্যারোসল থেকে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়। অন্যদিকে সামাজিক দূরত্ব, কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন ও হাত স্যানিটাইজ করা সরাসরি ড্রপলেট বা বাতাস থেকে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন করোনাভাইরাসের কন্ট্যাক্ট ট্রান্সমিশন প্রতিরোধের ওপর  জোর দিয়েছে। তবে দুই সংস্থাই বায়ুবাহিত সংক্রমণের পথটাকে উপেক্ষা করছে।

নিউ ইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ সূত্রে জানা গেছে, নিউ ইয়র্ক সিটিতে প্রায় ২ লাখ ৫ হাজার ৮৪৬ জন করোনায় সংক্রমিত হয়েছে। আর নিশ্চিত করোনায় সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৭ হাজার ৩৫১ জনের, এর সঙ্গে আরো ৪ হাজার ৬৯২ জনের সম্ভাব্য করোনায় মৃত্যু হয়েছে। নগরে সংক্রমণ, হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর হার এপ্রিলের শুরু থেকে নিম্নমুখী হওয়া শুরু করে। আনুষ্ঠানিকভাবে ৮ই জুন  থেকে লকডাউন তুলে প্রথম ধাপে নিউ ইয়র্ক সিটি খুলে দেয়া হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status