এক্সক্লুসিভ

চট্টগ্রামে শতাধিক শিশুর শরীরে করোনার বিষ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে

১৩ জুন ২০২০, শনিবার, ৭:৫০ পূর্বাহ্ন

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানেই অসহনীয় যন্ত্রণা। গলাসহ শরীর ব্যথা, জ্বর, শুকনো কাঁশি, সেই সাথে শ্বাসকষ্ট। যা পূর্ণ বয়স্ক তরুণদেরও সহ্য করা কঠিন। সে জায়গায় যদি একদিন, চারদিন, একমাস, ১০ মাস, এক বছর, দু‘বছর বয়সী শিশু হয়, তাহলে বুঝুন কিভাবে সইছে তারা করোনা বিষ।
তেমনটাই হয়েছে চট্টগ্রামের শতাধিক শিশুর ক্ষেত্রে। যারা নীরবে সইছে করোনার বিষের যন্ত্রণা। যাদের মধ্যে একদিনের শিশুও রয়েছে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে জন্ম নেওয়া একদিন বয়সের এক নবজাতক দেশের সবচেয়ে কম বয়সী করোনা পজিটিভ রোগী হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। মায়ের গর্ভে করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ২০শে মে জন্ম নেওয়া ছোট্ট শিশুটি নীরবে সয়েছে করোনার বিষ। টানা ১০ দিন করোনার বিষের যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে লড়াই করেছে। শেষমেষ করোনা যুদ্ধে রেহাই মিলেছে এ নবজাতকের। মায়ের সাথে সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরেছে। একইভাবে জীবনের সাথে লড়াই করে করোনাকে হারিয়ে বীরবেশে বাড়ি ফিরেছে চন্দনাইশের ১০ মাস বয়সী এক শিশুও। আবার করোনার বিষের যন্ত্রণায় চারমাস ও ৬ বছর বয়সী শিশুর মৃত্যুবরণের ঘটনাও ঘটেছে চট্টগ্রামে। এই দুই শিশুর বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া। যাদের একজন প্রতিবন্ধী। করোনা পজিটিভ হয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে শিশুটি। এভাবে চট্টগ্রামে শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সী ১০৬ জন শিশু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে বড়দের সঙ্গে শিশুরাও সংক্রমিত হচ্ছে করোনায়। এ যাবত আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে ৬৯ জন ছেলে এবং ৩৭ জন কন্যা শিশু। চট্টগ্রামে এ যাবত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৫৯৪ জন। তন্মধ্যে শনাক্ত হওয়া করোনা আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ২ দশমকি ৩০ ভাগ। এরমধ্যে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে মাত্র তিনজন শিশু। এরমধ্যে করোনার সাথে লড়ে হেরে গেছে ৬ বছরের এক শিশু, ১০ মাসের আরেক শিশু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে এবং সর্বশেষ চারদিন বয়সে শনাক্ত হওয়া পনেরো দিনের শিশুটিও জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। এর বাইরে বাকি শিশুরা হোম আইসোলেশনে রয়েছে। সিভিল সার্জন জানান, করোনা আক্রান্ত রোগীর সংসপর্শে এসে এসব শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। আবার জন্মের পরপরই একদিন বয়সে করোনায় আক্রান্ত মায়ের কাছ থেকে করোনায় সংক্রমিত হয়েছে। অন্যদিকে এর বিপরীত ঘটনাও আছে। চন্দনাইশের ১০ মাস বয়সী এক শিশু গত ২১ এপ্রিল করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়। ঝুঁকি জেনেও মাতৃত্বের টানে জেনারেল হাসপাতাল ওই শিশুকে ছেড়ে যাননি তার মমতাময়ী মা। চিকিৎসকরা মোটামুটি নিশ্চিতই ছিলেন, ওই মাও সবসময় শিশুর সংসপর্শে থাকায় তিনিও করোনায় আক্রান্ত হতে যাচ্ছেন। বারকয়েক নমুনাও পাঠানো হয়েছিল ল্যাবে। কিন্তু না, প্রতিবারই অদ্ভুত কোনো কারণে এই মা করোনায় সংক্রমিত হননি। করোনার সঙ্গে লড়ে দুধের শিশুটাকে নিয়েই হাসপাতাল ছেড়েছেন তিনি। আবার পটিয়ার ছয় বছর বয়সী এক প্রতিবন্ধী শিশুর করোনা পজিটিভ এলে আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির আধ ঘণ্টার মধ্যেই ওই শিশু মারা যায়। তবে করোনা পজিটিভ হওয়ার পর অ্যাম্বুলেন্সে ছেলের সাথে হাসপাতাল আসা, আবার মৃত শিশুকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া, গোসল করানো সবই করেছেন মা। বাবা স্বয়ং নিজের কোলে করে ছেলে অন্তিম শয্যায় শায়িত করেন। কিন্তু তাদের দুজনের কেউই করোনায় সংক্রমিত হননি।
যেভাবে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা : যেকোনো বাহকের সংসপর্শে কিংবা সর্দি, হাঁচি, কাশির মাধ্যমে অন্যের শরীরে ছড়াতে পারে করোনাভাইরাস। আক্রান্ত শিশুরাও পরিবারের যেকোনো সদস্যের সংসপর্শে এসে আক্রান্ত হতে পারে। মূলত করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের প্রধান শিকার শিশুরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের আসল বাহক কে তা সহজে শনাক্ত করতে না পারায় যেকোনো বাহকের সংসপর্শেই শিশুরা সহজে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তির সংসপর্শে যেকোনো বয়সের শিশুর করোনা হতে পারে। সেক্ষেত্রে পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
যেভাবে চিকিৎসা হচ্ছে করোনা আক্রান্ত শিশুদের : করোনার সুনির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা না থাকলেও আপাতত দৃষ্টিতে বড়দের উপসর্গের ধরন দেখে ট্যাবলেট কিংবা ক্যাপসুল দিয়ে চলছে করোনা রোগীর চিকিৎসাসেবা। কিন্তু একদিন, পনেরো দিন বা চারমাস বয়সী শিশুদের সে চিকিৎসা দেয়ার কোন উপায় নেই।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব মাসুম এ প্রসঙ্গে বলেন, বাচ্চাদের তো ট্যাবলেট দেওয়ার সুযোগ নেই। শিশুদের জ্বর বা কাশির জন্য যে ওষুধপত্র দেওয়া হয় করোনা আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রেও তাই দেয়া হচ্ছে। তবে তাদের বাকি রোগীদের কাছ থেকে আলাদা রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডা. আব্দুর রব আরও বলেন, করোনা শনাক্ত হওয়ার পর যেসব বাচ্চার শারীরিক অবস্থা জটিল হয়েছে, তারাই জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে এসেছে। শনাক্ত হওয়া এসব শিশুর অধিকাংশই বাড়িতে হোম আইসোলেশনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status