বিশ্বজমিন
যেমন করে সিঙ্গাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ ফিরলেন মরণাপন্ন রানা
মানবজমিন ডেস্ক
২ জুন ২০২০, মঙ্গলবার, ১১:১২ পূর্বাহ্ন
সিঙ্গাপুরে পাকস্থলি ক্যান্সারে আক্রান্ত নারায়ণগঞ্জের শ্রমিক রানা শিকদার (৩৪) কিভাবে দেশে ফিরেছেন তার এক বিশদ বর্ণনা দিয়েছে অনলাইন চ্যানেল নিউজ এশিয়া। এতে বলা হয়েছে চিকিৎসকরা তাকে জানান, তিনি এখন জীবনের শেষপ্রান্তে। তাই রানা তার জীবনের শেষ ইচ্ছা পোষণ করেছেন। তিনি দেশে ফিরতে চান বলে জানান। যা কয়েকটি দিন বাঁচেন, তা স্ত্রী ও ৬ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে একসঙ্গে কাটাতে চান। রানা জেনে গেছেন, জীবনের সঙ্গে তার যুদ্ধ শেষ। এখন যেকোনো সময় ডাক চলে আসবে। তাকে চলে যেতেই হবে। সিঙ্গাপুরে তিনি শিপইয়ার্ডে শ্রমিকের কাজ করতেন। চিকিৎসকরা তাকে শেষ কথা জানিয়ে দেয়ার পর দেশে ফেরার চেষ্টা করেছিলেন। তার ফ্লাইট ছিল ১৯ শে মে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে দেয়া লকডাউনে তার দেশে ফেরায় বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়। ন্যাশনাল ক্যান্সার সেন্টার সিঙ্গাপুরের (এনসিসিএস) ডা. সিন্থিয়া গোহ এ খবরটা জানতে পেরেছেন তিনদিন পরে। তিনি আরো জেনেছেন, পরবর্তী ফ্লাইট হতে পারে ১০ই জুন। এনসিসিএসের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সিন্থিয়া। তিনি বলেছেন, সবাই খুব হতাশার মধ্যে তখন। রানার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। তিনি কয়দিন বাঁচবেন তা বলা কঠিন। রোগীদের দেখাশোনা বিষয়ক এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের নেটওয়ার্কের চেয়ার ডা. সিনথিয়া। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের (এসজিএইচ) মেডিকেল টিম যখন বাংলাদেশের হাসপাতালে রানাকে স্থানান্তরের বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তখনই তিনি রানার সম্পর্কে জানতে পারেন। ডা. সিনথিয়া তৎপর হয়ে ওঠেন। তিনি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে তিন দিনের মধ্যে সংগ্রহ করেন ৬০ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার। তার পরিশ্রমে রানাকে একটি প্রাইভেট জেটে করে দেশে ফেরত পাঠানোর আয়োজন করেন। সিনথিয়া বলেন, আমরা এটা এমনভাবে ব্যবস্থা করেছি যাতে পবিত্র রমজানের শেষ রোজার দিন তিনি দেশে ফিরে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন। তারপরের দিন স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে পারেন। পুরো ঘটনাটা একটা রূপকথার মতো সাজানো হয়। বিষয়টা আমার কাছে খুব স্পেশাল ছিল।
কেন রানাকে তার শেষ ইচ্ছা পূরণের বিষয়ে সংকল্পবদ্ধ হয়েছেন ডা. সিনথিয়া, তা বুঝতে হলে পিছন ফিরে যেতে হবে এপ্রিলে। তখন এসজিএইচের বেডে পড়ে ছিলেন রানা। তার অবস্থা ক্রমশ খারাপ থেকে খারাপের দিকে যাচ্ছে। চিকিৎসকরা এটা নিশ্চিত করেছেন। এর আগে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়েছিল। সোমবার রানার স্ত্রী মৌসুমী আকতার (২৫) বলেছেন, ক্যান্সার সম্পর্কে রানা তার পরিবারের সদস্যদের প্রথম দিকে কিছু জানান নি। রানার আত্মবিশ^াস ছিল, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার মান অত্যন্ত ভাল। সেখানে চিকিৎসায় তিনি ভাল হয়ে যাবেন। মৌসুমী আকতার আরো বলেন, যখন চিকিৎসকরা রানাকে আরো অপারেশনের জন্য সম্মতি চান, তখনই রানা তাকে বিষয়টি জানান। মৌসুমী বলেন, তখনই তার ভয়বহতার খবর আমরা জানতে পারি। তারপর থেকে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার মধ্যে সময় যাচ্ছে।
অপারেশনের সময় চিকিৎসকরা দেখতে পান ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে তার পুরো পাকস্থলি, পেটে। তিনি মোটেও ঠিক নেই। এমনকি তাকে কেমোথেরাপি দেয়ার মতো অবস্থাও নেই। এ সময়ই হাল ছেড়ে দেন ডা. সিনথিয়া। তিনি বলেন, তখনই আমরা দেখতে পাই আর কিছু করার নেই। এ সময়ই রানা বলেন, তাহলে আমার জন্য আর কিইবা অপেক্ষা করছে। আসলে তিনি একটু স্বস্তি নিয়ে মরতে চেয়েছেন। তবে শেষ সময় নিজের সন্তানকে কাছে দেখতে চেয়েছেন। তাই তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়।
সর্বশেষ পরিবারের সঙ্গে রানা সাক্ষাত করেছেন গত বছর সেপ্টেম্বরে। তারপর অন্য স্বদেশীর মতো তাকেও ফিরে যেতে হয়েছে সিঙ্গাপুরে। এর আগে অনেক বছর সিঙ্গাপুরে কাজ করেছেন তিনি। রানা মাত্র ১৭ বছর বয়সে সেখানে প্রথম গিয়েছেন। তারপর থেকে তিনি সিঙ্গাপুরেই।
রানা শিকদারের ভাই মাসুম (৩৬)। ভাইকে তারা মারা যাওয়ার আগে দেখতে পাবেন কিনা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ, যা বর্তমানে করোনা ভাইরাসের হটস্পট। এই করোনা ভাইরাসের কারণেই নির্ধারিত ১৯ মের যাত্রা বন্ধ হয়ে যায় রানার। এদিন ন্যাশনাল কাউন্সিল অব সোশ্যাল সার্ভিসের প্রেসিডেন্ট ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু অনিতা ফ্যামের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ডা. সিনথিয়া। অনিতা তাকে পরামর্শ দেন তাদের উচিত মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স সেন্টারের (এমডব্লিউসি) সঙ্গে যোগাযোগ করা। এই সংগঠনটি সিঙ্গাপুরে অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার দেখাশোনা করে। এক পর্যায়ে এমডব্লিউসি রানা শিকদারের ঘটনা নিয়ে হাজির হয় সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাই কমিশনে। ডা. সিনথিয়া বলেন, কিন্তু রানাকে দেশে ফেরত পাঠানোর মতো রিসোর্স ছিল না কমিশনের। এ অবস্থায় বিষয়টা হাতে নেয় এমডব্লিউসি। তারা জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে থাকে। অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করতে থাকে। ওদিকে সময় চলে যেতে থাকে। ডা. সিনথিয়া বুঝতে পারেন ওই অর্থের জন্য অপেক্ষা করা তাদের ঠিক হবে না। এরপরের দিন তাদের টিম হোপ মেডফ্লাইট এশিয়ার মারফত ৫৫ হাজার ডলারে সবচেয়ে কম খরচে বাংলাদেশের জন্য একটি মেডিকেল ফ্লাইট ম্যানেজ করেন। হস্তক্ষেপ করে এমডব্লিউসি। বিমান সংস্থাটির ইউনিয়নের সঙ্গে তাদের কথা হয়। ফলে কয়েক হাজার ডলার কম নিতে রাজি হয় তারা।
এর পরেই আসে প্রশাসনিক বেশ কতগুলো চ্যালেঞ্জ, যা থেকে তাদের উদ্যোগ বাতিল হওয়ার উপক্রম হয়। ফ্লাইট রেডি হয়। তখন বাংলাদেশ হাই কমিশন থেকে ডা. সিনথিয়াকে কল করা হয়। জানতে চাওয়া হয় রানা শিকদারের বিষয়ে এবং ল্যান্ডিং পারমিট নিয়ে কথা হয়। বলা হয়, ল্যান্ডিং পারমিটের জন্য রানাকে কে বাংলাদেশে গ্রহণ করবে তা তাদেরকে জানাতে হবে। এ সময়ে বাংলাদেশে যেসব নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত আছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ডা. সিনথিয়া। তিনি জানান, ঢাকায় বিমানবন্দরে সবাই কাউকে না কাউকে চেনেন। সেখানে সবাই তাকে সাহায্য করতে চেয়েছেন। তাকে বলা হয়, ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল থেকে একটি লেটার পাঠাতে। কিন্তু দিনটি ছিল শুক্রবার। এদিন এই হাসপাতাল বন্ধ। তবু তিনি কোনমতে চিঠি ম্যানেজ করতে সক্ষম হন। তা জমা দেন বাংলাদেশ হাই কমিশনে। কিন্তু তাতেই সব শেষ হয়ে যায় না। ডা. সিনথিয়াকে বলা হয়, তাকে প্রমাণ দিতে হবে যে, রানাকে নিয়ে পাইলট, চিকিৎসক সহ যারাই বাংলাদেশে ল্যার্ন্ডি করবেন তাদের সবার করোনা নেগেটিভ। এক্ষেত্রে মেডিকেল ইভাকুয়েশন বিষয়ক কোম্পানি বলে, এটার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ, রানা শিকদার ছাড়া অন্য কেউ বিমান থেকে নামবেন না। ফলে ডা. সিনথিয়া আবার হাই কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি বলেন, আমি তাদেরকে বললাম, দেখুন রানার সঙ্গে যারা যাবেন তারা আপনার দেশে প্রবেশ করবেন না। আপনি কি শুধু তাদেরকে ল্যান্ডিং করার এবং তারপরই উড্ডয়নে ব্যবস্থা করতে পারেন? আমার মনে হলো, এ প্রশ্নে তাকে বেশ কতগুলো ধাপ পাড় হতে হবে। কিন্তু তিনি ফিরে এলেন এবং বললেন, ঠিক আছে।
তখন প্রায় বিকেল। ডা. সিনথিয়া স্বস্তির নিশ^াস ফেলছেন। মনে করছেন রানা দেশে উড়ে যেতে পারবেন। কিন্তু ভাগ্য তো গতি বলে দেয়। ল্যান্ডিং ক্লিয়ারেন্স ত্বরান্বিত করতে হাই কমিশনের দ্বারস্থ হন আবার ডা. সিনথিয়া। অন্যদিকে রানাকে বিদায় জানাতে প্রস্তুতি নিতে থাকে এসজিএইচের টিম। তারা নিশ্চিত করলেন যে, তার সঙ্গে পাসপোর্ট, দরকারি জিনিসপত্র, আর তার ছেলের জন্য তারা যেসব খেলনা কিনেছেন, তা গুছিয়ে নিতে লাগলেন। এ সময় ছেলের কথা মনে করে অশ্রু ঝরতে থাকে রানা শিকদারের। তার ছেলে বলেছিল, আমি তোমাকে আমার খেলনা কিনতে পাঠিয়েছি। তুমি অসুস্থ হয়েছো কেন?
অবশেষে রাত সাড়ে আটটায় ল্যান্ডিং ক্লিয়ারেন্স পান তারা। রানা শিকদারকে একটি এম্বুলেন্সে তোলা হয়, যা তাকে নিয়ে যাবে সেলেটার এয়ারপোর্টে। সেখানে রাত ৯টার সামান্য পরে তার দেশের উদ্দেশে যাত্রা করার কথা। অবশেষে দেশে ফেরেন রানা। পিজি হাসপাতাল হয়ে ঘরে ফিরেছেন। স্ত্রী, সন্তানদের কাছে ফিরেছেন। ডা. সিনথিয়া ও তার টিমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মৌসুমী। বর্তমানে টেলিমেডিসিন টিকিৎসা দিচ্ছেন ডা. শাহিনুর কবির। তিনি বলেছেন, রানা এখন কিছু খেতে পারেন না। নড়াচড়া করতে পারেন না। তার অবস্থার অবনতি হচ্ছে।
কেন রানাকে তার শেষ ইচ্ছা পূরণের বিষয়ে সংকল্পবদ্ধ হয়েছেন ডা. সিনথিয়া, তা বুঝতে হলে পিছন ফিরে যেতে হবে এপ্রিলে। তখন এসজিএইচের বেডে পড়ে ছিলেন রানা। তার অবস্থা ক্রমশ খারাপ থেকে খারাপের দিকে যাচ্ছে। চিকিৎসকরা এটা নিশ্চিত করেছেন। এর আগে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়েছিল। সোমবার রানার স্ত্রী মৌসুমী আকতার (২৫) বলেছেন, ক্যান্সার সম্পর্কে রানা তার পরিবারের সদস্যদের প্রথম দিকে কিছু জানান নি। রানার আত্মবিশ^াস ছিল, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার মান অত্যন্ত ভাল। সেখানে চিকিৎসায় তিনি ভাল হয়ে যাবেন। মৌসুমী আকতার আরো বলেন, যখন চিকিৎসকরা রানাকে আরো অপারেশনের জন্য সম্মতি চান, তখনই রানা তাকে বিষয়টি জানান। মৌসুমী বলেন, তখনই তার ভয়বহতার খবর আমরা জানতে পারি। তারপর থেকে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার মধ্যে সময় যাচ্ছে।
অপারেশনের সময় চিকিৎসকরা দেখতে পান ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে তার পুরো পাকস্থলি, পেটে। তিনি মোটেও ঠিক নেই। এমনকি তাকে কেমোথেরাপি দেয়ার মতো অবস্থাও নেই। এ সময়ই হাল ছেড়ে দেন ডা. সিনথিয়া। তিনি বলেন, তখনই আমরা দেখতে পাই আর কিছু করার নেই। এ সময়ই রানা বলেন, তাহলে আমার জন্য আর কিইবা অপেক্ষা করছে। আসলে তিনি একটু স্বস্তি নিয়ে মরতে চেয়েছেন। তবে শেষ সময় নিজের সন্তানকে কাছে দেখতে চেয়েছেন। তাই তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়।
সর্বশেষ পরিবারের সঙ্গে রানা সাক্ষাত করেছেন গত বছর সেপ্টেম্বরে। তারপর অন্য স্বদেশীর মতো তাকেও ফিরে যেতে হয়েছে সিঙ্গাপুরে। এর আগে অনেক বছর সিঙ্গাপুরে কাজ করেছেন তিনি। রানা মাত্র ১৭ বছর বয়সে সেখানে প্রথম গিয়েছেন। তারপর থেকে তিনি সিঙ্গাপুরেই।
রানা শিকদারের ভাই মাসুম (৩৬)। ভাইকে তারা মারা যাওয়ার আগে দেখতে পাবেন কিনা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ, যা বর্তমানে করোনা ভাইরাসের হটস্পট। এই করোনা ভাইরাসের কারণেই নির্ধারিত ১৯ মের যাত্রা বন্ধ হয়ে যায় রানার। এদিন ন্যাশনাল কাউন্সিল অব সোশ্যাল সার্ভিসের প্রেসিডেন্ট ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু অনিতা ফ্যামের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ডা. সিনথিয়া। অনিতা তাকে পরামর্শ দেন তাদের উচিত মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স সেন্টারের (এমডব্লিউসি) সঙ্গে যোগাযোগ করা। এই সংগঠনটি সিঙ্গাপুরে অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার দেখাশোনা করে। এক পর্যায়ে এমডব্লিউসি রানা শিকদারের ঘটনা নিয়ে হাজির হয় সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাই কমিশনে। ডা. সিনথিয়া বলেন, কিন্তু রানাকে দেশে ফেরত পাঠানোর মতো রিসোর্স ছিল না কমিশনের। এ অবস্থায় বিষয়টা হাতে নেয় এমডব্লিউসি। তারা জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে থাকে। অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করতে থাকে। ওদিকে সময় চলে যেতে থাকে। ডা. সিনথিয়া বুঝতে পারেন ওই অর্থের জন্য অপেক্ষা করা তাদের ঠিক হবে না। এরপরের দিন তাদের টিম হোপ মেডফ্লাইট এশিয়ার মারফত ৫৫ হাজার ডলারে সবচেয়ে কম খরচে বাংলাদেশের জন্য একটি মেডিকেল ফ্লাইট ম্যানেজ করেন। হস্তক্ষেপ করে এমডব্লিউসি। বিমান সংস্থাটির ইউনিয়নের সঙ্গে তাদের কথা হয়। ফলে কয়েক হাজার ডলার কম নিতে রাজি হয় তারা।
এর পরেই আসে প্রশাসনিক বেশ কতগুলো চ্যালেঞ্জ, যা থেকে তাদের উদ্যোগ বাতিল হওয়ার উপক্রম হয়। ফ্লাইট রেডি হয়। তখন বাংলাদেশ হাই কমিশন থেকে ডা. সিনথিয়াকে কল করা হয়। জানতে চাওয়া হয় রানা শিকদারের বিষয়ে এবং ল্যান্ডিং পারমিট নিয়ে কথা হয়। বলা হয়, ল্যান্ডিং পারমিটের জন্য রানাকে কে বাংলাদেশে গ্রহণ করবে তা তাদেরকে জানাতে হবে। এ সময়ে বাংলাদেশে যেসব নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত আছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ডা. সিনথিয়া। তিনি জানান, ঢাকায় বিমানবন্দরে সবাই কাউকে না কাউকে চেনেন। সেখানে সবাই তাকে সাহায্য করতে চেয়েছেন। তাকে বলা হয়, ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল থেকে একটি লেটার পাঠাতে। কিন্তু দিনটি ছিল শুক্রবার। এদিন এই হাসপাতাল বন্ধ। তবু তিনি কোনমতে চিঠি ম্যানেজ করতে সক্ষম হন। তা জমা দেন বাংলাদেশ হাই কমিশনে। কিন্তু তাতেই সব শেষ হয়ে যায় না। ডা. সিনথিয়াকে বলা হয়, তাকে প্রমাণ দিতে হবে যে, রানাকে নিয়ে পাইলট, চিকিৎসক সহ যারাই বাংলাদেশে ল্যার্ন্ডি করবেন তাদের সবার করোনা নেগেটিভ। এক্ষেত্রে মেডিকেল ইভাকুয়েশন বিষয়ক কোম্পানি বলে, এটার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ, রানা শিকদার ছাড়া অন্য কেউ বিমান থেকে নামবেন না। ফলে ডা. সিনথিয়া আবার হাই কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি বলেন, আমি তাদেরকে বললাম, দেখুন রানার সঙ্গে যারা যাবেন তারা আপনার দেশে প্রবেশ করবেন না। আপনি কি শুধু তাদেরকে ল্যান্ডিং করার এবং তারপরই উড্ডয়নে ব্যবস্থা করতে পারেন? আমার মনে হলো, এ প্রশ্নে তাকে বেশ কতগুলো ধাপ পাড় হতে হবে। কিন্তু তিনি ফিরে এলেন এবং বললেন, ঠিক আছে।
তখন প্রায় বিকেল। ডা. সিনথিয়া স্বস্তির নিশ^াস ফেলছেন। মনে করছেন রানা দেশে উড়ে যেতে পারবেন। কিন্তু ভাগ্য তো গতি বলে দেয়। ল্যান্ডিং ক্লিয়ারেন্স ত্বরান্বিত করতে হাই কমিশনের দ্বারস্থ হন আবার ডা. সিনথিয়া। অন্যদিকে রানাকে বিদায় জানাতে প্রস্তুতি নিতে থাকে এসজিএইচের টিম। তারা নিশ্চিত করলেন যে, তার সঙ্গে পাসপোর্ট, দরকারি জিনিসপত্র, আর তার ছেলের জন্য তারা যেসব খেলনা কিনেছেন, তা গুছিয়ে নিতে লাগলেন। এ সময় ছেলের কথা মনে করে অশ্রু ঝরতে থাকে রানা শিকদারের। তার ছেলে বলেছিল, আমি তোমাকে আমার খেলনা কিনতে পাঠিয়েছি। তুমি অসুস্থ হয়েছো কেন?
অবশেষে রাত সাড়ে আটটায় ল্যান্ডিং ক্লিয়ারেন্স পান তারা। রানা শিকদারকে একটি এম্বুলেন্সে তোলা হয়, যা তাকে নিয়ে যাবে সেলেটার এয়ারপোর্টে। সেখানে রাত ৯টার সামান্য পরে তার দেশের উদ্দেশে যাত্রা করার কথা। অবশেষে দেশে ফেরেন রানা। পিজি হাসপাতাল হয়ে ঘরে ফিরেছেন। স্ত্রী, সন্তানদের কাছে ফিরেছেন। ডা. সিনথিয়া ও তার টিমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মৌসুমী। বর্তমানে টেলিমেডিসিন টিকিৎসা দিচ্ছেন ডা. শাহিনুর কবির। তিনি বলেছেন, রানা এখন কিছু খেতে পারেন না। নড়াচড়া করতে পারেন না। তার অবস্থার অবনতি হচ্ছে।