শেষের পাতা

করোনা ময়দানের এক সাহসী চিকিৎসক ডা. সাবরিনা মেহের

কাজী সোহাগ

৩০ মে ২০২০, শনিবার, ১২:০০ অপরাহ্ন

কোভিড ময়দানের এক সাহসী চিকিৎসক ডা. সাবরিনা মেহের। দায়িত্ব পালন করছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগে। করোনা ভাইরাসে আক্রাডা. পলাশের অন্যরকম লড়াইন্ত এক প্রসূতি নারীর সিজার করে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। চিকিৎসক সমাজ থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সাধুবাদ পাচ্ছেন সাবরিনা। সম্প্রতি প্রসব ব্যাথা নিয়ে চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন প্রিয়া দাশ নামে এক নারী। আগে থেকেই ওই নারী ছিলেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। রোগীর সিরিয়াস অবস্থা দেখে বিন্দুমাত্র কালক্ষেপন করেননি ডা.সাবরিনা মেহের। করোনা আক্রান্ত জানার পরও প্রসূতি ও তার গর্ভের সন্তানকে বাঁচাতে দ্রুত ডেলিভারির উদ্যোগ নেন। ভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে শেষ করেন অপারেশন। রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেন গাইনী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর শাহানারা চৌধুরী। বর্তমানে মা ও তার সদ্যজাত সন্তান সুস্থ রয়েছেন। এদিকে অপারেশনের পরপরই অপারেশন কক্ষ ৮ ঘন্টা জীবাণুনাশক দিয়ে বন্ধ রাখা হয়। চিকিৎসকরা জানান, চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (চমেক) করোনা ভাইরাস আক্রান্ত কোন রোগীর এটাই প্রথম অপারেশন। এর মাধ্যমে হাসপাতালটি প্রমাণ করলো কোন রোগী যত্নের বাইরে নয়, সে হোক কোভিড বা নন কোভিড। তারা বলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা না পাওয়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও  গণমাধ্যমে সবসময় দেখা গেলেও কর্তব্যরত চিকিৎসকদের নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের ঘটনাগুলো অনেক সময় অজানাই থাকে। চমেকের গাইনী বিভাগে ভর্তিযোগ্য কোন রোগী ফেরত পাঠানোর কোন উদাহরণ নেই। কারন আমরা জানি চট্টগ্রাম মেডিকেলই এ বিশাল জনগোষ্ঠীর শেষ ভরসাস্থল। এ প্রসঙ্গে ডা. সাবরিনা মেহের মানবজমিনকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা স্বাস্থ্যকর্মীরা একটা চাপা ভয় ও উৎকণ্ঠা নিয়ে কাজ করছি। প্রসূতি বিভাগে জ্বরের রোগী প্রায় প্রতিদিনই দুই একজন ভর্তি হয়। খুবই সাবধানতার সঙ্গে তাদের চিকিৎসা দিতে হয়। যেহেতু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-এর প্রসূতি বিভাগ কোভিড-১৯ রোগীর সেবা দেয়ার জন্য বিশেষায়িত নয় তাই এই রোগীদের অন্য সাধারন রোগীর সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা থাকে। তাই এই সকল উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা ও তাদের আইসোলেশনে রাখা আমাদের জন্য একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। ডা. সাবরিনা মেহের বলেন, গত ১৭ই মে চট্টগ্রামে প্রথম একজন কোভিড-১৯ পজিটিভ গর্ভবতীর সিজারিয়ান অপারেশন এবং পরবর্তী সম্পূর্ন চিকিৎসাসেবা দিতে পেরে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। এটি সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র একটি গোছানো পরিকল্পনা এবং পূর্ব প্রস্তুতির কারণে। তিনি বলেন, আমাদের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর শাহানারা চৌধুরী এই ধরনের রোগীর সেবা প্রদানের লক্ষ্যে একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে দিয়েছেন। প্রিয়া দাশকে আমরা সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়েছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে পাওয়া সুরক্ষা সামগ্রী আমাদেরকে নির্ভয়ে কাজ করতে সাহায্য করেছে। তাই প্রিয়া দাশের সম্পূর্ন সুস্থ হয়ে সন্তানসহ বাড়ি যাওয়া আমাদের পরিকল্পনার সাফল্য প্রকাশ করে। আমরা তার চিকিৎসায় যুক্ত প্রতিটি স্বাস্থ্যকর্মী আজ পর্যন্ত সম্পূর্ন সুস্থ আছি এবং স্বাভাবিকভাবেই আমাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। ডা. সাবরিনা মেহের বলেন, আমি মনে করি প্রিয়ার সুস্থতা আমাদের অন্তর থেকে সকল ভয় দূর করেছে, আমাদেরকে আরো দৃঢ় ও আত্মপ্রত্যয়ী করেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status