বিশ্বজমিন
সৌদি আরবের সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও তার পরিবারকে টার্গেট করার অভিযোগ
মানবজমিন ডেস্ক
২৫ মে ২০২০, সোমবার, ১১:০৩ পূর্বাহ্ন
বৃটেনের গোয়েন্দা সংস্থা এমআই ৬ এবং পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্কের বিষয় দেখাশোনা করতেন এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ সাবেক সৌদি কর্মকর্তা ও তার পরিবারকে টার্গেট করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। পশ্চিমা সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, সৌদি আরবের ওই কর্মকর্তার নাম ড. সাদ আল জাবরি। তিনি বর্তমানে নির্বাসনে রয়েছেন কানাডায়। কিন্তু তার দু’ছেলেকে সরকারি কর্মকর্তারা তুলে নিয়ে জিম্মি করেছে বলে অভিযোগ তার অন্য ছেলের। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়েছে, পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে আল কায়েদার অনেক বোমা হামলা পরিকল্পনা ভন্ডুল করে দিতে সাহায্য করেছেন ড. সাদ আল জাবরি। সর্বোচ্চ শক্তিধর হিসেবে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের উত্থানের সময়ে তিন বছর আগে তিনি দেশ ছেড়ে নির্বাসনে চলে যান। কিন্তু তার বড় ছেলে খালিদ আল জাবরি দাবি করেছেন, তার দুই ভাইকে তুলে নিয়ে জিম্মি করা হয়েছে। গত ১৬ই মার্চ তার দুই ভাই ওমর ও সারাহকে ভোরে অপহরণ করা হয়েছে। ২০টি গাড়িতে করে নিরাপত্তা রক্ষার প্রায় ৫০ জন কর্মকর্তা গিয়ে বিছানা থেকে তাদেরকে টেনে তুলে নিয়ে গেছে। এরপরই রিয়াদে তাদের বাড়ি তল্লাশি করা হয়। খুলে নিয়ে যায় সিসিটিভির মেমোরি কার্ড। তারপর থেকে ২১ ও ২০ বছর বয়সী ওই দুই ভাইয়ের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারেন নি তারা। তাদেরকে রাখা হয়েছে কোনো এক বন্দিশিবিরে। কি কারণে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাও জানানো হয় নি। খালিদ ও তার পিতা বসবাস করেন কানাডায়। সেখান থেকে খালিদ বলেছেন, আমার দুই ভাই বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে জানি না। তিনি মনে করেন, তাদেরকে আটক করা হয়েছে, যাতে তার পিতা সৌদি আরব ফেরার জন্য দর কষাকষি করতে বাধ্য হন। কিন্তু তার পিতা সৌদি আরবে ফিরলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হবে বলে তার আশঙ্কা। খালিদ তার পিতার সম্পর্কে বলেন, আমার পিতা নিরপরাধ। কিন্তু সরকার তার বিরুদ্ধে যেকোনো মিথ্যে কথা সাজাতে পারে। এ বিষয়ে সৌদি সরকারের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায় নি।
কে এই সাদ আল জাবরি
দীর্ঘদিন ধরে তিনি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফের ডানহাত, গেটকিপার ছিলেন। ২০০০-এর দশকে আল কায়েদার উত্থানকে পরাজিত করার জন্য প্রিন্স নায়েফকে ব্যাপকভাবে কৃতিত্ব দেয়া হয়। এ ছাড়া ড. সাদ আল জাবরি ছিলেন ‘ফাইভ আইজ’ (যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড) বলে পরিচিতদের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক নির্ধারণ করার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। পশ্চিমা সাবেক একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার মতে, ফাইভ আইজের সঙ্গে এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কয়েক শত জীবন রক্ষা করেছে ২০১০ সালে। ইয়েমেনের আল কায়েদা একটি কার্গো বিমানে শক্তিশালী একটি বোমা পাচার করে শিকাগোতে। এটা রাখা ছিল একটি টোনার কার্টিজের মধ্যে। কিন্তু সৌদি আরবের গোয়েন্দা সংস্থার একজন তথ্য দানকারী ছিলেন আল কায়েদার মধ্যে। ওই ব্যক্তি তথ্য দেয় এমআই ৬ কে। এমনকি যে ডিভাইসটির ভিতরে ওই বোমা ছিল তার সিরিয়াল নাম্বার পর্যন্ত বলে দেন।
এরপর বৃটেনের সন্ত্রাস বিরোধী পুলিশ ওই বোমাটি শনাক্ত করে তা ইস্ট মিডল্যান্ডস এয়ারপোর্টে নিষ্ক্রিয় করে। একজন সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, যদি ওই বোমাটি বিমানের ভিতরে পরিকল্পনা মতো বিস্ফোরিত হতো তাহলে শিকাগোতে কয়েক শত মানুষ মারা যেতে পারতেন। আরেকজন পশ্চিমা গোয়েন্দা বিষয়ক সাবেক কর্মকর্তা বলেন, ড. সাদ জাবরি সৌদি আরবের সন্ত্রাস বিরোধী প্রচেষ্টাকে পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। সৌদি আরবের নিষ্ঠুরতা, সহিংসতা, স্বীকারোক্তি আদায়ের পদ্ধতিকে পাল্টে তিনি সেখানে আধুনিক ফরেনসিক এবং কমপিউটারভিত্তিত ডাটা ব্যবস্থায় নিয়ে এসেছেন।
ড. সাদ আল জাবরি এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটি থেকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ওপর ডক্টরেট সম্পন্ন করেছেন। তিনি সৌদি আরবে মন্ত্রীর পদমর্যায় আসীন ছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তিনি একজন মেজর জেনারেলের পদবী পেয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৫ সালে সবকিছু পাল্টে যায়। বাদশা আবদুল্লাহ মারা যান। তার সৎছেলে সালমান ক্ষমতায় আসেন। তিনি তার ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিয়োগ দেন। তিনিই তার দেশকে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার নির্দেশ দেন সৌদি আরবের সেনাবাহিনীকে। কিন্তু তার এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছিলেন ড. সাদ আল জাবরি। তিনি বলেছিলেন, এই যুুদ্ধ শুরু করা যাবে। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পথ থাকবে না। বাস্তবেই ৫ বছরের বেশ হয় সৌদি আরব ইয়েমেন যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করেছে। কিন্তু এখনও সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পথ পায় নি সৌদি আরব।
বিবিসি লিখেছে, ২০১৭ সালে পিতা সালমানের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র করেন মোহাম্মদ বিন সালমান। পরবর্তীতে সৌদি আরবের সিংহাসনের বসার লাইনে ছিলেন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফ। কিন্তু তাকে সরিয়ে দিয়ে তিনি নিজে ক্রাউন প্রিন্স হন। আটক করা হয় প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফকে। এখনও তিনি গ্রেপ্তার অবস্থায় আছেন। তার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। যারা তার সঙ্গে কাজ করতেন তাদেরকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় ড. সাদ আল জাবরি নির্বাসনে কানাডা চলে যান। কিন্তু পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা মনে করেন, প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এখনও ডা. সাদ আল জাবরিকে তার বৈধতার জন্য একটি হুমকি হিসেবে দেখেন। তবে বিষয়টিকে মিটমাট করার জন্য সৌদি আরবের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করেছে ড. জাবরির পরিবার। কিন্তু তারা সফল হন নি। তাই এখন প্রকাশ্যে এসে এসব কথা জানাচ্ছেন। তার বড় ছেলে খালিদ বলেন, বড় রকমের হুমকিতে টার্গেট করা হয়েছে ড. সাদ আল জাবরিকে। এর পক্ষে অনেক ইঙ্গিত আছে। বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে কানাডা কর্তৃপক্ষ। তবে আমরা দেশপ্রেমিক। আমাদের দেশকে ভালবাসি। আমরা সৌদি আরবকে বিব্রত করতে চাই না। কিন্তু ওমর ও সারাহকে অপহরণ করা হয়েছে। এটা একটি রাষ্ট্র কর্তৃক দিনদুপুরে দস্যুতা।
কে এই সাদ আল জাবরি
দীর্ঘদিন ধরে তিনি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফের ডানহাত, গেটকিপার ছিলেন। ২০০০-এর দশকে আল কায়েদার উত্থানকে পরাজিত করার জন্য প্রিন্স নায়েফকে ব্যাপকভাবে কৃতিত্ব দেয়া হয়। এ ছাড়া ড. সাদ আল জাবরি ছিলেন ‘ফাইভ আইজ’ (যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড) বলে পরিচিতদের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক নির্ধারণ করার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। পশ্চিমা সাবেক একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার মতে, ফাইভ আইজের সঙ্গে এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কয়েক শত জীবন রক্ষা করেছে ২০১০ সালে। ইয়েমেনের আল কায়েদা একটি কার্গো বিমানে শক্তিশালী একটি বোমা পাচার করে শিকাগোতে। এটা রাখা ছিল একটি টোনার কার্টিজের মধ্যে। কিন্তু সৌদি আরবের গোয়েন্দা সংস্থার একজন তথ্য দানকারী ছিলেন আল কায়েদার মধ্যে। ওই ব্যক্তি তথ্য দেয় এমআই ৬ কে। এমনকি যে ডিভাইসটির ভিতরে ওই বোমা ছিল তার সিরিয়াল নাম্বার পর্যন্ত বলে দেন।
এরপর বৃটেনের সন্ত্রাস বিরোধী পুলিশ ওই বোমাটি শনাক্ত করে তা ইস্ট মিডল্যান্ডস এয়ারপোর্টে নিষ্ক্রিয় করে। একজন সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, যদি ওই বোমাটি বিমানের ভিতরে পরিকল্পনা মতো বিস্ফোরিত হতো তাহলে শিকাগোতে কয়েক শত মানুষ মারা যেতে পারতেন। আরেকজন পশ্চিমা গোয়েন্দা বিষয়ক সাবেক কর্মকর্তা বলেন, ড. সাদ জাবরি সৌদি আরবের সন্ত্রাস বিরোধী প্রচেষ্টাকে পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। সৌদি আরবের নিষ্ঠুরতা, সহিংসতা, স্বীকারোক্তি আদায়ের পদ্ধতিকে পাল্টে তিনি সেখানে আধুনিক ফরেনসিক এবং কমপিউটারভিত্তিত ডাটা ব্যবস্থায় নিয়ে এসেছেন।
ড. সাদ আল জাবরি এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটি থেকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ওপর ডক্টরেট সম্পন্ন করেছেন। তিনি সৌদি আরবে মন্ত্রীর পদমর্যায় আসীন ছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তিনি একজন মেজর জেনারেলের পদবী পেয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৫ সালে সবকিছু পাল্টে যায়। বাদশা আবদুল্লাহ মারা যান। তার সৎছেলে সালমান ক্ষমতায় আসেন। তিনি তার ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিয়োগ দেন। তিনিই তার দেশকে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার নির্দেশ দেন সৌদি আরবের সেনাবাহিনীকে। কিন্তু তার এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছিলেন ড. সাদ আল জাবরি। তিনি বলেছিলেন, এই যুুদ্ধ শুরু করা যাবে। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পথ থাকবে না। বাস্তবেই ৫ বছরের বেশ হয় সৌদি আরব ইয়েমেন যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করেছে। কিন্তু এখনও সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পথ পায় নি সৌদি আরব।
বিবিসি লিখেছে, ২০১৭ সালে পিতা সালমানের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র করেন মোহাম্মদ বিন সালমান। পরবর্তীতে সৌদি আরবের সিংহাসনের বসার লাইনে ছিলেন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফ। কিন্তু তাকে সরিয়ে দিয়ে তিনি নিজে ক্রাউন প্রিন্স হন। আটক করা হয় প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফকে। এখনও তিনি গ্রেপ্তার অবস্থায় আছেন। তার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। যারা তার সঙ্গে কাজ করতেন তাদেরকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় ড. সাদ আল জাবরি নির্বাসনে কানাডা চলে যান। কিন্তু পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা মনে করেন, প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এখনও ডা. সাদ আল জাবরিকে তার বৈধতার জন্য একটি হুমকি হিসেবে দেখেন। তবে বিষয়টিকে মিটমাট করার জন্য সৌদি আরবের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করেছে ড. জাবরির পরিবার। কিন্তু তারা সফল হন নি। তাই এখন প্রকাশ্যে এসে এসব কথা জানাচ্ছেন। তার বড় ছেলে খালিদ বলেন, বড় রকমের হুমকিতে টার্গেট করা হয়েছে ড. সাদ আল জাবরিকে। এর পক্ষে অনেক ইঙ্গিত আছে। বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে কানাডা কর্তৃপক্ষ। তবে আমরা দেশপ্রেমিক। আমাদের দেশকে ভালবাসি। আমরা সৌদি আরবকে বিব্রত করতে চাই না। কিন্তু ওমর ও সারাহকে অপহরণ করা হয়েছে। এটা একটি রাষ্ট্র কর্তৃক দিনদুপুরে দস্যুতা।