বাংলারজমিন

খুলনায় আশ্রয়হীন হাজারো মানুষ, ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে

২২ মে ২০২০, শুক্রবার, ৫:১২ পূর্বাহ্ন

খুলনার বটিয়াঘাটা সড়ক দিয়ে শোলমারী নদী পার হলেই বটিয়াঘাটা বাজার। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবে উড়ে গেছে বাজারের দোকানের টিনের চাল। বাজারের কাছে পৌঁছাতেই কানে ভেসে আসলো কান্নার শব্দ। নদীর দিকে যেতেই দেখা গেল সামান্য কিছু আসবাব ধরে বিলাপ করছেন এক নারী। পশুর নদের পাড়ে যে কটি কাঁচা দোকান ঘর ছিল তার সবগুলোই ভেঙ্গে নদীতে ভেসে গেছে। এর একটি ঘরেই পরিবার নিয়ে বাস করতেন কল্পনা নারী। ঝড়ের রাতে স্থানীয়রা অনেকটা জোর করেই তাকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যান। সকালে এসে দেখেন তার ঘর নেই। কল্পনা রানী নামের ওই নারী বলেন, ‘ঝড়ে ঘর তো নিছেই, ঘরের মাল-সামানা কিচ্ছু রেখে যায়নি। নতুন করে কোথাও যে থাকবো তার কোনো উপায়  নেই।’
বটিয়াঘাটা সড়ক দিয়ে দাকোপ উপজেলার দিকে যেতে পশুর নদ তীরের বেশিরভাগ বাড়িই কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশিরভাগ ঘরেরই চাল উড়ে গেছে। এমনই চিত্র দক্ষিণাঞ্চলের খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি এবং বাগেরহাটের মংলা, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ এলাকার। সব মিলিয়ে এ অঞ্চলে এখন শুধু হাহাকার। একদিকে ছিল প্রাণঘাতি করোনার আতংক এর মধ্যে আম্পানের আঘাত। এ যেন মরার উপর খড়ার ঘা। ঈদ উল ফিতরের আনন্দ সব ম্লান হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে খুলনায় ৭০ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১০ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণভাবে ভেঙে গেছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ৬০ কিলোমিটার বাঁধ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী জানান, খুলনায় ৪০ কিলোমিটার  বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১০ কিলোমিটার সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। বিধ্বস্ত হওয়া বাঁধের পুরোটাই কয়রা উপজেলায়। এছাড়াও দাকোপ, বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া উপজেলায় আংশিক ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। তিনি বলেন, দাকোপের বেড়িবাঁধের অধিকাংশ এলাকায় দু’পাশের পানির চাপে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও বটিয়াঘাটার বারোআড়িয়া, সুরখালী, বারোভুঁইয়া, শিয়ালীডাঙ্গা, কোঁদলা এলাকার অধিকাংশ স্থানের বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও কয়রা উপজেলার ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের মধ্যে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ছোটো আংটিহারা বাকেরগাজীর বাড়ির পাশে শাকবাড়িয়া নদীর প্রায় ১২০ গজ  বেড়িবাঁধ, আংটিহারা মজিদ গাজীর পাশে ৩০০ গজ বেড়িবাঁধ, জোড়শিং বাজারের পাশে ৫০০ গজ বেড়িবাঁধ, কপোতাক্ষ নদের চোরামুখা খেয়াঘাটের কাছে ৫০০ গজ বেড়িবাঁধ ও গোলখালী তসলিম মোল্লার বাড়ির পাশে ৫০০ গজ বেড়িবাঁধ, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাজীপাড়া গ্রামের মাথায় কপোতাক্ষ নদের ৬০০ গজ বেড়িবাঁধ, কাটকাটা বাজারের শাকবাড়ীয়া নদীর ৩০০ গজ বেড়িবাঁধ, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া গ্রামে কপোতাক্ষ নদের ৭০০ গজ বেড়িবাঁধ এবং কয়রা সদর ইউনিয়নের হরিণখোলা ও গোবরা ঘাটাখালি গ্রামে কপোতাক্ষ নদের আধা কিলোমিটার এলাকাসহ ১০টি জায়গার বেড়িবাঁধ ভেঙে এবং মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কয়রা নদীর পানি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধ উপচে লবণ পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে।
কয়রা উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত মোস্তাজিবুল হক জানান,  প্রায় ১১ বছর আগের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলার ক্ষত সারতে না সারতেই আস্পনের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে সব। গত ১০ বছরেও বাঁধ মেরামত হয়নি। টেকসই বাঁধ না হলে এখানে ভবিষ্যতে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়বে। দাকোপের রাশিদা বেগম জানান, ঝড়ের সময় নদীর ঢেউ ঘরের নিচের মাটি সরিয়ে নিয়ে গেছে। ফলে ঘর পড়ে গেছে।
খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, কয়রা উপজেলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১২১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ১০ কিলোমিটার ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ৪০ কিলোমিটার বাঁধ। ৫০ কোটি টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status