কলকাতা কথকতা
কলকাতা কথকতা
বিধ্বস্ত পম্পাই নগরীর ছায়া কলকাতায়, শহর যেন ধংসস্তুপ
জয়ন্ত চক্রবর্তী, কলকাতা
২১ মে ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১২:১৬ অপরাহ্ন
এ কোন মহানগরী? এই কি আমার সেই চির চেনা কলকাতা? আম্ফানের তাণ্ডবের পর বৃহস্পতিবার সকালে বেরিয়েছিলাম নগর পরিক্রমায়। আগ্নেয়গিরির অগ্নি উদগিরনে প্রাচীন রোমের পম্পাই নগরীর শেষ হয়ে যাওয়ার কাহিনী পড়েছি। আম্ফানের থাবায় কলকাতা যেন সেই অবস্থায়। ভাঙা গাছের স্তুপ, দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া বাতিস্তম্ভ, মাটিতে লুটিয়ে পড়া হোর্ডিং, ভেঙে পড়া বাড়ি, ওলোটপালোট খাওয়া গাড়ি - এই কলকাতা তো অচেনা, অজানা। পূর্ব কলকাতার সব থেকে উঁচু বহুতল আরবানা দিয়ে আমাদের পরিক্রমা শুরু হোক। পূর্ব কলকাতায় যখন বুধবার ঘণ্টায় একশো বারো কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে গেছে তখন আরবানার চল্লিশ তলার বাসিন্দারা অনুভব করেছেন গোটা বাড়িটি কাঁপছে। এরই মধ্যে ভেঙে পরে চার নম্বর গেটটি। বৃহস্পতিবার দেখলাম ঝড়ের জোর এত বেশি ছিল যে লোহার বিমগুলো বেঁকে গেছে। ই এম বাইপাসে ভেঙে পড়েছে বহু গাছ। বালিগঞ্জ গার্ডেন্স আর বালিগঞ্জ প্লেস যেন ধংস স্তুপ। গড়িয়াহাট মার্কেটের একটি অংশ উড়ে গেছে। দক্ষিণের রাধাচূড়া আর কৃষ্ণচূড়া গাছের আর একটিও অবশিষ্ট নেই। ময়দান চত্বরে যেন ভূমিকম্প হয়ে গেছে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে লুটিয়ে পড়েছে বহু গাছ। কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাব এর তাঁবুর ওপর ভেঙে পড়েছে তিনটি আম গাছ। মোহনবাগান ক্লাবের ছোট লনটি বিপর্যস্ত। তোরণ ভেঙেছে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের। সেন্ট্রাল এভিনিউ, চাঁদনী চক স্বাভাবিক হয়নি। যান চলাচল বন্ধ বহু রাস্তায়। টালিগঞ্জর পূর্ব পুঁটিআড়িতে ভেঙে পড়েছে বাড়ি। দক্ষিণ আর পূর্ব কলকাতার থেকে কিছুটা ভালো অবস্থা উত্তর আর মধ্যে কলকাতার। কিন্তু সব মিলিয়ে এই কলকাতাকে চিনিনা। করোনা যদি শহরের হৃদপিণ্ডের অক্সিজেন শুষে নেয়, তাহলে আম্ফান কলকাতার মস্তিস্কতে পৌঁছে দিল সেরিব্রাল স্ট্রোক। কলকাতা সত্যিই যেন আজ বিকলাঙ্গ !