ভারত
ফেক নিউজ ছড়ানোর অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গে ৪০ জন গ্রেপ্তার
কলকাতা প্রতিনিধি
২৩ এপ্রিল ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১০:১৯ পূর্বাহ্ন
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ফেক নিউজের রমরমা চলছে। সঠিক নিউজ আর ফেক নিউজের মধ্যে পার্থক্য খুঁজতে গিয়ে মানুষ দিশেহারা। আসলে মিথ্যা খবর ও গুজব ছড়ানোর প্রবণতা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে উদ্বিগ্ন প্রশাসন। সুপ্রিম কোর্টও ফেক নিউজের ব্যাপারে সতর্কতার কথা জানিয়েছে। জানা গেছে, লকডাউনের সুযোগে করোনা নিয়ে ফেক নিউজের প্রবণতা বেড়েছে। পাশাপাশি অনেকে সত্যতা যাচাই না করেই সেইসব ফেক নিউজ ফরোয়ার্ড করছেন। ফেক নিউজের মাধ্যমে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে। ছড়ানো হচ্ছে ঘৃণাও। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা খবর ও গুজব ছড়ানো ঠেকাতে কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সাইবার সেল বিশেষ টিম গঠন করে কাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সিআইডিও। গত তিন সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া দুশোর বেশি মানুষকে ফেক নিউজ শেয়ার বা ফরোয়ার্ড করার জন্য ডেকে সতর্ক করা হয়েছে। পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, পুলিশ ফেক নিউজ ছড়ানোর জন্য যাদেও গ্রেপ্তার করেছে তাদের মধ্যে যেমন গৃহবধূ, ছাত্র, শিক্ষক রয়েছেন তেমনি রয়েছেন অধ্যাপক, সরকারি কর্মী ও সাবেক এমপিও। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিপর্যয় মোকাবিলা আইন,২০০৫-এর ৫৪ ধারা এবং ভারতীয় ফৌজদারি বিধির ৫০৫(১)(ক) ধারা অনুযায়ী এদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মুরলীধর শর্মা জানিয়েছেন, সাইবার দুনিয়ায় আমরা কড়া নজরদারি চালাচ্ছি। জানা গেছে, গত ২৮ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ফেক নিউজের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেবার পরই পুলিশ তৎপর হয়ে উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কোভিড আক্রান্ত বলেই প্রচার করা হয়েছিল। এই ফেক নিউজটি প্রচারের জন্য পুলিশ অবশ্য অন্য এক চিকিৎসকের এক ২৯ বছরের কন্যা চন্দ্রিমা ভৌমিককে গ্রেপ্তার করেছে। একইভাবে প্রতিবেশির করোনা আক্রান্ত হয়েছে বলে মিথ্যা খবর প্রচার করায় পুলিশ উত্তর ২৪ পরগণার ভাটপাড়া থেকে রাণা দেবনাথ নামে এক ব্যাক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। আবার কলকাতার নিউ আলিপুর এলাকায় ১৫ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রয়েছেন বলে প্রচার করেছিলেন। সেই গৃহবধূকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। করোনা নিয়ে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে একজন স্কুলের প্রধান শিক্ষকাকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তবে পুলিশ গুজব ছড়ানোর সন্দেহে এমন অনেক মানুষের খোঁজ পেয়েছেন যাদের মধ্যে রয়েছেন এক আইএএস অফিসারের স্ত্রী, এক অধ্যাপক ও এক অধ্যক্ষ, এক সরকারি স্কুলের শিক্ষক, একটি নামী ক্লাবের সভাপতি এবং জাতীয় পর্যায়ের একটি টিভি চ্যানেলের সিনিয়র সম্পাদক। এই রকম ৪৩ জনকে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে লালবাজারে ডেকে দীর্ঘ সময় ধরে জেরা করা হয়েছে। তবে এদের অধিকাংশকেই সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ সুত্রে জানা গেছে। পুলিশ জানিয়েছে, গুজব ছড়ানো হয় এমন সন্দেহভাজনদের প্রোফাইল ঘেঁটে পুলিশ তাজ্জব হয়েছে যে, এই তালিকায় শিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত মানুষের সংখ্যাই বেশি। পুলিশ জানিয়েছে, গুজরাটের সুরাটের একটি পুরনো ছবি পোস্ট করে প্রচার করা হয়েছে যে, কলকাতার এক মুসলিম অধ্যূষিত এলাকায় লকডাউনের বিধি মানা হচ্ছে না। এই মিথ্যা পোস্টের জন্য পুলিশ একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের এক অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করেছে। এদিকে কয়েকদিন আগে এক যাত্রা অভিনেতাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে রেশন পাচ্ছেন না বলে মিথ্যে অভিনয় করার অভিযোগে। সেই ভিডিওটিই কিছু যুবক পোস্ট করেছিল। তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ভিডিওটি বিজেপির পোস্টেও ট্যাগ করায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছিল। এদিকে সোমবারই নেট দুনিয়ায় এক ব্যাংক অফিসার এবং একটি বেসরকারি হাসপাতালের এক জুনিয়র চিকিৎসকের কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে নেট দুনিয়ায়। এতে বলতে শোনা গেছে, আপাতদৃষ্টিতে কোনও উপসর্গ নেই। অথচ শরীরে করোনা নিয়ে কলকাতায় নাকি ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক লক্ষ লোক। চিকিৎসকটি আরও বলেছেন, তাঁর হাসপাতালের ৮০ শতাংশ চিকিৎসকের শরীরেও সংক্রমণ ছড়িয়েছে। পুলিশ এই অডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই করছে।