বিশ্বজমিন

মুজিবের খুনিকে গ্রেপ্তার ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক সমৃদ্ধ করবে

কল্লোল ভট্টাচার্য্য

৯ এপ্রিল ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৫ পূর্বাহ্ন

কূটনৈতিক সূত্রগুলো স্বীকার করেছেন যে, বিষয়টি অনেকটাই অপ্রত্যাশিত। একজন উচ্চ মাত্রার পলাতকের ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের ইতিবাচক পুনর্জাগরণের ইঙ্গিত দেয়।  ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্যদের সেনাবাহিনীর যে স্কোয়াড হত্যা করেছিল তার একজন ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ। তাকে মঙ্গলবার ঢাকায় একটি বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটা জানা গেছে যে, মাজেদ ঢাকায় কর্তৃপক্ষকে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে কয়েক দশক ধরে অবস্থান করছিলেন তিনি। কিন্তু ভারতে চলমান লকডাউনে সেখানকার জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ায় দেশে ফিরেছেন তিনি। কিন্তু সূত্রগুলো বলেছেন, কূটনৈতিক কারণে ভারত থেকে মাজেদের বাংলাদেশে যাওয়ার বিষয় সহসাই দুই পক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করবে না।
সূত্রগুলো জানিয়েছে যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট খুব ভোরে ধানমন্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সদস্যদের ওপর যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়, তাতে অংশ নেয়ার কথা এরই মধ্যে স্বীকার করেছেন মাজেদ। ওই কূটনৈতিক সূত্রগুলো আরো বলেছেন, মাজেদের এই গ্রেপ্তার দুই দেশের চলমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরো উন্নত করবে। দু’পক্ষের মধ্যে আভ্যন্তরীণ ‘এক্সচেঞ্জ’-এর বিষয়ে জানেন এমন একটি সূত্র বলেছেন, শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বর্ষে তার পিতার খুনিকে গ্রেপ্তার ও ফেরত পাঠানোর চেয়ে ভাল উপহার আর হতে পারে না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য।
একজন কর্মকর্তা বলেছেন, দুই দেশের রাজধানীর মধ্যে সাম্প্রতিক কয়েক মাসে সম্পর্কে টান ধরে। বিশেষ করে, বর্তমান সম্পর্কের পরিস্থিতিতে অসন্তোষের ইঙ্গিত দিয়ে মন্ত্রীপর্যায়ের বেশ কিছু সফর বাতিল করে ঢাকা। আস্থা হারানোর সেই স্থানটি (দ্য লস্ট গ্রাউন্ড) পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের দোষী সাব্যস্ত খুনিকে গ্রেপ্তারের ঘটনা।
২০০৯ সালে আবদুল মাজেদের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট। আশা করা যায়, সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এই শাস্তি কার্যকর করবে শেখ হাসিনার সরকার। কয়েক মাসে সম্পর্কে অস্থিরতার পর বাংলাদেশ সফর করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। তিনি জানুয়ারিতে এই পদে দায়িত্বে আসেন। তার ওই সফর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কের বিষয়টি মাথায় নেয়া হয়েছে। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর পরই ঢাকা সফর করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিস্তারিত পরিসরে কথা বলেছেন।
ওদিকে নোভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে মুজিব শতবর্ষের অনুষ্ঠান দ্রুততার সঙ্গে বাতিল করা হয়। বাতিল হয়ে যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর। তা সত্ত্বেও দুই পক্ষের কর্মকর্তারা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বা সহযোগিতা অব্যাহত রাখেন।
১৫ই মার্চ সার্ক কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি ফান্ড চালু করা এবং শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর ভিডিও কনফারেন্সে মোদি সম্মান প্রদর্শনমুলক উষ্ণ বক্তব্য রাখেন। ভারতের এমন কর্মকান্ড দুই দেশের সম্পর্কে সহায়ক হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে গভীর আস্থা প্রকাশ করে মোদি বলেছেন, আমি উল্লেখ করে খুশি হচ্ছি যে, গত ৫-৬ বছরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি স্বর্ণালী অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। এটা এখন আমাদের অংশীদারিত্বের নতুন মাত্রা ও নির্দেশনা দিচ্ছে।
যদিও বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকারী স্কোয়াডের বেশির ভাগ এরই মধ্যে মারা গেছে, তা সত্ত্বেও মাজেদকে এমন একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যারা মঙ্গলবার পর্যন্ত বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকতে পেরেছিল। আরো জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর অন্য খুনীদের ফেরত আনার জন্য পশ্চিমা দু’একটি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
(অনলাইন দ্য হিন্দু থেকে অনুবাদ)
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status