মত-মতান্তর

করোনা সংকট ও বিশ্বনেতৃত্ব

খায়রুল বাসার

২ এপ্রিল ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৬:০৭ পূর্বাহ্ন

শেষ পর্যন্ত বিশালাকার দৈত্য নয়, ডাইনোসর আকৃতির অতিকায় কোনো প্রাণী নয় কিংবা ভিনগ্রহের কোনো দানবাকৃতির হন্তারকও নয় ; মানব জাতির অসহায় আত্মসমর্পণ অতি আনুবীক্ষণিক এক আপাত নিরীহ অনুজীবের কাছে!
মৃত্যুর মিছিল ইতোমধ্যে ৪৫ হাজারে গিয়ে ঠেকেছে। প্রায় অর্ধলক্ষ! চোখ বন্ধ করে যদি কল্পনা করি অর্ধলক্ষ লাশের সারি; গুনে শেষ করতে পারবো? মৃত্যুর এই উন্মাতাল নৃত্যে আরও কতো প্রাণ যে হরণ হবে ভাবতেই ভেতর কেঁপে ওঠে।
তাই আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় আমরা যখন মারণাস্ত্র, পারমাণবিক বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণে ব্যস্ত, মৃত্যু দূত তখন অলক্ষ্যে হাসে!
একবিংশ শতাব্দীতে এসে যখন আমরা মহাকাশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাই, অন্যকোনো গ্যালাক্সির ভিন্ন কোনো গ্রহকে বশীভূত করে মানব বসতি স্থাপনের ধৃষ্টতা দেখাই, যখন আমরা ভিনগ্রহের এলিয়েনদের কল্পিত আক্রমণ নিয়ে ফ্যান্টাসিতে ভোগী তখন ঘরের শত্রু বিভীষণের মতো অদৃশ্য এই মৃত্যুর দূত টুঁটি চেপে ধরে আমাদের দেখিয়ে দেয় চিকিৎসা বিজ্ঞানে আমাদের নিদারুণ সীমাবদ্ধতার কথা। স্মরণ করিয়ে দেয় বেঁচে থাকাটাই মূখ্য৷ বাকি সব কিছু গৌন!!
পৃথিবীর তথাকথিত মোড়লদের এই অসহায় আত্মসমর্পণ সত্যিই আতংকিত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এক মেরু বিশ্ব ব্যবস্থার একমাত্র সুপার পাওয়ার আজ দিশেহারা। বলা হচ্ছে এক থেকে দুই লাখ মানুষ মারা যেতে পারে সেখানে!!
কী হবে বিলিয়ন ডলারের আর্মস ইন্ডাস্ট্রি দিয়ে? কী হবে মহাকাশে স্টেশন বানিয়ে? এই জাত্যাভিমান, এই আধিপত্যবাদ, সাদা-কালো, হিন্দু-মুসলিম-খ্রীস্টান ভেদাভেদ সবই অর্থহীন যদি পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্বই না থাকে!
এতো একটামাত্র ভাইরাস! এর চেয়েও ভয়ানক হায়েনা ওত পেতে আছে সুযোগের অপেক্ষায়।
কী সেটা? "ব্যাকটেরিয়া"...
এন্টিবায়োটিকের যত্রতত্র ব্যবহারের ফলে অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে যাচ্ছে। যে হারে ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে পড়ছে সেই হারে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি হচ্ছে না। ফলে সাধারণ সর্দি-কাশিতে মানুষ নির্বিচারে মারা পড়বে। তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না। ভাইরাস থেকে তো পালিয়ে বাঁচার সুযোগ আছে, ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে তাও থাকবে না!
এরকম অসংখ্য ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অদৃশ্য হায়েনার মতো। পরিবেশের পরিবর্তনের কারণে এসবের মিউটেশন ঘটছে, অবমুক্ত হচ্ছে নিত্যনতুন জীবাণু।
পৃথিবী এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। জাতিসংঘের মতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় সংকট পার করছে বিশ্ব।এই পৃথিবী আর কখনোই আগের মতো হবে না। ওয়ার্ল্ড অর্ডার পরিবর্তিত হবে। নতুন মেরুকরণ ঘটবে। নতুন পরাশক্তির আবির্ভাব ঘটবে।
আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের অবস্থাও ভালো নেই। হয়তো এই করোনা সংকট থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটবে। কিন্তু আমাদের অর্থনীতি কি আসন্ন বিশ্বমন্দায় টিকে থাকবে? অর্থনীতির প্রধান দুটি খাত পোশাক (রপ্তানি আয়ের ৮৪% আসে পোশাক খাত থেকে) এবং রেমিট্যান্স। দুটি খাতই চরম সংকটের মধ্যে আছে।
বাংলাদেশ কি পারবে আবারো মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে? কিংবা এই পৃথিবী? করোনা মহামারী তাই শুধু ব্যক্তি পর্যায়ের বাঁচামরার লড়াই নয়-বিশ্ব নেতৃত্বের জন্যও এক অনন্য চ্যালেঞ্জ। আজকে বিশ্বের কোন দেশ কতটা কার্যকরভাবে এই সংকট মোকাবেলা করতে পারছে- কোন দেশ সর্বনিম্ন ক্ষতির বিনিময়ে করোনা মেকাবেলায় সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করতে পারছে-তার উপরই নির্ভর করছে আগামী দিনের বিশ্বনেতৃত্ব।
(খায়রুল বাসার, শিক্ষার্থী, ডিপার্টমেন্ট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় )
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status