অনলাইন

চীনের করোনা প্রতিরোধের মূলমন্ত্র

ওবায়দুর চৌধুরী অজয়, বেইজিং (চীন) থেকে

২ এপ্রিল ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৮:৫২ পূর্বাহ্ন

বর্তমান দুনিয়ায় বর্তমানে সব থেকে আলোচিত বিষয় করোনা ভাইরাস। সকলেই জানি ভাইরাসটি চীনে সর্বপ্রথম আঘাত হানে। অতিউন্নয়নশীন দেশের তালিলায় চীন অপ্রতিরোধ্য। বিশ্বকে তাঁক লাগিয়ে দিয়ে চীনের এগিয়ে চলা। এমন সময় করোনা ভাইরাসের আগমন অনেকটা চৈত্রে বৃষ্টি আসার মতো। জনসংখ্যার বিবেচনায় করোনার আঘাতে মৃত্যু ঝুঁকি ছিলো সবচেয়ে বেশি। চীনে করোনায় মোট মৃত্যুসংখ্যা ৩ হাজার ৩১২ যা চীনের মোট জনসংখ্যার তুলনায় নগন্য। যেখানে ইতালিতে ১৩ হাজার ১১৫ জন আর স্পেনে ৯ হাজার ১২৬ জন মৃত্যু বরণ করেন ( সূত্র: উইকিপিডিয়া) । এটা সম্ভব হয়েছে তাদের ঐকান্তিক সচেতনতা ও দৃঢ় মনোবল কাজে লাগিয়ে।

করোনার এই ভয়াল সময়ে চীনে অবস্থান করা পৃথিবীর অন্য মানুষদের কাছে সাউকোসিসের মতো। বাস্তবেও বিষয়টা সেরকমই ছিলো আমার কাছেও। কিন্তু চীনের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা সবকিছুর চিত্র পাল্টে দেয়। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে প্রত্যেক প্রভিন্সের শহরগুলোতে বিশেষ বিশেষ সর্তকতা জারি করে। তার প্রথম ধাপ ছিলো উহান শহর লকডাউন করা। কারন এই শহরটি ছিলো ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল। সকল প্রকার যোগাযোগব্যবস্থা -স্থল,  আকাশপথ ও রেল ইত্যাদি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া। এমনকি শহরের সকল বিপনীবিতান, জিমনেশিয়াম, ক্লাব, কফিশপ ইত্যাদি বন্ধ করে দেয়া হয়। শুধুমাত্র কতিপয় খাবার দোকান, ঔষু্ধের দোকান ও হাসপাতাল ইত্যাদি খোলা  রাখা হয়েছিলো।  

পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল উদাহরণ সৃষ্টি করে তারা সাত দিনের ব্যবধানে দুইটি অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরী করে। এখানে দুইটি বিষয় উল্লেখযোগ্য - হাসপাতালটি করার মূল উদ্দেশ্য ছিলো করোনায় আক্রান্ত রোগীদের আলাদা করা আর জনমনে আস্থা বজায় রাখা। যার ভেতর জিমনেশিয়াম, খেলাধুলার স্থান ও ছবি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা ছিলো। আর গণমানুষের মনোবলকে শক্ত রাখা ও একত্রে এগিয়ে চলার কৌশলই ছিলো চীনের করোনা জয়ের মূলভিত্তি।

বসন্ত উৎসবের শুরু ও শেষের সময়টা জুড়ে বহাল ছিলো করোনা ভাইরাস। মানুষজনের অল্প-বিস্তর আনাগোনা বজায় ছিলো। প্রত্যেক রাস্তার মোড়ে তারা শরীরিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছিলো। পাশাপাশি রেলস্টেশনগুলোতে ডিজিটাল ভিডিও স্ক্যানার দিয়ে তাপমাত্রা মেপে দেখা হতো। আর সকল খাবার দোকান, সুপারশপ, ব্যাংকগুলোতে তাপমাত্রা মাপা ও তথ্য সংগ্রহ করা হতো।

গত দুইমাসে চীনে মাস্ক পড়ে বের হওয়া ছিল অতিআবশ্যক। রাস্তা কিংবা সাবওয়ের ভেতর মানুষ বেশ শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করেছে।তবুও জীবন সচল ছিলো। অনলাইলবেইজ যোগাযোগ, পড়াশুনা, ব্যবসায়ীয় লেনদেন সবকিছুই সুষ্ঠভাবেই চলছিলো। প্রচারমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যামগুলোর ভূমিকা অনন্য।প্রতিনিয়ত সচেতনতামূলক ও আত্মবিশ্বাসীমূলক বার্তা প্রচার করা হতো। বিশেষ করে ঘরে বসে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও চিত্ত বিনোদনমূলক কাজে উদ্ভুদ্ধ করা হতো। প্রধান বিষয়টি হলো চীনের বসবাসকারীরা মেনে চলেছে আইন। নিয়ম মেনে সচেতনতা প্রশাসন ও জনগণের অপ্রতিরোধ্য মানসিকতাই এই বিপদ থেকে রক্ষা করেছে চীনকে।

ওবায়দুর চৌধুরী অজয়
ভিজিটিং ফেলো,  ইন্টারন্যাশনাল জার্নাললিজম অ্যান্ড
কমিউনিকেশন ডির্পাটমেন্ট,  
কমিউনিনিকেশন ইউনিভারসিটি অব চায়না, বেইজিং, চীন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status