অনলাইন

ভেড়ামারায় গরিবের জন্য মূল্যছাড়ের দোকান

ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি

৩১ মার্চ ২০২০, মঙ্গলবার, ৪:২০ পূর্বাহ্ন

অঘোষিত লকডাউনে বিপর্যস্ত শ্রমজীবি মানুষ। কাজ নেই। ঘরে খাবারো নেই। আবার সরকারী সাহায্যেও অপ্রতুল। অনেকে চক্ষু লজ্জার ভয়েও সরকারী সাহায্যে নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়াচ্ছে না। অথচ ঘরে খাবার নেই। অভুক্ত ছেলে মেয়েদের নিয়ে মাঝে মাঝে উপস থাকতে হচ্ছে শ্রমজীবিদের। তাদের জন্যই ভেড়ামারা উপজেলা প্রশাসন ব্যতিক্রম আয়োজন করে মূল্যছাড়ের দোকান দিয়েছে। কম মূল্যে চাল, ডাল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষপত্র পেয়ে খুঁশি সাধারন মানুষ। স্বেচ্ছা শ্রমের বিনিময়ে দোকান চালাচ্ছেন ৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন মেধাবী শিক্ষার্থী।
শ্রমজীবি মানুষ যখন ঘরবন্দী, কাজ নেই। তারা দু’বেলা দু’মুটো খাওয়ার কি ভাবে সংগ্রহ হবে, এমন ভাবনাতেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল মারুফ।  উপজেলার সকল অভাবী মানুষের কাছে খাবার পৌঁছানোর লক্ষ্যে নিয়েই তিনি সীমিত পরিসরে চালু করেন মূল্য ছাড়ের দোকান।
স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ মেধাবী শিক্ষার্থী মূল্যছাড়ের দোকান পরিচালনা করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের মাষ্টার্স এর ছাত্র সাঈদ হোসেন, ঢাকার ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের মাষ্টার্স এর ছাত্র সুইট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রানী ও মৎস্য বিভাগের শিক্ষার্থী সম্পদ। শিক্ষার্থীরা জানান, নাজুক এক পরিস্থিতির মধ্যে দেশের কল্যানের লক্ষ্যে ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসা সোহেল মারুফের ডাকে সাড়া দিয়েই মূল্যছাড়ের দোকান পরিচালনা করছি। এ দোকানের মাধ্যমে প্রতিদিন ৮/১০ টি নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ১০০ অভাবী  পরিবারের কাছে বিক্রয় করা হচ্ছে। অটো রিক্সায় চাল, ডাল, তেল, আলু, মুড়ি, মরিচ, পিয়াজ ক্রয় করে নিদিষ্ট এলাকায় গিয়ে দোকান বসানো হচ্ছে। মাইকে প্রচার করে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা হয়। এরপরই ভীড় বাড়তে থাকে অভাবী মানুষের। মুহুর্তেই দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে ক্রেতাদের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে ৩টি আইটেমের জিনিষপত্র ক্রেতার কাছে মূল্য ছাড়ে বিক্রি করা হয়ে থাকে।
চাল, ডাল আর কাঁচা মরিচ কিনতে আসা ধরমপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের সোয়ারানী জানান, প্রশাসনের মূল্যছাড়ের দোকান পেয়ে আমরা বেজায় খুশি। আমি ৩৫.৫০ টাকা দরের চাল কিনেছি ২৫ টাকায়। আবার ১৭.৫০ টাকা কেজি আলু আমি কিনেছি ৮টাকায়। ৬৩  টাকার ডাল কিনেছি ৫৩ টাকায়। এছাড়াও ২৪ টাকার লবন ১৪ টাকা, ২৬টাকার পেঁয়াজ ১৬ টাকা, ২০ টাকার কাঁচামরিচ ১০টাকায়, ২৫ টাকার মুড়ি ১৫টাকায় বিক্রি হচ্ছে মূল্য ছাড়ের দোকানে।
ভ্যান চালক আব্দুল জব্বার জানিয়েছেন, ধরমপুর ৯ নং ওয়ার্ডের মন্ডলপাড়ার মানুষ একটু বেশিই অভাবী। গরীব মানুষ। করোনা ভাইরাসের কারনে ভ্যান চালাতে পারছি না। আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ সংসারে ৬ জন খানিওয়ালা। কি করবো। উপায় নেই। এমন সময় প্রশাসনের মূল্য ছাড়ের দোকান পেয়ে ৩ কেজি চাউল, আধা কেজি ডাউল এবং আলু কিনেছি। কষ্ট করে ১/২ দিন এ দিয়েই চালিয়ে নিতে পারবো। হাতের কাছেই এমন বাজার পেয়ে মহিলারাও দারুন খুশি। তারাও কম মূল্য বাজার করতে পারছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের মাষ্টার্স এর ছাত্র সাঈদ হোসেন জানিয়েছেন, মূল্যছাড়ের দোকানটি মুলত গরীব মানুষদের জন্য। যারা সামর্থ্যবান, তারা কেউ এ দোকানের ক্রেতা হতে পারবেন না। একজন সর্বোচ্চ ৩ কেজি কিনতে পারবে। সকল পন্যেই ১০ টাকা কমে বিক্রি করছি আমরা। তিনি জানান, প্রতিদিন ২০%-১০০% মূল্যছাড় ( ক্রয়মূল্য ১০ টাকা বা তার কম হলে ফ্রী) অটোরিকশা ভাড়া এসব মিলিয়ে প্রায় ১৫-৩০ ভাগ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে প্রশাসন কে। তারপরো আমরা খুশি, এক ক্রান্তিকালে অভাবী মানুষের মাঝে খাবার পৌছে দিতে পেরে।
ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল মারুফ জানিয়েছেন, অঘোষিত লকডাউনে সব থেকে বেশি বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষ। তাদের কথা চিন্তা করেই ব্যাক্তিগত আর্থিক সহযোগিতায় মূল্যছাড়ের দোকান দিয়েছি। আমার স্বপ্ন, আমি যতদিন এই উপজেলায় আছি, ততদিন কেউ যেন, দিন শেষে পেটে ক্ষুধা নিয়ে ঘুমাতে না যায়। তিনি বলেন, ইচ্ছে আছে সারা উপজেলায় এটি চালু করার। প্রতিদিন ৬০০ মানুষের কাছে মূল্যছাড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেবো। কত দিন চলবে মূল্যছাড়ের এ দোকান, এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ব্যাক্তিগত ভাবে শুরু করেছি এ কাজটি। আমি যত দিন পারবো, ততদিন চলাবো। আর সমাজের বৃত্তবান বা হৃদয়বানরা এগিয়ে এলে যতদিন এই ক্রান্তিকাল থাকবে, ততদিন আমরা এভাবে মানুষের খাবার পৌছে দেবো দ্বারে দ্বারে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status