অনলাইন

সাবেক এমপির ক্ষোভ

কাজী সোহাগ

৩০ মার্চ ২০২০, সোমবার, ৪:৫২ পূর্বাহ্ন

৫ দিন ধরে অনেক দিনমজুর না খেয়ে আছে। দৈনিক ২৫০ টাকার মজুরিতে কাজ করলেও এ কয়দিন তারা বেকার। তাই তাদের ঘরে নেই কোন খাবার। দেশের এত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও যদি দিনমজুররা না খেয়ে মারা যায় তাহলে এর দায় দায়িত্ব কে নেবে। জেলার ২৮৪টি গ্রামের হাজার হাজার দিনমজুর আজ মানবেতর জীবন-যাপন করছে। সরকার পর্যাপ্ত সাহায্য পাঠালেও তাদের হাতে পৌঁছাচ্ছে না। দেশের সবচেয়ে ছোট জেলা মেহেরপুরের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদিন এভাবেই তার ক্ষোভের কথা জানালেন। আজ এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তারই সূত্র ধরে সাবেক ওই এমপির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মানবজমিনকে বলেন,রাগে,ক্ষোভে দু:খে উপায় না পেয়ে ফেসবুকে বিবৃতি দিয়েছি। মানুষের কান্না আর আহাজারি সহ্য করতে পারছি না। ১৯৭৩ সালে মেহেরপুরের বাগোয়ান ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলাম। এরপরের বছরই দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিলো। তখন বঙ্গবন্ধু আমাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন লঙ্গরখানা খুলতে। ওইসময় যখন যেখানে পেরেছি খাবার তৈরি করে মানুষের ঘরে ঘরে দিয়েছি। এখনকার মতো যোগাযোগ ব্যবস্থাও ছিলো না। দুর্গম রাস্তা পার হয়ে মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছি। আর এখন দেশে সম্পদের কমতি নেই,সরকার আছে ভালো অবস্থানে। বরাদ্দ রয়েছে পর্যাপ্ত। কিন্তু মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছাচ্ছে না। আমি তো জেলায় শুধু লকডাউন দেখছি। কিন্তু অসহায মানুষদের পাশে কাউকে দাঁড়াতে দেখছি না। এখানকার বর্তমান জনপ্রতিনিধি রয়েছেন ঢাকায়। এলাকার মানুষ তাকে না পেয়ে আমার কাছে কান্নাকাটি করছে। তিনি বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন গ্রাম থেকে শত শত মানুষ ফোন করছেন। প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে যারা আমার কাছে আসতে পারছেন তাদেরকে একশ,দুইশ টাকা দিতে পারছি। এর বেশি তাদেরকে সাহায্য করতে পারছি না। আমি জানি এতে তাদের চাহিদা মিটবে না। এক্ষেত্রে সরকারের হাত অনেক লম্বা কিন্তু ব্যক্তিগত হাত অনেক সীমাবদ্ধ। সাবেক এই এমপি বলেন, শুনেছি সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেয়া হযেছে। কিন্তু ওই বরাদ্দ কারা, কিভাবে, কখন পাবে তা কেউই জানে না। তাই ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে তাদের কান্নাও। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্টদের উচিত এখনই অসহায় ও দিনমজুর মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়া।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাবেক ওই এমপির বিবৃতি হুবহু তুলে ধরা হলো-
প্রিয় মেহেরপুরবাসী,আসসালামু আলাইকুম। আশা করি পরম করুণাময় আল্লাহর অশেষ রহমতে সুস্থ থাকলেও আমার মনে হয় করোনার প্রভাবে কিছুটা মানসিক দুর্দশাগ্রস্থ ও অস্বস্থিতে ভুগছেন। দীর্ঘদিন পরে আজ আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি দুটি জরুরি কথা বলার জন্য। ইতিমধ্যে আপনারা অবগত হয়েছেন যে, ১৭ নভেম্বর ২০১৯ তারিখ চীনের উহান, হুবেই প্রদেশে 'করোনা ভাইরাস' নামক রোগে আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যুবরণও করেছে। তখন গোটা বিশ্ব এটাকে ততটা আমলে নেয়নি। ঠিক এর ৭৩ দিন পর জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা যার প্রধান কার্যালয় সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৩১ জানুয়ারি ২০২০ করোনা ভাইরাস সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করলেন এই বলে যে, চীন ছাড়াও এই ভাইরাসটি পর্যায়ক্রমে বিশ্বের অন্যান্য দেশে সংক্রামিত হতে পারে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশে আমরা প্রথম করোনার প্রাদুর্ভাব দেখতে পেলাম। ১৮ মার্চ প্রথম আমরা জানতে পারলাম এই করোনা ভাইরাসে ১৪ জন সংক্রামিত হয় ও ৭০ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধ মৃত্যুবরণ করে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ এই ভাইরাসে ৪৮ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যুবরণ করেছে ৫ জন। তারপর থেকে অদ্যাবধি করোনা সংক্রান্ত তথ্য অনেকেরই জানা। সরকার ২৪ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারিসহ সমস্ত প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন। 'নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি' বাদে গণপরিবহন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সমস্থ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এমতাবস্থায় মেহেরপুরের সাধারণ দিনমজুর, শ্রমিক থেকে শুরু করে হতদরিদ্র মানুষ খুব কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। ইতোমধ্যে সরকার এইসমস্থ মানুষের জন্য সাহায্য, সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন। আমি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি এই দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে এই কমিটিগুলোর দৃশ্যমান কোন তৎপরতা এ পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়নি। যেহেতু আমি মেহেরপুর-১ এক আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলাম সেহেতু গত কয়েকদিন থেকে মেহেরপুরের দূর্দশা ও অভাবগ্রস্থ মানুষ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমার নিকট জানতে চায় কোথায় গেলে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পাবো। তবে আশ্চর্যের বিষয় এই যে, আমার পার্টি রাষ্ট্র ক্ষমতায়, আমার নেত্রী মানবতার মা জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকা সত্বেও আমি সেই সমস্ত বিপদগ্রস্থ মানুষদের কোন তথ্য ও সদুত্তর দিতে পারিনি। আমার মনে হয় এই মহা দূর্যোগের সময় দুস্থ মানবতার সেবায় জেলা পর্যায়ের সরকারি ব্যবস্থাপনা কমিটি ও অন্যান্য পর্যায়ের কমিটিগুলোর অতি দ্রুত মাইকিং ও ক্যাবল নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে জনগণকে অবহিত করা অত্যন্ত জরুরি বলে আমি মনে করি। সবাই সুস্থ থাকুন, সচেতন থাকুন। আপনাদের দোয়া ও আশীর্বাদ কামনা করি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status