বাংলারজমিন

দেশে দেশে মৃত্যুর মিছিল সিলেটজুড়ে ‘নীরব’ কান্না

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

৩০ মার্চ ২০২০, সোমবার, ৪:৪৩ পূর্বাহ্ন

ভয়ঙ্কর করোনা। রূপ নিয়েছে মহামারীতে। বিচ্ছিন্ন বিশ্ব। অদৃশ্য দানবের গ্রাসে আতঙ্কিত সবাই। ঘরবন্দি সিলেটের মানুষ। নিজেরাও উৎকন্ঠিত। সবচেয়ে উৎকন্ঠা প্রবাসে থাকা স্বজনদের নিয়ে। প্রতিদিনই আসছে মৃত্যুর খবর। ইউরোপ কিংবা আমেরিকা। ভয়ঙ্কররূপী করোনায় মারা যাচ্ছেন সিলেটীরা। সটিক পরিসংখ্যা মিলছে না। তবে- দিনে দিনে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। আর এই মিছিল যতই বাড়ছে সিলেটে বাড়ছে উৎকন্ঠা। ‘নিরব’ কান্নায় কাতর স্বজনরা। শান্তনার ভাষা নেই কারো কাছে। চির বিদায় নেওয়া স্বজনের প্রিয় মুখও এক নজর দেখতে পাচ্ছেন না।- এই অবস্থা বড়ই করুন, বেদনার।

প্রবাসী শহর সিলেট। এই সিলেটের লাখ লাখ মানুষ প্রবাসে। বেশির ভাগই ইউরোপে। বিপুল সংখ্যাকের বাসও আমেরিকায়। সিলেটের পরিস্থিতি এখনো ভালো। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগির অস্তিত্ব মিলেনি। এতে স্বস্তি বিরাজ করছে। কিন্তু প্রবাসে থাকা স্বজনদের নিয়ে মৃত্যুর খবরে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খবর এসেছে গত দু’দিনে। ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী ৪ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। এসব খবরে বিচলিত স্বজনরা। গত ২৪ ঘন্টায় আমেরিকায় বাংলাদেশী মৃত্যুর খবর বেরিয়েছে। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ২১ জন বলে আমেরিকায় বসবাসকারী স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে।

সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য মতে- আমেরিকার মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েট সিটি ও নিউজার্সির প্যাটারসনে দুই বাংলাদেশি নারীর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। তাদের দেশের বাড়ি বৃহত্তর সিলেটে বলে জানা গেছে। তবে- এদের পরিচয় এখনোও জানা যায়নি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশীদের মধ্যে মারা গেছেন- কায়কোবাদ, শফিকুর রহমান মজুমদার, আজিজুর রহমান, মির্জা হুদা, বিজিত কুমার সাহা, মো. শিপন হোসাইন, জায়েদ আলম ও মুতাব্বির চৌধুরী ইসমত। তাদের অনেকেরই বাড়ি সিলেটে বলে আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশীরা জানিয়েছেন।

নিউইয়র্কে বসবাসকারী গোলাপগঞ্জের মোদাব্বীর চৌধুরী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সোমবার মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬০ বছর। মোদাব্বির চৌধুরী সাহেব রণকেলী দক্ষিণভাগরে মরহুম মাতাব আহমদ চৌধুরী সাহেবের ছেলে। তিনি 'গোলাপগঞ্জ সমিতি নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র ট্রাষ্টিবোর্ডের সদস্য ছিলেন। তিনি মৃত্যুকালে স্ত্রী এবং ২ ছেলে রেখে গেছেন। তার পরিবার বর্তমানে নিউইয়র্কে রয়েছেন। রোববার বিকেলে ম্যানহাটানের একটি হাসপাতালে মারা গেছেন হবিগঞ্জের আজিজুর রহমান। তার গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার মিনহাজপুর গ্রামে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ম্যানহাটনে বসবাস করতেন। আজিজুর রহমানের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন তার ছেলে জাহাঙ্গীর রহমানের বন্ধু কমিউনিটি নেতা জাবেদ উদ্দিন।

লন্ডনে ভয়ঙ্কর করোনাভাইরাস কেড়ে নিলো সিলেটের দক্ষিণ সুরমার হাজি মো. মদরিস আলীর প্রাণ। বাড়ি দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার ইউনিয়নের খাজাখালু গ্রামে। তিনি লালাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মো. শহিদুর রহমানের বড় ভাই। তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের ডকল্যান্ড অঞ্চলে বসবাস করতেন। সোমবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টার দিকে লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি। সাবেক ইউপি সদস্য মো. শহিদুর রহমান সাংবাদিকদের কাছে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। এছাড়া রোববার করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দক্ষিন সুরমার সোহেল আহমদ। তার বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি গ্রামে। সোহেল আহমদের বোনের স্বামী মো.আব্দুল হালিম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন- ৫০ বছর বয়সী সোহেলকে প্রায় এক সপ্তাহ আগে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট থাকায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার শরীরে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ পাওয়া যায়।

বৃটেনে করোনা ভাইরাসে এ পর্যন্ত কতজন বাংলাদেশী মৃত্যুর বরণ করেছেন তার কোনো সটিক হিসেব মিলেনি। তবে স্বজনরদের মারফতে সোমবার পর্যন্ত ১০-১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শনিবার আলম আশরাফ নামের এক বাংলাদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া অবস্থায় মারা যান। শুক্রবার লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল ৬টায় মো. মনির উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি প্রবাসী বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর এডুকেশন ট্রস্টের অন্যতম সদস্য। ওসমানীনগরের উমরপুর ইউনিয়নের মান্দারুকা গ্রামে তার বাড়ি। বুধবার মারা গেছেন হাজী ফখরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি পূর্ব লন্ডনের ডকল্যান্ডে বসবাস করতেন। মঙ্গলবার মারা যান জগন্নাথপুরের খসরু মিয়া। ২৩ মার্চ টাওয়ার হ্যামলেটসের স্যাটেল স্ট্রিটের বাসিন্দা ও বিয়ানীবাজার উপজেলার ছনগ্রামের জমশেদ আলী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ১৬ মার্চ লন্ডনের গ্রেট অরমন্ড হাসপাতালে মারা যান মৌলভীবাজারের মাহমুদুর রহমান। এর আগে ১৩ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার অভিবাসী রেহান উদ্দিনের। ৮ মার্চ লন্ডনের ম্যানচেস্টারে প্রথম এক বৃটিশ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status