অনলাইন

আফসোস ! অমরত্ব লাভ হলো না

শামীমুল হক

২৯ মার্চ ২০২০, রবিবার, ১১:৩১ পূর্বাহ্ন

একটি মাত্র পাকা ফল। এটি খেতে পারলেই মানুষ লাভ করবে অমরত্ব। কেয়ামত পর্যন্ত বেচে থাকবেন। তার আর কোনো চিন্তা নেই। কিন্তু ষাট, সত্তর, কিংবা শতবছর বেচে থাকা মানুষটি যা করে, তাতে অন্যরা হয়ে ওঠে অতিষ্ঠ। কেউ কেউ তার মৃত্যু কামনা করে। আর অমরত্ব লাভ করলে মানুষ কি না করবে? গোটা পৃথিবীর মালিক হয়ে বসবে। যখন যা খুশি তা করবে। এমনিতেই পৃথিবীজুড়ে চলছে যুদ্ধ আর যুদ্ধ। পারমানবিক যুদ্ধ, জৈব যুদ্ধ, রাসায়নিক যুদ্ধ। সবচেয়ে বড় যুদ্ধ শক্তি প্রয়োগের যুদ্ধ। এ যুদ্ধে দুভাগ হয়ে দেশগুলো লড়ছে কিংবা সমর্থন দিচ্ছে। এটা প্রমানিত মানুষ সুখ পছন্দ করেন। তবে নিজের। অন্যের সুখে কিভাবে আগুন ঢালবে তা নিয়ে হাজারো কসরত। প্রয়োজনে নিজের ঘর পুরিয়ে হলেও অন্যের সুখের বাধা হয়ে দাঁড়াবে। শক্তি বা ক্ষমতা দেখাতে গিয়ে একবারও ভাবে না এতে নিজেরও ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। সামান্য এসিল্যান্ড বা ডিসি যে ক্ষমতা দেখান তাতে বিশ্ব মোড়লদের দোষ কি? গোটা বিশ্ব যাদের অঙ্গুলি হেলনে ওঠে বসে তারা তো মহাক্ষমতা দেখাবেই। যশোরের মনিরামপুরের এসিল্যান্ড সাইয়েমা। সবেমাত্র সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করেছে। যৎসামান্য ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেয়া হয়েছে। এতেই তিনি বিবেক, বুদ্ধি গিলে খেয়েছেন। বাবার বয়সী বৃদ্ধকে চাকর ভেবে প্রকাশ্যে লাঞ্চিত করেছেন। অথচ তিনি গণপ্রজাতন্ত্রের চাকর। তার কর্ম এই করোনা আতঙ্ককেও পেছনে ফেলে দিয়েছে। ধিক সাইয়েমা বললেই কি এর ক্ষমা হয়ে যায়? প্রত্যাহার করে নিলেই কি সাইয়েমা শোধরাবে? করোনা ভাইরাসের আঁচ যখন বাংলাদেশে পড়েছে তখনই জ্বলতে শুরু করে দেশটি। সরকার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিতে থাকে দেশের কথা ভেবে। মানুষের কথা ভেবে। কিন্তু যে মানুষের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত সে মানুষ কি সরকারি নির্দেশনা মেনে চলছেন ? যা দেখা গেছে বেশিরভাগ মানুষই তাতে কর্ণপাত করছে না। এই যে একটি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি করোনা হাসপাতাল নির্মান করতে মাঠে নেমেছে। কি বুঝে আশেপাশের মানুষ তাতে বাধা দিতে এলেন? তারা কি নিশ্চিত, তার কিংবা তাদের কোনো স্বজনের করোনা হবে না? তাদের চিকিৎসার প্রয়োজন হবে না? একদিন এমন হবে বলেই হয়তো অমরত্ব লাভের সেই পাকা ফল আর মানুষের খাওয়া হয়ে ওঠে নি। বিশ্ব হেকিম হলেন লোকমান হেকিম। তিনি কোনো গাছের নিচ দিয়ে গেলেই ওই গাছ তার সঙ্গে কথা বলত। বলত, আসসালাতু আসসালামু ইয়া লোকমান হেকিম। আমি এই রোগের কাজ করি, আমাকে এই কাজে লাগান। পৃথিবীর সকল গাছ কথা বললেও একটি গাছ তার সঙ্গে কথা বলেন নি। ওই গাছের কথা - লোকমান হেকিম আমাকে জিজ্ঞেস করুক আমি কি কাজে লাগি। অন্যদিকে লোকমান হেকিম বলছেন, একদিন না একদিন ওই গাছকে কথা বলতেই হবে। কিন্তু লোকমান হেকিম তো জানেন না ওই গাছ মহাশক্তিধর। নিজ থেকে ওই গাছ তার সাথে কথা বলবে না। দেখতে দেখতে লোকমান হেকিমের মৃত্যুর সময় চলে এসেছে। স্বজনদের ডেকে বললেন, আমার মৃত্যুর পর সেই গাছের নিচে লাশটি রেখে আসবে। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে লোকমান আর্জি জানালেন মৃত্যুর পর ফের কিছু সময়ের জন্য তার প্রান ফিরে পাওয়ার। একসময় লোকমান হেকিম মারা গেলেন। কথা অনুযায়ী তার লাশ রেখে আসা হল সেই গাছের নিচে। এবার গাছ কথা বলল - আসসালামু আসসালামু ইয়া লোকমান হেকিম। জীবিতকালে যদি আমার সঙ্গে কথা বলতেন তাহলে আজ আপনাকে মৃত্যুর স্বাদ নিতে হত না। লাভ করতেন অমরত্ব। আমার গাছের পাকা একটি ফল খেলেই যে কেউ অমরত্ব লাভ করবে। কথা অনুযায়ী লোকমান হেকিম কিছু সময়ের জন্য প্রান ফিরে পেলেন। তিনি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলেন - হে আল্লাহ, আমার শেষ চাওয়া আপনার কাছে এ গাছের ফল যেন কখনোই না পাকে। সত্যি সত্যিই এ গাছের ফল কখনো পাকে না। ফল হওয়ার পর পাকার আগেই তা শুকিয়ে মাটিতে পরে যায়। মানুষ সেই ফল এখনো খায়। তবে পাকা খাওয়ার সৌভাগ্য কারো হয়না।

শেষ কথাঃ এখানেও সৃষ্টিকর্তার খেলা। আল্লাহ জানেন ক্ষনজন্মা মানুষ তার বেঁচে থাকার সময়টুকুর বেশিরভাগ সময়ই অকাজে ব্যয় করবে। মিথ্যার বেসাতি করবে। ক্ষমতার দাপটে লন্ডভন্ড করে দিবে সবকিছু। মাঝে মাঝে তাই সৃষ্টিকর্তা তার ক্ষমতার কিয়দাংশ পৃথিবীতে পাঠিয়ে প্রমান দেখান তোমাদের ক্ষমতা আসলে নস্যি। তারপরেও মানুষ শিক্ষা নেয় না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status