অনলাইন

করোনায় বিপর্যস্থ সিরামিক খাত

১ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের দাবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২৯ মার্চ ২০২০, রবিবার, ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন

করোনা ভাইরাসের মহামারীর প্রভাবে পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পের মতো সিরামিক খাতেরও রপ্তানি বাণিজ্যে অর্ডার বাতিল এবং আগের অর্ডার করা পণ্যের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের সিরামিক (টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার) সেক্টরের বিপর্যয় নেমে এসেছে। এ বিপর্যয় রোধে এ খাতের জন্য সরকারের কাছে ১ হাজার কোটি টাকার একটি আপৎকালীন তহবিল গঠনের অনুরোধ জানিয়ে এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্টকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোের্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ)।

বিসিএমইএ সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দিন সই করা চিঠিতে বলা হয়, তহবিল গঠন করা হলে বর্তমান পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি, বেতন ও আগামী ঈদ বোনাস পরিশোধ করা যাবে।
এফবিসিসিআই ও বিসিএমইএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

চিঠিতে বলা হয়, অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে উদ্যোক্তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় রপ্তানি এবং আমদানি বিকল্প পণ্য হিসাবে দেশে ইতিমধ্যেই দেশি বিদেশি প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে ৬৮টি সিরামিক (টেবিলওয়্যার, টাইলস্ ও স্যানিটারিওয়্যার) শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দেশীয় উৎপাদনকারীরা পণ্য রপ্তানি করে দেশের জন্য যেমন বছরে ৪ শতাধিক কোটি টাকা মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে সক্ষম হচ্ছেন। তেমনি স্থানীয় বাজারে ৫ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রয় হওয়ায় ক্রমান্বয়ে তৈরি পণ্যের আমদানি হ্রাস পাওয়ায় কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ হচ্ছে। টাইলস ও স্যানিটারিপণ্য দেশে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ তৈরিতে সহযোগী উপকরণ হিসাবে অবদান রেখে চলেছে।

চিঠিতে আরো বলা হয়, বর্তমানে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের অন্যান্য খাতের মতো সম্ভাবনাময় সিরামিক সেক্টরেও বিপর্যয় নেমে এসেছে। এই সেক্টরের জন্য ঝুকিপূর্ণ বর্তমান পরিস্থিতির একটি চিত্র তুলে ধরা হয়। যাতে বলা হয়, যেহেতু এই ভাইরাসের কারণে বিশ্ব বাণিজ্য অবরূদ্ধ, তাই রপ্তানি বাণিজ্যে অর্ডার বাতিল ও পূর্বের অর্ডার করা পণ্যের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। রপ্তানি করা পণ্যের মূল্য ফেরতে বিলম্বিত হওয়ার কারণে সিরামিক শিল্পগুলোর চলতি মূলধন ইতিমধ্যেই শূণ্যের কোঠায় নেমে গেছে।

কাঁচামাল আমদানি নির্ভর হওয়ায় বিশেষ করে অধিকাংশই চীন থেকে আমদানি করতে হওয়ায় বর্তমানে ইহা বন্ধ থাকায় কারখানাগুলো কাঁচামাল সংকটে পড়েছে। স্থানীয় বাজারে চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়ে সংকট দেখা দিয়েছে। কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করায় উপস্থিতির হার কমে গেছে। এসব পরিস্থিতিতে কারখানা বন্ধ করে দেয়ার উপক্রম হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতনাদি এবং ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা কারখানা মালিকদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হবে না বলে উল্লেখ করা হয়।

করোনা ভাইরাসের কারণে বর্তমানে দুর্যোগপূর্ণ এ সময়ে উৎপাদন চালু রাখা এবং শ্রমিক কর্মচারীদের মজুরি ও বেতন-ভাতাদি প্রদানের সক্ষমতা অর্জনে সরকারের পক্ষ থেকে সিরামিক শিল্পের জন্য কয়েকটি প্রস্তাব করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে, সিরামিক শিল্পের উৎপাদন কার্যক্রম চালু রাখার জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিনা সুদে ও বিনা জামানতে ন্যূনতম আগামী দুই কোয়াটারের জন্য প্রয়োজনীয় চলতি মূলধন সরবরাহ করা, সিরামিক শিল্পগুলোতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সকল প্রকারের ঋণের সুদ আগামী দুই কোয়াটারের জন্য মওকুফ করা এবং পরিশোধ করার সময় আগামী একবছর পর্যন্ত মূলতবী রাখা, আগামী ৬ মাসের জন্য সিরামিক কারখানাগুলোর মূসক, আয়কর, অগ্রিম আয়করের কিস্তি পরিশোধ প্রলম্বিত করা, সিরামিক কারখানাগুলোর বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির উপযোগীতামূলক সেবার বিল পরিশোধ করার সময় আগামী এক বছর পর্যন্ত মূলতবী রাখা এবং কোনভাবেই এই সময়ের মধ্যে ইউটিলিটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করে সরবরাহ নিশ্চিত করা, সিরামিক সেক্টরের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ১ হাজার কোটি টাকার একটি আপৎকালীন তহবিল গঠন করে পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিক কর্মচারীদের মজুরি, বেতন এবং আগামী ঈদ বোনাস পরিশোধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয় নির্বাহে আগামী এক বছর পর্যন্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে বিনা জামানতে অর্থায়ন প্রাপ্তির সুযোগ রাখার দাবি করে সংগঠনটি।

চিঠিতে বলা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে এসব চাহিদা বাস্তবায়িত হলে সিরামিক শিল্প মালিকদের কিছুটা হলেও আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সিরামিক শিল্পগুলোর চলতি মূলধনে ঘাটতি না পড়ার কারণে তারল্য সংকট কাটিয়ে সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এই পরিস্থিতিতে দেশের সিরামিক সেক্টরকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের প্রত্যক্ষভাবে বিশেষ আর্থিক সহায়তা এবং পরোক্ষভাবে সুনির্দিষ্ট ব্যবসাবান্ধব কতিপয় সুবিধাদি প্রদান করার বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ করা হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status