করোনা আপডেট

‘করোনা’ নিয়ে বিশ্ব নেতাদের ঘুম হারাম

দীন ইসলাম, কানাডা থেকে

২৮ মার্চ ২০২০, শনিবার, ১০:৫৯ পূর্বাহ্ন

করোনা ভাইরাস মহামারি দুনিয়াবাসিকে কাঁপিয়ে ও কাঁদিয়ে ছাড়ছে। দেশে দেশে মরছে হাজার হাজার মানুষ।বিশ্ব নেতারা শান্তিতে নেই।তাদের ঘুমও হারাম। প্রায় প্রতিদিনই ‘করোনা ভাইরাস’ পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিং করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্টাম্প, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্টুডো ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন (করোনায় আক্রান্ত)সহ অনেক বিশ্ব নেতা। এসব নেতারা তাদের দেশের নাগরিকদের ঘরের বাইরে বের না হবার আহবান জানাচ্ছেন।ঘোষণা করছেন লাখ লাখ ডলারের আর্থিক প্রণোদনা। বিপরীতে বাংলাদেশের দিকে তাকালে আর্থিক দৈনদশার চিত্র পাই। কথার সঙ্গে বাস্তব মেলানো যায় না।
এই মুহুর্তে ভয়াবহ বাস্তবতার মুখে পড়েছেন বিশ্বনেতারা। প্রতিদিনই হাজার হাজার আক্রান্ত ও শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে। এতে এক ‘উভয় সংকটে’ পড়ে হিমশিম অবস্থা তাদের। প্রথম প্রথম গড়িমসি করলেও শেষ পর্যন্ত অর্থনীতির ক্ষতি করে হলেও হাজার হাজার কোটি ডলার-পাউন্ড-ইউরো ব্যয় করতে সম্মত হয়েছেন বিশ্ব নেতারা।করোনা রুখতে ঘোষণা করছেন জরুরি বাজেট।মার্কিন অর্থনীতির বেহাল অবস্থা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, সবকিছুই ফের আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।কিন্তু জীবন গেলে আর ফিরে আসবে না।এক লাখ কোটি ডলারের অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার সরকার।৩৩ হাজার কোটি পাউন্ডের আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে ব্রিটেন।আড়াই হাজার কোটি ডলারের অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছে কানাডা। বিমান কোম্পানি বাঁচাতে ২৭ কোটি ৫০ লাখ ইউরো আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেছে সুইডেন ও ডেনমার্ক। ঋণ করে হলেও করোনা মোকাবেলা করতে চায় ভেনিজুয়েলা।আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ৫০০ কোটি ডলার ঋণের আবেদন করেছেন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো।কিন্তু তার এ ঋণের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে মার্কিন নিয়ন্ত্রিত ঋণদান সংস্থাটি।করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক হাজার সাতশ’ জনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্ত এক লাখ পাঁচ হাজার। ইতিমধ্যে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছেন ট্রাম্প। ভাইরাস ঠেকাতে কংগ্রেসে পাস হয়েছে ২৩০ কোটি ডলারের তহবিল। এবার নাগরিকদের নগদ অর্থ সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন কর্মকর্তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন, করোনা পরিস্থিতি আরও প্রচণ্ড রূপ নিতে পারে। লন্ডনের ইমপেরিয়ার কলেজের একদল ডাক্তার ও বিজ্ঞানীদের প্রস্তুত করা একটি গবেষণা মডেলের ওপর ভিত্তিতে নতুন এ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ওয়াশিংটন। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ওই গবেষক দল জানান, এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এবং যুক্তরাজ্যে ৫ লাখ এবং যুক্তরাষ্ট্রে মারা যেতে পারে ২২ লাখ মানুষ। এই হুশিয়ারির পরপরই ১ লাখ কোটি ডলারের প্রণোদনা তহবিল ঘোষণা করে মার্কিন সরকার। এর ২৫ হাজার কোটিই মার্কিন নাগরিকদের নগদ অর্থ হিসেবে দেয়া হবে।
ওয়াশিংটনে গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মানচিন বলেন, করোনভাইরাসের কারণে যে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হচ্ছে তা রোধে এ প্রণোদনা তহবিল। এ অংশ হিসেবে মার্কিন নাগরিকদের সরাসরি অর্থ প্রদানকে তিনি সমর্থন করেন। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এ চেক প্রদান শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। সোমবার উটাহ রিপাবলিকান সিনেটর মিট রমনি ঘোষণা করেন, প্রাদুর্ভাব চলাকালে আমেরিকান কর্মীদের প্রতি মাসে এক হাজার ডলার করে দেয়ার পরিকল্পনা করা উচিত। তিনি বলেন, ‘নাগরিকদের জন্য অতিরিক্ত ত্রাণ প্যাকেজ নিয়ে সিনেটে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমি পদক্ষেপ নেব।’
করোনার কারণে ২০০৮ সালের বৈশ্বিক মন্দার পর বড় অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছে ব্রিটেন। সংকট কাটাতে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকার। সেই সঙ্গে ঘোষণা দেয়া হয়েছে বিশাল অঙ্কের কর মওকুফ। লন্ডনে গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীদের জন্য ৩৩ হাজার কোটি পাউন্ডের সরকারি ঋণের ঘোষণা দেন বরিসের সরকারের নতুন অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। একই সঙ্গে ২ হাজার কোটি পাউন্ডের কর মওকুফেরও ঘোষণা দেন তিনি। হোটেল-রেস্তোরাঁ, ক্লাব ও ছোট ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার জন্য সরকারের ঋণ সক্ষমতা বাড়াতেও সরকার প্রস্তুত বলে জানান তিনি।
কানাডায় বাড়িভাড়া থেকে শুরু করে জনগণের সব দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্টুডো। কোভিড-১৯ এর কারণে বাড়ি ভাড়া, মুদি কেনাকাটা বা শিশুদের অতিরিক্ত সেবায় অর্থ খরচ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারন নেই। আমরা কানাডিয়ানদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করবো। তিনি বলেছেন, চলমান কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) প্রাদুর্ভাবের কারণে তার সরকার কানাডিয়ানদের অর্থনৈতিক দৈন্য-দশায় পড়তে দেবে না।নিজের স্বাস্থ্য, পরিবারের স্বাস্থ্য, চাকরি, বাড়ি ভাড়া নিয়ে চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই। সব সরকার দেখবে।ট্রুডো ঘোষণা দিয়েছেন, করোনা মোকাবিলায় খুব শিগগিরই তার সরকার ‘সিগনিফিক্যান্ট ফিসক্যাল স্টিমুলাস’ নামে একটি বিশেষ প্যাকেজ চালু করতে যাচ্ছে।এই প্যাকেজটি গত সপ্তাহে ঘোষণা দেয়া ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অতিরিক্ত। গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন,  আমি জানি, (করোনার কারণে) বৈশ্বিক অর্থনীতির কারণে আপনারা অনিশ্চয়তায় আছেন। আপনাদের নিরাপদ রাখতে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তাতে দেশের অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়বে। তবে এটা সত্য যে, আমরা অর্থনৈতিকভাবে এখন যে অবস্থানে আছি তা আপনাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দিতে যথেষ্ট।আমরা মানি যে, আমাদের আরও অনেক কিছু করণীয় রয়েছে। আমরা চাই না কোনো কানাডিয়ান বাড়ি ভাড়া দিতে পারবেন কি-না, বাজার-ঘাট করতে পারবেন কি-না, বা তাদের ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করতে পারবেন কি-না, এটা নিয়ে চিন্তা করুক।বিশ্ব নেতাদের এমন ঘোষণার বিপরীতে বাংলাদেশের পাশের দেশ ভারতও তাদের সামর্থ্য অনুযায়ি আর্থিক ঘোষণা দিয়েছে। আমাদের দেশে পাঁচ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ঘোষণার দিকে তাকালে দুঃখ ছাড়া কিছুই হয় না। মনে হয় আমরা কি আসলেই মধ্যম আয়ের দেশগুলোর কাতারের দিকে যাচ্ছি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status